Advertisment

জুতা আবিষ্কার! নারী সুরক্ষার্থে ইলেকট্রিক শক দেবে তিনশ টাকার সেফটি সু

সমসাময়িক পরিস্থিতিতে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী বাপ্পা ও তাঁর সহযোগীদের তৈরি এই 'সেফটি সু' আলোড়ন ফেলে দিয়েছে রায়গঞ্জে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
জুতা আবিষ্কার! নারী সুরক্ষার্থে ইলেকট্রিক শক দেবে তিনশ টাকার সেফটি সু

'সেফটি সু'। ছবি- কৌশিক সেন

'জুতা আবিষ্কারের' গল্প কে না জানে! একবিংশ শতকে সেই আবিষ্কারেই এল এক নয়া টুইস্ট। বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে মহিলাদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এক 'অভিনব জুতো' আবিষ্কার করলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মী। ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতো ঘটনায় জর্জরিত হয়েছে সমাজ। তাই নিজেদের সুরক্ষা কবচ কেবল নিজেদের হাতে নয়, পায়েও রাখা যাবে এবার থেকে। অবাক করার মতো শুনতে লাগলেও এমনই এক 'সেফটি সু' আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের কর্মী বাপ্পা রায়।

Advertisment

raigunj safety shoe সেফটি সু তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। ছবি- কৌশিক সেন

দেখনদারির দিক থেকে একবারেই হাল ফ্যাশানের জুতো এই 'সেফটি সু'। কিন্তু সঙ্গে থাকছে নয়া টেকনোলজি। জুতোর মধ্যেই থাকবে জিপিএস সিস্টেম যা দিয়ে সহজেই লোকেশন ট্র্যাকিং করা যাবে। পাশাপাশি থাকবে ছ'শো ভোল্টের এ সি কারেন্ট। অর্থাৎ মহিলারা চাইলেই এই জুতোর বৈদ্যুতিক ক্ষমতা দিয়ে অনায়াসে দুষ্কৃতীদের কুপোকাৎ করতেন পারবেন বলেই আশা রাখছেন আবিষ্কারক বাপ্পা। তাঁকে এই আবিষ্কারের কাজে সহায়তা করেছেন ওই বিভাগেরই ছাত্র ছাত্রী পুলক পাল, প্রতীম ঘোষ, সাইরিন শবনম, জাহাঙ্গীর আলম, উৎসব রায়, সায়ন সাহা ও প্রিয়াঙ্কা পাল।

raigunj safety shoe মাত্র সাড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকার মধ্যেই থাকছে এই জুতোর দাম। ছবি- কৌশিক সেন

বাপ্পা রায়ের তৈরি এই সেফটি সু এর দামও থাকছে সাধ্যের মধ্যেই। মাত্র সাড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকার মধ্যেই থাকছে এই জুতোর দাম। ইভটিজিংয়ের সম্মুখীন হলে মেয়েরা অনায়াসেই এই সেফটি জুতো ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, সহজেই মেয়েটির লোকেশন ট্র‍্যাক করতে পারবে পুলিশও। সমসাময়িক পরিস্থিতিতে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী বাপ্পা ও তাঁর সহযোগীদের তৈরি এই 'সেফটি সু' আলোড়ন ফেলে দিয়েছে রায়গঞ্জে। এমনকী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে খুলতে চলা ডিআরডিও-এর সেন্টারে এই অভিনব জুতোটিকে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা নিতে চলেছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: দায় নয়, কন্যা সন্তান হলে আয়ু বাড়ে পিতার

কীভাবে আবিষ্কার করলেন এমন জুতো? আবিষ্কারক বাপ্পা রায় বলেন, "উচ্চমানের ভোল্টেজের সাথে এই জুতোর মধ্যে জিপিএস সিস্টেম বসিয়ে খুব সহজে ট্র‍্যাকিং করার সুযোগ থাকছে। জুতোর আভ্যন্তরীণ সার্কিটে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির সাড়ে চার ভোল্টকে কমপক্ষে ছ'শো ভোল্টকে এসি ভোল্টেজে রূপান্তর করা হচ্ছে।" আর এই ছ'শো ভোল্টের জুতো যেকোনও দুষ্কৃতীকে "ধাক্কা" দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, তা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদীও তিনি। বাপ্পা বলেন, সার্কিটটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে মাত্র ১৪০ টাকা। সার্কিটের ভেতরে রয়েছে ডায়োড, ট্র‍্যানজিস্টর, ট্র‍্যান্সফরমার, রোধ এসব। সার্কিটটি জুতোর ভেতর বসিয়ে সেখান থেকে কিছু ধাতব তার জুতোর বাইরের গায়ে লেগে থাকবে। ওই তারগুলোয় থাকবে উচ্চমানের ভোল্টেজ। একটি ফুল চার্জের ব্যাটারি শুরুতেই এক হাজার ভোল্টের ধাক্কা দিতে সক্ষম হবে। ব্যাটারি চার্জিং হবে হাঁটতে হাঁটতেই। জুতোর ভিতরে থাকা সুইচটি দরকারের সময় অন করে দিলেই উদ্দেশ্য সফল করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি জুতোটিতে ব্যাবহার করা হয়েছে এক ধরনের বিশেষ সেন্সর যা রাস্তায় চলার সময় কোনও বাধাবিপত্তি থাকলে সেই জুতো থেকে বিশেষ সিগন্যাল আসতে থাকবে।" পরবর্তীতে এই সেফটি সু এর আপগ্রেডেশন করে নতুন নতুন ফিচার যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন আবিষ্কারক বাপ্পা রায়।

আরও পড়ুন: বাংলায় ভোটের বাদ্যি, রমজানের আগে এপ্রিলেই সম্ভবত পুরভোট!

বিভাগের কর্মীর এমন আবিষ্কারে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডঃ পিনাকি চক্রবর্তী বলেন, "খুবই প্রাসঙ্গিক এই জুতো। বিশেষ করে মেয়েরা উপকৃত হবেন।" বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দূর্লভ সরকার বলেন, "বর্তমান সময়ে এই সেফটি সু ব্যবহার করে মেয়েরা খুবই উপকৃত হবে। অভিনব এই জুতো যাতে কোনও ভালো জায়গায় প্রদর্শনী করা যায় তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিয়ারডিও-এর সেন্টারে জুতোটিকে উপস্থাপন করার।" বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জানিয়েছেন, পথে চলাফেরা করতে গিয়ে অনেক সময়ই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। এই সেফটি সু আবিষ্কারে তাই কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন তাঁরা।

West Bengal
Advertisment