RG Kar Medical College & hospital and Founder: বেলগাছিয়া থেকে দমদম। বাড়ি বাড়ি সাইকেল চালিয়ে ঘুরছেন এক চিকিৎসক। মাথায় টুপি আর সাইকেলে ঝোলানো ক্যামবিসের ব্যাগ। বেশিরভাগ রোগীই দুঃস্থ। পথ্য কেনারই পয়সা নেই আবার ডাক্তারের ফিস দেবেন! তাই রোগী দেখার সঙ্গেই প্রয়োজনে পথ্য কেনার পয়সাও দিচ্ছেন ওই ডাক্তারবাবুই। যে সে ডাক্তার নন, তিনি আবার বিলেতফেরৎ। বর্তমানে একজন সাধারণ এমবিবিএস ডাক্তারেরও যখন গ্রামে চিকিৎসা করায় অনীহা, তখন বিলেতির ডিগ্রি নিয়েও তিনি স্বেচ্ছায় গরিবের চিকিৎসাকেই তাঁর উদ্দেশ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
১৮৯৯ সালের মার্চ মাস। প্লেগ তখন কলকাতায় মহামারীর মত ছড়িয়েছে। সেই সময়ে উত্তর কলকাতার অলি-গলিতে ঘুরে রোগীদের সেবা করেছিলেন এক আইরিশ মহিলা। জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক পদে নিয়োজিত এক ডাক্তারও ততদিনে রোগীদের বাঁচাতে উত্তর কলকাতা চষে ফেলছিলেন। পথ্য কিনতে অপারগ রোগীকে নিজেই অর্থ তুলে দিচ্ছিলেন। কিছুদিন পরে সেই বিদেশিনি ও চিকিৎসকের যথারীতি আলাপও হয়েছিল। প্লেগের সংক্রমণ রুখতে ও মৃত্যুর হার কমাতে দু’জনে জোটবদ্ধ হয়ে কাজে নামেন। সেই আইরিশ মহিলা ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। আর সেই চিকিৎসক? ব্রিটিশ শাসিত বাংলায় চিকিৎসাশাস্ত্রের রেনেসাঁ পুরুষ রাধাগোবিন্দ কর।
হাওড়া জেলার রামরাজাতলা স্টেশনে নেমে মিনিট পনেরো পথ পেরোলেই বেতড়ের বিখ্যাত কর বাড়ি। সেটাই রাধাগোবিন্দ করের জন্মভিটে। ১৮৫২ সালের ২৩ আগস্ট, তাঁর জন্ম হয়েছিল। বাবা দুর্গাদাস ছিলেন ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা। পড়াশোনায় অসম্ভব মেধাবী রাধাগোবিন্দ হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করার পর চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে ১৮৮০ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনার পাশাপাশি থিয়েটারের প্রতিও ছিল তাঁর ভীষণ টান। ১৮৮৩ সালে কলকাতা ছেড়ে স্কটল্যান্ডে পাড়ি দিয়ে রাধাগোবিন্দ ভর্তি হন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৮৮৭ সালে সেখান থেকে হন এমআরসিপি (MRCP)
অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন বিলেতে থেকে যেতে। কিন্তু, দেশের গরিব মানুষের কথা ভেবে তিনি ফিরে এলেন এই বাংলায়। সেই সময় চিকিৎসাবিদ্যা পড়ানা হত ইউরোপীয় ব্যবস্থায়। যাতে, সমস্যায় পড়তেন সাধারণ পরিবারের বঙ্গসন্তানরা। সেই সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বাংলায় কোনও বই ছিল না। তাই ডাক্তারি পাশের আগেই রাধাগোবিন্দ বাংলা ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের বই লেখার কাজে হাত দেন। ১৮৭১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই 'ভিষগবন্ধু'। অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, 'সংক্ষিপ্ত শারীরতত্ত্ব', 'রোগী পরিচর্যা', 'ভিষক সুহৃদ' ইত্যাদি। সব বইই লেখা হয়েছিল বাংলা ভাষায়। ইংরেজি জানা ডাক্তারি ছাত্ররাও সেই সব বই কিনতেন এবং পড়তেন।
আরও পড়ুন- আরজি কর-এ চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডে বিরাট অস্ত্র সিবিআইয়ের হাতে, পলিগ্রাফ টেস্টেই বাজিমাত?
হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে ১৮ হাজার টাকা দান করেছিলেন স্বয়ং প্রিন্স অ্যালবার্ট ভিক্টর। তাই হাসপাতালের নাম রাখা হয়েছিল, 'অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতাল'। ১৯০৪ সালে রাধাগোবিন্দের সঙ্গে হাত মেলায় কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অব বেঙ্গল। তারও ১০ বছর পর মেলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি। আত্মপ্রকাশ করেছিল বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ। ১৯১৬ সালের ৫ জুলাই, সেই মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতল ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন লর্ড কারমাইকেল। তাঁর সম্মানে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ হিসেবেই পরিচিত ছিল এই চিকিৎসা শিক্ষাকেন্দ্র। ১৯৪৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ডা. রাধাগোবিন্দ করের নামে এই কলেজের নাম রাখা হয়।