বিগত প্রায় ৭ দিন লাগাতার দক্ষিণবঙ্গের ২২টি ডিপোতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজারের বেশি অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ধর্মঘটী পরিবহণ কর্মীদের সম্পর্কে বলেছেন, তাঁরা মনে মনে বিজেপি কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে আন্দোলন করছেন। আইএনটিটিইসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্য়োপাধ্যায়ের বক্তব্য়, 'যাঁরা আইএনটিটিইউসির ঝান্ডা নিয়ে আন্দোলন করছেন তাঁরা কেউ এই সংগঠনের নয়। তাঁদের কোনও এফিলিয়েশন নেই।'
Advertisment
আন্দোলনকারীদের একাংশের বক্তব্য, 'তাঁরা ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। তবে ওদের পতাকা নিয়ে আন্দোলন না করলে পরে চাপ হয়ে যাবে। স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই আন্দোলন করা হচ্ছে।' এদিকে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণের চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল বলেন, 'ধর্মঘটের ফলে প্রতিদিন ৫০০-ওপর বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।'
দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থায় কর্মরত অস্থায়ী কর্মীদের কারও আয় মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা। কারও ক্ষেত্রে কাজ কম হলে ৪-৫হাজার টাকা আয়েই সংসার টানতে হয়। বিগত প্রায় ৭ দিন লাগাতার দক্ষিণবঙ্গের ২২টি ডিপোতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১হাজারের বেশি অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী। অমিত সূত্রধর, মিলন বন্দ্য়োপাধ্যায়রা বলেন, 'মাসে কখনও তিন-চার হাজার টাকা আয় হয়। পুজোতে বাড়ির কারও পোশাক কিনতে পারিনি। জনগণের অসুবিধার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তবে এছাড়া আমাদের কাছে কোনও উপায়ও নেই।'
Advertisment
আন্দোলনকারী বাসের চালক রেজাউল বলেন, 'আমাদের মূল দাবি স্থায়ীকরণ, ২৬ দিনের কাজ, নিয়মমাফিক ছুটি। ২০১১ সালের পর থেকে স্থায়ীকরণ বন্ধ হয়েছে। ২৬ দিনের কাজের কথা বললেও এখনও লিখিত ভাবে পাইনি। মৌখিক অনেক কিছু বলা হয়।'
এদিকে আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেন, 'যাঁরা ওখানে আইএনটিটিইউসির নামে কর্মবিরতি করছে আমি তো চ্য়ালেঞ্জ করছি ওরা রেজিস্ট্রেশন কপিটা আমাদের দেখান। সংগঠনের ঝান্ডা নিয়ে ইনক্লাব জিন্দাবাদ স্লোগান দিচ্ছেন আর বলছেন আইএনটিটিইউসি, দুটো একসঙ্গে হয় না। জোর করে বললে তো হবে না আইএনটিটিইউসি। ওরা সংগঠনের কেউ নন। এর পিছনে বাম ও সিপিএম মদত দিচ্ছে।' পরিষেবা বন্ধ করে এমন আন্দোলন সমর্থন করা যায় না।
আন্দোলনকারীরা পাল্টা বলছেন, 'চক্রান্ত উনি তো বলবেনই। ওদের পতাকা না নিলে পরে চাপ আসবে। অনুমতি নিয়ে আন্দোলন করেছি তা নয়। তবে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি।' মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে, আমরাও বুঝতে পারছি। ট্রেনেরও সমস্যা আছে। মানুষের চরম ভোগান্তি। আমরা নিরুপায়।'
ধর্মঘটের ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণের চেয়ারম্যান সুভাষ মন্ডল বলেন, 'এখন ১০০-ওপর গাড়ি চলছে। স্বাভাবিক নিয়মে ৬০০ ওপর গাড়ি চলে। দক্ষিণবঙ্গে ডিপো ও টার্মিনাল মিলিয়ে ২৫টিতে কর্মবিরতি চলছে।' তিনি জানিয়ে দেন, 'পরিবহণমন্ত্রী ও আমরা মেনে নিয়েছি ২৬ দিনের ডিউটি। কর্মবিরত পালন করে মানুষের অসুবিধা করা উচিত নয়। পরিষেবা চালু রেখে দাবি-দাওয়া করতেই পারে। ওদের প্রথম দাবি, ২৬ দিনের ডিউটি নিশ্চিত করেছি। পরে বাকি দাবি নিয়ে কালীপুজোর পরে আলোচনা করে আইন মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
এদিকে আন্দোলনকারীরা কোন দলের তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলেও ধর্মঘটে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের।