Advertisment

১০ মাস সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে, আচমকা তোপ, এখন কী করছেন সায়ন্তন?

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মনে কথা খুলে বললেন বিজেপি নেতা।

author-image
Joyprakash Das
New Update
sayantan basu interview second part

সায়ন্তন বসু। ছবি শশী ঘোষ

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল থেকে আসা অধিকাংশ লোকেদের টিকিট দিয়েছিল বঙ্গ বিজেপি। পাশাপাশি ভিন রাজ্য থেক বঙ্গে আসা বিজেপি নেতৃত্বকেও টিকিট দিয়েছিল দল। অন্যদিকে বঞ্চিত ছিল আদি বিজেপি নেতৃত্বের বড় অংশ। যাঁরা টিকিট পাননি পরবর্তীতে তাঁদের অধিকাংশকে আবার রাজ্য কমিটিতেও রাখা হয়নি। সায়ন্তন বসুর মতো অনেকেরই এখন রাজনৈতিক কর্মসূচির ব্যস্ততা কমেছে। রাজনীতিতে ব্য়স্ততা কমায় বাড়তি সময়ে কি করছেন সায়ন্তন বসু? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে রাজনৈতিক মতামতের পাশাপাশি জানিয়েছেন তাঁর নয়া ইনিংসের কথা। আজ সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব।

Advertisment

প্রশ্ন- আপনিসহ দলের পুরনো অনেককেই দলের কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না।

সায়ন্তন বসু- আমাকে পার্টি জানালে বা আমন্ত্রণ জানালে আমি যাই। অনেক ক্ষেত্রে না বললে যাই না। আমাকে কোনও দায়িত্ব দিলে কাজ করেছি। কাজ দিলে করব, না হলে করব না। এবিষয়ে আমার আগ্রহ, অতিরিক্ত আগ্রহ বা হতাশা কিছু নেই।

প্রশ্ন- আপনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন।

সায়ন্তন বসু- পার্টিতে আমি অনেক দিন আছি। সক্রিয় ভাবে অনেককাল করেছি। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়ে আমি ওয়াকিবহাল। আমার কিছু বক্তব্য়, সাজেশন, পরামর্শ যখন দায়িত্বে ছিলাম তখনও দিয়েছি। এখনও দিয়েছি, আগামীতেও দেব। এই প্রক্রিয়া আমাদের আছে। এটা পার্টির ভিতরের বিষয়। এটা প্রেসের কাছে আমি বলব না।

প্রশ্ন- সিএএ নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের বিধায়করা মুখ খুলছেন। মতুয়া নিয়ে শান্তনু ঠাকুর তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। আপনিও কিছু বৈঠকে হাজির ছিলেন। সিএএ কী এখানে হবে?

সায়ন্তন বসু- শান্তনু ঠাকুর যা বলেছেন আমি তার সঙ্গে আমি সহমত। সিএএ হওয়া উচিত। পার্টিকে তা বলেছি। বিভিন্ন চিঠিপত্র করেছি। হোয়াটসঅ্য়াপ মেসেজ করেছি। বাংলাদেশ থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, চাকমারা এখানে এসেছেন। সম্মান, ধর্ম রক্ষার্থে এরাজ্যে এসেছেন। তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে বিজেপি বদ্ধপরিকর। আমি ব্য়ক্তিগত ভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছি। শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলেছেন, আমার ধারনা শীঘ্রই এটা হবে। দুদিন দেরি হতে পারে। তবে সিএএ হবে। বিজেপিই সিএএ করবে।

প্রশ্ন- রাজনীতিতে এখন আপনি অনেকটাই চুপচাপ আছেন। আপনার তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়েও জল্পনা রয়েছে। কি বলবেন?

সায়ন্তন বসু- বিজেপি থেকে বেশিরভাগ যাঁরাই গিয়েছেন তাঁরা অন্য় দল থেকে আমাদের দলে এসেছেন। জন্মকাল থেকে যাঁরা বিজেপি করছেন তাঁরা কেউ গিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। নতুন মানুষ না এলে পার্টির বৃদ্ধি হবে না। নতুন মানুষকে যুক্ত করতে হবে। অন্য় দল থেকে না এলে মঙ্গলগ্রহ থেকে আসবে নাকি? অন্য় দল থেকে এলে নেওয়া যাবে না এই তত্বকে আমি সমর্থন করি না।

প্রশ্ন- বুথ ভিত্তিক সংগঠন জোরালো হচ্ছে না।

সায়ন্তন বসু- পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সন্ত্রাস চলছে। বুথে বসে বিজেপির কথা বলতে পারবে না। তাহলে মারধর হবে। মিথ্য়া কেস দেওয়া হবে। অত্য়াচার হবে। এই কারণে কিছু কিছু জায়গায় সমস্য়া আছে। আমরা সেই সমস্য়া কাটিয়ে উঠতে পারব।

প্রশ্ন- রাজনীতিতে ব্যস্ততা কম। বাড়িত সময়ে কিভাবে কাটছে?

সায়ন্তন বসু- তার জন্য এখন গবেষণায় বেশি সময় দিচ্ছি। পার্টি যদি বলে তখন ভাবা যাবে। এখন ভাবার কিছু প্রয়োজন নেই। গবেষণার কাজে আমি স্যাটিসফায়েড।

প্রশ্ন- গবেষণার কথা কবে মাথায় এল?

সায়ন্তন বসু- অনেক দিন থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল স্বাধীনতার শেষ কয়েক বছরের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার। বিধানসভা ভোটের আগেই থেকেই ভেবেছিলাম। আমাদের পার্টিরও কেউ কেউ জানতেন আমি একটা বিষয়ে কাজ করতে চাই। সেটা ১৯০৫ বঙ্গভঙ্গ থেকে ১৯৪৭ ভারত বিভাজন, এটাই আমার গবেষণার বিষয়বস্তু।

প্রশ্ন- কেন এই গবেষণা?

সায়ন্তন বসু- আমার মনে হয়েছে হিন্দু বাঙালিরা সব থেকে বেশি এফেক্টেড হয়েছে বঙ্গভঙ্গ ও ভারত বিভাজনের সময়ে। কয়েকশো বা হাজার বছর ধরে একটা জায়গায় বসবাস করছে। পিতৃপুরুষের ভিটে। ২ জুলাই বলা হয়েছিল ১৫ অগস্টের মধ্যে ভারতে চলে যেতে। মাত্র এক মাস আগে বলে দেওয়া হয়েছিল এই জায়গায় থাকতে পারবে না। এটা বিশ্বের কোথাও হয়নি।

প্রশ্ন- আপনার গবেষণায় মূলত কোন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা রয়েছেন?

সায়ন্তন বসু- আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস বিরাট। স্বাধীনতা সংগ্রামী সূর্য সেন, বাঘাযতীন, রাসবিহারী বসুরা সারা পৃথিবীতে সমাদর পান। এঁদের ইতিহাস জানলে বাঙালিকে ভীত, কাপুরুষ কেউ বলতে পারবে না।

প্রশ্ন- নতুন বই প্রকাশ করেছেন। বিষয়বস্তু কি?

সায়ন্তন বসু- ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির প্রেক্ষিতে রাসবিহারী বসু যা যা ভাষণ দিয়েছেন সেগুলি কোথাও ছিল না। কারও কাছে ছিল না। এক জায়গায় ছিল না। সেগুলো আমরা সংকলন করে বই আকারে প্রকাশ করেছি।

প্রশ্ন- পরবর্তী বইপ্রকাশ?

সায়ন্তন বসু- আমার মূল কাজ আগেই বলেছি ১৯০৫ বঙ্গভঙ্গ থেকে ১৯৪৭ ভারত বিভাজন। তারই একটা অংশ হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে দিল্লি বিস্ফোরণ ১৯১২-এর ২৩ ডিসেম্বর। তখন কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজনীতি শিফট হচ্ছে। সেই ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে আমি একটা বইয়ের কাজ করছি। চেষ্টা করছি রাসবিহারী বসুর জন্মদিবসের মধ্যেই বইটা প্রকাশ করতে।

আরও পড়ুন- ‘মমতা সরকারকে একমাত্র মোদী প্রশাসনই ফেলতে পারত’, Exclusive সাক্ষাৎকার ‘অভিমানী’ সায়ন্তনের

প্রশ্ন- কীভাবে কাজ করছেন?

সায়ন্তন বসু- চন্দননগরে গিয়েছি। বিভিন্ন বইপত্র যেমন ন্যাশনাল লাইব্রেরি নিয়মিত যাচ্ছি। কখনও সারা দিন সেখানে কেটে যাচ্ছে। কলকাতা পুলিশের সংগ্রহশালা আছে। সেখানে নানা তথ্যের জন্য প্রায় যাই। সারাদিন সেই সব জায়গায় থেকে বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করছি। কিন্তু অনেক ডকুমেন্ট এখনও পাওয়া যায়নি। তবে চেষ্টা করছি। যেমন দিল্লির চাঁদনিচকে লর্ড হার্জিঞ্জের ওপর বোমা নিক্ষেপের(১৯১২, ২৩ ডিসেম্বর) অরিজিন্যাল এফআইআর কপি এখনও জোগার করতে পারিনি। দিল্লি পুলিশের কাছেও পাইনি। এভাবেই চলছে গবেষণার কাজ।

প্রশ্ন- আপনার আগুনে বক্তব্য পুলিশ বা বিরোধীদের বিরুদ্ধে, শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না…

সায়ন্তন বসু- সায়ন্তন বসু কোনও দিনও নিজের জন্য কিছু করেনি। আজ অবধি নিজেকে নিয়ে কখনও ভাবেনি যে আমাকে প্রেসিডেন্ট হতে হবে, এমএলএ-এমপি হতে হবে, মন্ত্রী হতে হবে। পার্টি যখন যে রূপে দেখতে চেয়েছে সে রূপে এসেছি। কাল পার্টি যদি বলে আবার সে রূপে দেখবে। নাহলে আমি আমার মতো, যে ফর্মে দেখছেন সে ফর্মে দেখবে। আমার ওটা নিয়ে চিন্তার বিষয় নেই। আমি চিন্তাও করি না। আমি পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই, কারও কারও মানসিক রোগ আছে টিভিতে তিন দিন মুখ না দেখাতে পারলে তাহলে মানসিক সমস্যায় পড়ে যায়। আমাকে তো ১০ মাস কেউ টিভিতে দেখেনি। আমি তাতে শান্তিতে আছি। আমার কোনও অসুবিধা নেই। 

Sayantan Basu bjp
Advertisment