একের পর এক ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশে জেরবার রাজ্য পুলিশ। তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু খুনের পরই বগটুই গণহত্যা। রামপুরহাটের বগটুই গণহত্যার সিবিআই তদন্ত দেয় হাইকোর্ট। পরবর্তীতে দুটি ঘটনাই সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় ভাদু খুনের ঘটনাও সিবিআই তদন্তে যুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। মঙ্গলবার ফের তপন কান্দু খুনের প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের অস্বাভাবিক মৃত্যুরও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। এদিনই হাঁসখালির ঘটনায়ও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তাছাড়া সরাসরি আদালতের তদারকিতেই এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। এই ৬টি ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি, তোলপাড় পুলিশ-প্রশাসন।
একের পর এক ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের মতোবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যেই প্রকাশ্যে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখনও আনিস খানের মৃত্যুসহ বেশ কিছু ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি রয়েছে। সব থেকে বড় প্রশ্ন তাহলে কী পুলিশের ওপর ভরসা থাকছে না আদালতের?
বগটুই ও ঝালদার ঘটনায় মূল অভিযুক্তই পুলিশ। বগটুইতে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন খোদ পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার পরই ডিএসপি ও রামপুরহাট থানার আইসিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বগটুইতে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনেও ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ মৃতের পরিবারের। আবার কাউন্সিলর খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাতেও পুলিশর বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। কার্যত দেখা যাচ্ছে রামপুরহাট ও ঝালদার চারটি ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশের বিরুদ্ধেই বড় অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া রামপুরহাটে বালি-পাথরের যে তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার তদন্ত করতে গিয়ে বহু প্রভাবশালীর নাম উঠে আসবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ দেখছে না অভিজ্ঞমহল।
ঝালদার ঘটনায় সরাসরি ও রামপুরহাটের ঘটনায় পুলিশের চরম নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে। হাঁসখালির ঘটনায় পাঁচ দিন পর পুলিশে অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। রাজ্যপুলিশের ডিআইবি বা গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় কীনা তা নিয়ে সবার আগে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। প্রতিটি এলাকা ভিত্তিতে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের তৃণমূল স্তরের কর্মীরা নিয়মিত(সকাল-বিকেল) খবর সংগ্রহ করে ডিএসডিআইবিকে রিপোর্ট দেয়। দিনের পর দিন এই স্তরের কর্মীরা কী ব্যর্থ? নাকি সেই রিপোর্ট ওপরে গিয়ে হারিয়ে যায়?
প্রাক্তন এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, জেলায় জেলায় এই আইবি-র লোকেরা পুলিশের মেরুদন্ড। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কাদের এই বিভাগে রাখা হচ্ছে? তাহলে আইবিতে দক্ষ অফিসার-কর্মীর অভাব রয়েছে? এই বিভাগকে সক্রিয় করলেই যথাযথ তথ্যের অভাব হবে না। আইবি দফতরকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন ওই আধিকারিক। পাশাপাশি পুলিশের 'সোর্স মেইনটেইন'-এর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে তাঁর পরামর্শ। এর জন্য় অর্থ বরাদ্দ হলে তা সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করছেন।
হাঁসখালির ঘটনার পাঁচ দিন ধরে আইবির কর্মীরা কী কোনও খবর রাখেনি ওই গ্রামে কী হয়েছে? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। তাছাড়া রাজ্যে জেলায় জেলায় ভিলেজ পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল। গ্রামের নানা তথ্য় তাঁরা সংগ্রহ করে পুলিশকে জানাবে এটাও তাঁদের বড় কাজ। বগটুই বা হাঁসখালির ক্ষেত্রে এই কর্মীরাই বা কি করছিল? অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, তাহলে কী নীচুতলার পুলিশ কর্মীরা ওপরমহলে খবর পৌঁছালেও সক্রিয় ছিল না পুলিশ কর্তারা? অভিজ্ঞ মহলের মতে, এসবের পাশাপাশি কমিউনিকেশন গ্য়াপ তৈরি হচ্ছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।