২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ করেছিল বিরোধিরা। প্রার্থী দিতে বাধা দেওয়া থেকে ভোটের দিন হাঙ্গামা কোনও অভিযোগই বাদ ছিল না। এবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার দাবি করেছেন এবারের পঞ্চায়েত ভোট স্বচ্ছ ও অবাধ হবে। দীর্ঘকাল পরে সাগরদিঘির উপনির্বাচনেও তেমন কোনও গুরুতর অভিযোগ করেনি বিরোধিরা। উপনির্বাচনে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কোন কৌশলে তৃণমূলের হার তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করছে রাজনৈতিকমহল। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, পঞ্চায়েত ভোটে সাগরদিঘি মডেলকে যেমন বিরোধীরা সামনে রেখে এগোবে পাশাপাশি এই মডেল ভেদ করে কি করে পঞ্চায়েতে জয় মিলবে সেই কৌশল তৈরি করবে তৃণমূল কংগ্রেসও।
সাগরদিঘিতে পরাজয়ের পর তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপির অনৈতিক জোটের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাঁদের নাটক ক্ষতম করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এটা আমাদের সকলের কাছে শিক্ষার বলেও মন্তব্য় করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তবে অনৈতিক জোটের কথা বলেছেন, লড়ে নেওয়ার কথা বললেও কোনও দোষারোপের পথে হাঁটেননি তিনি। এই উপনির্বাচনের প্রচারে ছিলেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিতে নয়া কৌশলের পথে হাঁটতে চলেছে তৃণমূল।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই বলেছিলেন যে দলই জিতুক না কেন সাগরদিঘিতে তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে না। ফল ঘোষণা হতেই দেখা গেল কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে বিজেপির ভোটও কমে গিয়েছে। স্বভাবতই অন্য খেলা দেখতে পাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দুই বিরোধীদলের প্রার্থী থাকবে অথচ লক্ষ্য থাকবে যেই জিতুক তৃণমূলকে হারাতে হবে, এই কৌশলে কি সাগরদিঘিতে বিপাকে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস? পাশাপাশি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়! আগ টানা তিনবার ছিলেন সুব্রত সাহা। তবুও এবার এমন চর্চাও চলছে। ২০১১-র আগে সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে হটাতে কংগ্রেস, তৃণমূল, এসইউসি এক ছাতার তলায় এসেছিল। তখন রাজ্যে বিজেপির তেমন কোনও প্রভাব ছিল না। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই খেলা আটকাতে ইতিমধ্যেই ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে ঘাসফুল শিবির।
সাগরদিঘির জয়কে হাতিয়ার করে পঞ্চায়েতে ঝাঁপাতে চাইছে বিরোধী শিবির। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ঘোষণা, জোটই উৎখাত করবে তৃণমূল কংগ্রেসকে। অর্থাৎ এবার সর্ব পর্যায়ে জোট রাজনীতিকে কংগ্রেস-সিপিএম হাতিয়ার করবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সমবায় থেকে স্কুল কমিটির নির্বাচনেও জোট রাজনীতি বহাল রাখার চেষ্টা চলবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই উপনির্বাচনে জয় বাম-কংগ্রেসকে বাড়তি মনোবল জুগিয়েছে। উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে যে হারানো যায়, সেই পথ বাতলে দিয়েছে বিরোধীদের।