বিরাম নেই করোনা সংক্রমণে। তার ওপর চোখ রাঙাচ্ছে কালাজ্বর। ইতিমধ্যে বাংলার ১১জেলায় ৬৫ জন আক্রান্তের হদিস মিলতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আর তাতেই উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা। একেই করোনার সংক্রমণ প্রতিদিন ঊর্ধ্বমুখী, তার ওপর ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে। এই অবস্থায় কালাজ্বর বাড়ার ফলে স্বাস্থ্য কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে সকল জেলায় একটি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যে জেলাগুলিতে এই জ্বরের প্রকোপ সর্বাধিক হারে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং কালিম্পং। স্বাস্থ্য দফতরের এক সিনিয়ার আধিকারিক সংবাদ সংস্থাকে পিটি আইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় কালা জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ১১ জেলায় ইতিমধ্যেই ৬৫ জন আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সতর্কতামূলক প্রচারও চালানো হচ্ছে”।
পাশাপাশি তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে কালাজ্বর কার্যত নির্মূল হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ জেলায় কালাজ্বরের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে”। রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেছেন, “আক্রান্তদের চিহ্নিত করে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি রোগীদের চিহ্নিত করে নিখরচায় ওষুধ ও পুষ্টিকর খাবার দাবার দেওয়ার কাজও ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে”।
তবে চিকিৎসক মহলের আশঙ্কা রক্তপরীক্ষা করে আরও বেশি আক্রান্তের সন্ধান মিলতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত কালাজ্বরে কোন মৃত্যুর খবর মেলেনি। স্বাস্থ্য অধিকর্তারা জানিয়েছেন “এখনও পর্যন্ত কলকাতায় কোন আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি”।
আরও পড়ুন: <বুস্টার ডোজের প্রথম দিনেই বিপুল সাড়া, খুশি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা>
রাজ্য সচিবালয়ের একজন শীর্ষ আমলা বলেছেন যে “সরকার এই রোগে আক্রান্ত সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সঙ্গে সকল প্রাইভেট ল্যাবগুলিকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোন রোগীর নমুনা পরীক্ষার কালাজ্বরের লক্ষণ ধরা পড়লে তা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে”।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে নজরদারি প্রক্রিয়া চালানো হবে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। স্যান্ডফ্লাই বা বেলেমাছির শরীরে থাকা পরজীবী ‘কেমোটোমাস আার্জেন্টিনিস’ থেকেই এই রোগ সংক্রমিত হয়। ১৪ দিনের বেশি জ্বর, খিদে বা ওজন কমে যাওয়া, চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, রক্তাল্পতা, খিদে কমে যাওয়া, বমিভাব। যকৃৎ বা প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া এমন ক্ষেত্রে রোগীকে পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সময়মত কালাজ্বর পরীক্ষার ধরা পড়লে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই তা নির্মূল সম্ভব বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।