Illegal sand trade West Bengal:পুলিশ ও প্রশাসন থেকেও যেন নেই! তারই সুযোগ নিয়ে একেবারে জলদস্যুদের কায়দায় জলযান নিয়ে দামোদরে ঘুরে ঘুরে বালি লুট করে চলেছে খেতমজুরি ছেড়ে 'মাফিয়া' বনে যাওয়া ব্যক্তিরা। লুঠের বালি বস্তায় ভরে পাচার করে প্রতিদিন মোটা টাকা আয়ের টার্গেট নিয়ে এই মাফিয়ারা এখন সারাদিন রাত দামোদর চষে বেড়াচ্ছে। তারাই এখন কার্যত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের শিয়ালী থেকে কোরা এলাকায় দামোদরের একচ্ছত্র অধিপতি বনে গিয়েছে। তাদের দাপট ও দৌরাত্ম্যও দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই সব কিছু জেনেও পুলিশ, প্রশাসন,স্থানীয় পঞ্চায়েত সবাই নিশ্চুপ থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
জামালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম কোরা ও শিয়ালী। কোরা গ্রামটি হুগলী জেলার একেবারে লাগোয়া গ্রাম। এই গ্রামের পরেই রয়েছে হুগলী জেলার পুরশুড়া থানার অধীন ’খুশিগঞ্জ’ গ্রাম। কোরা গ্রাম থেকে হুগলীর চাঁপাডাঙ্গা পৌছে যাওয়াও এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয়।আর শিয়ালি গ্রামটি হল কোরা গ্রামের একেবারে পাশের গ্রাম। এই শিয়ালী ও কোরা গ্রামের অনতি দূরে রয়েছে ’মুইদিপুর’ গ্রাম। সেখানে রয়েছে জামালপুর থানার অধীন পুলিশ ফাঁড়ি। সেই ফাঁড়ি পরিচালনার দায়িত্বে পুলিশ অফিসার যেমন রয়েছে তেমনই সেপাই ,পুলিশ গাড়ি,সবই রয়েছে।
কৃষি জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের মূল ভিত্তি। তবে কৃষি কাজের প্রতি ইদানিং আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এলাকার বেশকিছু খেতমজুর। পরিবর্তে তারা দামোদরের নদের বালির প্রতি মোহান্বিত হয়ে পড়েছেন। জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া দামোদর নদের বালি হাতিয়ে নিয়ে মোটা টাকা রোজগারের মোহে ওই খেতমজুররা কৃষিকাজ থেকে পুরোপুরি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। তাদের কেউ নৌকা আবার কেউ খালি ড্রাম বা বড় বড় টিউব দিয়ে ভেসেলের মতো জলযান বানিয়ে ফেলেছেন।
সেই সব জলযানে চড়ে তারা স্থানীয় শিয়ালী থেকে কোরা পর্যন্ত এলাকায় দিন রাত দামোদর নদ চষে বেড়িয়ে শুধু বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন- Lakshmir Bhandar:মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' নিয়ে বড় ঘোষণা, কী জানালেন মন্ত্রী?
এলাকাবাসীর কথা অনুযায়ী, "তাঁদের অঞ্চলে এই রকম দল প্রায় ১৫টির মতো তৈরি হয়েছে।প্রতি দলে রয়েছে ১০ থেকে ১২ জনের বেশী সদস্য। প্রতিদিন হাজার খানেক বস্তা পরিমাণ বালি দামোদর নদ থেকে তুলে নিয়ে তা ৪৫-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করার টার্গেট রেখে সকাল হলেই তারা তাঁদের জলযান নিয়ে দামোদরে নেমে পড়ছে। দামোদরের জলে ডুব দিয়ে বালতি করে বালি তুলে নিয়ে তারা তাঁদের নিজের নিজের জলযানে মজুত করে। তারপর সেই বালি তারা নির্দিষ্ট মাপের বস্তায় ভরে ফেলে। মোটরভ্যানে সেই সব বালির বস্তা চাপিয়ে তারা ’বিনা বাধায়’ পৌছে যায় ক্রেতার ডেরায়। সেখানেই তারা তাঁদের নির্ধারণ করা মূল্যে বালি বিক্রি করে দিয়ে হাসি মুখে ফিরে আসেন বাড়িতে।
আরও পড়ুন- Kolkata News Live Updates:এবারের ২১ জুলাইয়ের শহিদ সভায় 'বড় চমক' তৃণমূলের? ভবানীপুরে আজ প্রস্তুতি বৈঠক
নদ-নদী থেকে বালি চুরি হওয়া নিয়ে রুষ্ট বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বালি চুরি বন্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। তার পরেও শিয়ালী ও কোরা এলাকায় দামোদর থেকে দেদার বালি লুঠ হয়ে চলা দেখে বেজায় ক্ষুব্ধ বাম আমলে শহীদ হওয়া শিয়ালী গ্রামের তৃণমূল কর্মী উত্তম ভুলের ভাই গুরুপদ ভুল। তিনি বলেন, “কেউ নৌকায় আবার কেউ ভেসেলের মতো জলযান বানিয়ে ফেলেছে দামোদর থেকে বালি লুঠ করার জন্যে। বালি লুঠেরার দল মাসের পর মাস ধরে জলযানে দামোদর চষে বেরিয়ে বালি লুট করে যাচ্ছে।সারা দিন রাত ধরে তারা অবৈজ্ঞানিক ভাবে বালি তুলে চলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে নবনির্মান করা নদী বাঁধের।পুলিশ, ও স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে নিয়ে এই বালি মাফিয়ারা যে ভাবে বালি লুঠ করে চলেছে তাতে রাজ্য সরকারেরও মুখ পুড়ছে।"
আরও পড়ুন- death of fit people:পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে মৃত্যু চিকিৎসকের, আপাতদৃষ্টিতে সুস্থদের কেন এই মর্মান্তিক পরিণতি?
এদিকে বালি চুরির এতবড় কাণ্ড ঘটে চললেও কিছুই জানেন না বলে জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথি দে জানিয়েছেন। তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, শিয়ালী ও কোরা এলাকায় হয়েচলা বালি চুরি নিয়ে তিনি খোঁজ খবর নেবেন। ঘটনা সত্য হলে কড়া ব্যবস্থা নেবেন বলে বিডিও জানিয়েছেন। জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি বলেন, "এই ভাবে বালি চুরির বিষয়টি আমার জানা নেই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ লঙ্ঘন করে নদী থেকে এইভাবে বালি চুরি চলতে দেওয়া যেতে পারে না।" এই ব্যাপারে জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে বিধায়ক জানিয়েছেন।