রানিবাঁধের পুড্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়দা গ্রাম, মুকুটমণিপুরের শবরপাড়া। এই গ্রামেই বাস স্বদেশি ডাকাত মোহন খেরিয়াদের আত্মীয় প্রভাকর শবরদের। তাঁর মেয়ে রেনুকা শবর এই গ্রামের একমাত্র স্নাতক। রেনুকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন মুকুটমণিপুর একলব্য স্কুল থেকে। পুরুলিয়া নিস্তারিণী কলেজ থেকে স্নাতক। রেনুকার আফসোস, অনেক জায়গায় আবেদন করেও কোনও কাজ জোটেনি। এমনিতেই শবররা পড়াশুনা করতে চায় না। সরকারিস্তরে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেই দাবি করেছেন রেনুকা। কিন্তু, প্রাথমিকভাবে এনকোয়ারি হলেও এখনও কোনও চাকরি না-জোটায় হতাশ বড়দা গ্রামের একমাত্র স্নাতক।
বর্তমানে চাকরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল রাজ্য। আদালতের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই। এই পরিস্থিতিতে রেনুকা শবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, 'অনেক জায়গায় আবেদন করেও কোনও কাজ হয়নি। এনকোয়ারি হয়েছে। কোনও একটা কাজের ব্যবস্থা হবে। এই গ্রামে আর কেউ স্নাতক নেই। আমাদের সমাজের ছেলেমেয়েরা তো স্কুলে যায় না। তাঁরা ভাবে পড়াশুনা করে কী হবে? চাকরি পেলে অন্যরা ভাববে পড়াশুনা করে চাকরি পাওয়া যাবে। তাহলে আমাদের মধ্যে শিক্ষায় অগ্রগতি হবে। এখানে অনেকেই আছে, যাঁরা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা করেছে কিন্তু, হাইস্কুলে যায়নি। এখন এই গ্রামের মাত্র ২ জন মেয়ে ও ৩ জন ছেলে হাইস্কুলে যায়।' রানিবাঁধ বিডিওর কাছে গিয়ে নথি জমা দিয়ে এসেছেন রেনুকা। তাঁর কথায়, 'বিডিও বলেছেন কাজের ব্যবস্থা হবে। তবে সরকারি অফিস থেকে শুনতে হয়েছে চাকরি পেতে গেলে ভালো পড়াশুনা করতে হয়। চাকরি পেলে ভালো হয়। আমাদের সমাজ শিক্ষা ক্ষেত্রে এমনিতেই পিছিয়ে আছে। এমন হলে আর স্কুলেই যাবে না।'
কংসাবতীর জলাধার তৈরির সময় সেই জমি থেকে উঠে যেতে হয়েছিল শবরদের। বড়দা গ্রামে সেই সময় অন্যান্যদের সঙ্গে বসতি স্থাপন করেন প্রভাকর শবররা। রাজ্যজুড়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে জোরদার বিতর্ক চলছে। অনেক ক্ষেত্রে পাকাবাড়ির লোকজনের নাম ওই তালিকায় রয়েছে। কিন্তু এদেশের আদিবাসীরা সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছেন। প্রভাকর শবরদের না-আছে নিজের জমি, না-আছে আবাস যোজনার তালিকায় নাম। কৃষিমজুর প্রভাকর শবরের আক্ষেপ, 'জমির পাট্টাও পাইনি, আবাস যোজনার বাড়িও পাইনি। পঞ্চায়েতে আবেদন করেছি। এই গ্রামে আমার মেয়ে ছাড়া আর কেউ স্নাতক নেই। তাঁরও কোনও চাকরি জুটল না।'
আরও পড়ুন- ‘ফ্লপ’ মিঠুনকে হিট করাতেই বিরাট কৌশল বিজেপির, বাতলালেন কুণাল
সরকারি ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে এনকোয়ারি হয়েছে। রেনুকার রিপোর্টের ফাইল গিয়েছে বিসিডব্লুর জেলা অফিসে। রানিবাঁধের বিডিও কৌশিক মাইতি বলেন, 'রেনুকার ব্যাকগ্রাউন্ড এনকোয়ারি করার জন্য বলেছিলেন জেলাশাসক। এখন উনি লোধা-শবর উন্নয়ন সংস্থার সদস্য। আমরা ইন্সপেকশন করে বিসিডব্লুর প্রোজেক্ট অফিসারকে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি। ব্লক লেভেল থেকে জেলাস্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও অবধি জেলাস্তরে কী হয়েছে, আমার জানা নেই।'
আবাস যোজনার তালিকার ক্ষেত্রে কিছু ভুল হয়েছে, সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত পুড্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কালেশ্বর কোড়া। তিনি বলেন, 'ওঁদের আবাস যোজনার তালিকায় নাম নেই। কিছু ভুল হয়ে গিয়েছে। সেটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কীভাবে বাড়ি দেওয়া যায়, তা দেখা হবে। পাট্টার ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএলআরও সাহেবও এসেছিলেন। আবাস যোজনায় নাম তোলার প্রক্রিয়া চলছে।'