দু'দিন আগেই সর্বভারতীয়স্তরে কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সখ্যতা নিয়ে বিষয়টার ওপর নজর রাখছেন বলে মন্তব্য এড়িয়ে ছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো। বুধবার ঝালদা পুরসভা হাতছাড়া হতেই বদলে গেল তাঁর মত। রাহুল-অভিষেকের বৈঠক বা সোনিয়া-মমতার কাছাকাছি আসা নিয়ে নেপাল মাহাতো ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'এখানকার সমস্ত কংগ্রেস কর্মী হতাশ। একদিকে কেন্দ্রীয় স্তরে মেলামেশা চলছে অন্য দিকে আমাদের দলকে ভাঙাচ্ছে।'
ঝালদা পুরসভায় দলবদলের ইতিহাস রয়েছে। তবে বুধবার ফের নিহত তাপন কান্দুর ভাইপো-সহ তিন কংগ্রেস কাউন্সিলর ও এক নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ঝালদা পুরবোর্ডে ক্ষমতা হারায় হাত শিবির। বাংলায় একমাত্র ঝালদা পুরসভা দখলে ছিল কংগ্রেসের। এখানে কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুন হয়েছেন, সেই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চলছে, আদালতে বারে বারে ঝালদা পুরসভা নিয়ে মামলা হয়েছে। বহু লড়াই করেও পুরসভা দখলে রাখতে পারল না কংগ্রেস।
নেপাল মাহাতো বলেন, 'সরকারি ক্ষমতা, প্রলোভনের ফলেই এই ক্ষমতা বদল। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও ৮-৯ মাস বোর্ড টানা রয়েছে। তারপরে নতিস্বীকার। এই ধরনের বেইমানি করা হলে মুশকিল আছে। গোটা বিষয়টা প্রদেশ সভাপতিকে জানাব। সভাপতি যদি মনে করে বিষয়টা জানাব জানাতে পারেন, নাও জানাতে পারেন।' নেপাল মাহাতোর প্রতিটি কথায় যেন শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি হতাশার সুর।
আরও পড়ুন- ‘শেষ দেখে ছাড়বে তৃণমূল’, শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভাগে ফের চিঠি মমতার দলের
কেন্দ্রীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে কড়া সমালোচনা করেছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী। রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের বিরাগভাজন হয়েছেন তরুণ তুর্কি এই নেতা। কেন্দ্রীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোট আর এরাজ্যে কংগ্রেসের পরিস্থিতির প্রশ্নে নেপাল মাহাতো বলেছিলেন, 'নজর রাখা হচ্ছে। তবে জোট নিয়ে তো এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।' মোদ্দা কথা অনেকটা এড়িয়ে গিয়ে জবাব দিয়েছিলেন পুরুলিয়া জেলা কংগ্রসের সভাপতি। কিন্তু ঝালদা পুরসভা তৃণমূলের দখলে যেতেই সেই নেপাল মাহাতোর গলায় একদিকে হতাশার সুর অন্যদিকে লড়াইয়ের বার্তা।
নেপাল মাহাতো বলেন, 'তৃণমূল ও কংগ্রেসের লড়াই তো স্থানীয় স্তরে। এবারে দিল্লির স্তরে জোট হয়েছে। নাকি ম্যাচিওর হয়েছে কিনা সেটাই আমাদের জানা নেই। কি হচ্ছে না হচ্ছে ওদের ব্যাপার। আমাদের এখানে লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। তৃণমূল যতরকম শক্তি প্রয়োগ করে আমাদের বোর্ড ভাঙল। ওর সঙ্গে জোটের কি সম্পর্ক সেটা বলতে পারব না।' এই পরিস্থিতিতেও সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল ও কংগ্রেস কাছাকাছি। কি বলবেন? নেপাল মাহাতো বলেন, 'রাজ্যের সাধারণ কংগ্রেস কর্মীরা সবাই তো হতাশ হবে। একদিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের সখ্যতা, অন্যদিকে আমাদের দলকে ভাঙাচ্ছে। দেখুন এই লড়াই থাকবে। আগামী দিনেও চলবে। ওরাও কতদিন বোর্ড রাখতে পারবে আপনারা দেখুন। আমরাও কি ছেড়ে কথা বলব নাকি? কাল থেকেই প্রমাণ পাবেন।'