মহকুমা শাসকের গাড়ির ধাক্কায় মৃতের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ রাজ্যের মন্ত্রীর। পরিবারের একজনের চাকরির দাবি ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। এরই পাশাপাশি মৃতের পরিবারকে সব ধরনের সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। মালদা সদর মহকুমা শাসকের বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়, দুর্ঘটনায় আহত হন তাঁর স্ত্রী-সন্তানও। এই ঘটনায় চরম অসন্তোষ ছড়ায় মৃতের পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে। মালদা শহরের বৃন্দাবন মাঠ সংলগ্ন বাঁধ রোডে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ওই মাঠেই রবিবার রাতে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল একটি ক্লাব। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা গোবিন্দা। আর সেই অভিনেতাকে দেখার জন্য কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়েছিল বৃন্দাবনে মাঠ প্রাঙ্গনে। আর তারই পাশে থাকা রাস্তায় এত ভিড়ের মধ্যে এসডিও-র গাড়ি ধাক্কা মারে এক দম্পতির বাইকে।
তবে গাড়ির মধ্যে সদর মহকুমা শাসক ছিলেন কিনা এবং গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মৃতের স্ত্রী'র অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক, তারই জেরে দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মালদহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। সোমবার সকালে মৃতের জখম স্ত্রী ও কন্যাসন্তানকে দেখতে যান ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। তাঁর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের পরিবার।
পুলিশ ওই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম পাপ্পু দাস (৩৫)। তাঁর বাড়ি পুরাতন মালদহের সাহাপুর পঞ্চায়েতের বালা সাহাপুর এলাকায়। বাইক চালিয়ে স্ত্রী এবং একরত্তি কন্যাকে নিয়ে মালদহ শহরের গাদুয়ার মোড়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন ওই ব্যক্তি। সেই সময় বৃন্দাবনী মাঠ সংলগ্ন বাঁধের রাস্তায় বেপরোয়াভাবে সদর মহাকুমার শাসকের গাড়িটি ওই বাইকে এসে সজোরে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। তিনজনেই ছিটকে পড়ে যায় রাস্তায়। তারপরেই সেই গাড়িটি আহতদের চাপা দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- শুভেন্দুর গড়েই তৃণমূল ঠেকাতে রাম-বাম জোট! তুফানী ঝড়ে উড়ে গেল জোড়াফুল
মৃতের স্ত্রী সিমি দাস বলেন, ''স্বামীর বাইকে কোলে মেয়েকে বসিয়ে গাদুয়ার মোড়ের বাবার বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। বৃন্দাবনী মাঠের বাঁধরোড এলাকায় আচমকা এসডিও-র গাড়ি এসে আমাদের মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। আমরা ছিটকে পড়েছিলাম। আমাদের উদ্ধারের জন্য সেই সময় আমার স্বামী গাড়ি থেকে নেমেও গিয়েছিল। চোখের সামনে স্বামীকে গাড়িটি ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ালে চেপে দেয় । নিজেরা আহত হলেও স্বামীকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার শুরু করে দিই। এরপরই আশেপাশের লোকজন এসে আমাদের উদ্ধার করে।''
মহিলার আরও অভিযোগ, ''গাড়ি যিনি চালাচ্ছিলেন তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তবে সেই গাড়িটা কে চালাচ্ছিলেন তা বলতে পারব না। গাড়িতে এসডিও ছিলেন কিনা সেটাও আমি বলতে পারব না। আমাদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাতে ভর্তি করানো হয় । সোমবার সকালে স্বামী মারা যায়।''
আরও পড়ুন- ভয়াবহ ডেঙ্গু, রাজ্যের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ, পদক্ষেপ করতে কেন্দ্রকে চিঠি শুভেন্দুর
ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী গতকাল মতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। শোকগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন আধিকারিক। রাজ্য সরকারের তরফে মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য হিসেবে ২ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। মৃতের পরিবারের পশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী সবরকম ভাবে সহযোগিতার কথা বলেছেন। অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আমরা ওই পরিবারের পাশে রয়েছি। ওই পরিবারের তরফ থেকে একজনের চাকরির দাবি করা হয়েছে। সেটিও আলোচনা করে দেখা হবে।''