Muth Puja: মাঠের সোনালী ধান খামারের গোলায় তোলার আগে যাতে কোনও বিপত্তি সৃষ্টি না হয়, তার জন্য প্রথমেই মা লক্ষ্মীর পুজো শ্রদ্ধা ভরে পালন করেন কৃষকরা। গ্রাম বাংলার লৌকিক উৎসব মুঠ পুজো বা মুঠি পুজো (Muth Puja)। যা মূলত কৃষক পরিবারগুলিতে বিশেষ ভাবে প্রচলিত। মুঠ পুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমন ধান ঘরে তোলার পালা। মাঠ থেকে মুঠ আনা হয় লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে। তারপর দু'বেলা পুজো করা হয় বাড়িতে।
অগ্রহায়ণ মাস মানেই নবান্নের মাস। নতুন ধানের অন্ন নবান্ন। শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টিপাত শুরু হতেই কৃষকেরা সঠিক সময় বুঝতে পেরে, মাটিতে ছড়িয়ে দেন ধানের বীজ। বর্তমানে বৃষ্টির উপর নির্ভর না করে কৃষকরা ভূগর্ভস্থ জল তুলে চাষ করেন। কয়েকদিন পর দিগন্তের ক্ষেত বিদীর্ণ করে সবুজে-শ্যামলে-নীলিমায় ভরে ওঠে কানায় কানায়। কোজাগরীর চাঁদের আলো সেই ধরণীর ক্ষেতে এসে লাগলেই, সোনালী রং ধরে ধানের শিসে। শুরু হয়ে যায় নবান্নের আয়োজন। কিন্তু তারও আগে অর্থাৎ কার্তিক সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে, অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনে তারা পালন করেন মুঠ পুজো বা মুঠি পুজো। অর্থাৎ তাঁদের ভাষায়, সংক্রান্তি তিথি অনুসারে এই মুঠো পুজো হল এ বাংলার প্রথম লক্ষ্মীপুজো (Laxmi Puja)।
অধিকাংশ গ্রামে এখন শহরের ছোঁয়া লাগায় তেমনভাবে প্রাচীন রীতি লক্ষ্য করা যায় না। তবে শহর ছাড়িয়ে এখনও কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে রীতি মেনে সব কিছু করা হয়। সেই রকম কিছু গ্রাম আজও অগ্রহায়ণের প্রথম সকাল, ভোরের কুয়াশায় ভিজে যায় মাঠ-ঘাটে পায়ে হেঁটে মুঠ ধান নিয়ে আসেন। পরিবারের কোন এক সদস্য শুভ সময় দেখে আড়াই মুঠ ধান কাপড়ে জড়িয়ে বাড়ি আনেন। সেই মতো শনিবার সকালে নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের ভদ্রপুর গ্রামের কৃষকেরা সকালে স্নান সেরে, সাদা পোশাকে হাতের কাস্তে নিয়ে চলে যান মাঠে।
আরও পড়ুন- Ratua Incident: ভাগ্নির বিয়ে আর দেখা হল না মামার...রোমহর্ষক কাণ্ডে পরপর বীভৎস মৃত্যু!
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের রহস্যমৃত্যু, চাঞ্চল্য তুঙ্গে
তারপর মাঠের এক কোণে আড়াই মুঠা ধান কেটে, প্রণাম করে সেই ধানের সমষ্টিকে মাথায় তুলে রওনা দেন বাড়ির পথে। মাঠ থেকে বাড়ির ফেরার পথে কোনও কথা বলতে নেই, রেওয়াজ এমনই। আওয়াজ হলে নাকি মা লক্ষ্মী রুষ্ট হন। নিজের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়াতেই কৃষকের স্ত্রী অর্থাৎ বাড়ির গৃহবধূরা একটা কাঠের পিঁড়েতে গৃহস্বামীকে দাঁড় করান, তারপর মাটির মঙ্গলঘটের জল দিয়ে কৃষকের পা ধুইয়ে, নিজের কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেন পা। তারপর সেই গৃহবধূ ভক্তিভরে প্রণাম সেরে, মা লক্ষ্মীকে সাদরে আহ্বান জানান ঘরে। অবশেষে সেই ধানের সমষ্টিকে বাড়ির পবিত্র স্থানে রেখে শুরু হয় পুজো।