ED অফিসার সেজে দেড় কোটি টাকার প্রতারণা! সেই অভিযোগে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের ঘনিষ্ঠ পূর্ব বর্ধমানের রায়নার ক্ষেমতা গ্রামের বাসিন্দা জিন্নার আলিকে আটক করেছে ইডি। বুধবার সকালে জিন্নার আলির রায়নার বাড়িতে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে শেখ জিন্নার আলির বাড়িতে গিয়েছিলেন ইডির অফিসাররা। প্রাসাদোপম সেই বাড়ি ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়ির ভিতরে ঢুকেই তল্লাশি শুরু করে দেন ইডি-র অফিসাররা। কলকাতা সহ রাজ্যের আরও একাধিক জায়গায় থাকা জিন্নার আলির আরও পাঁচটি বাড়িতেও এদিন ইডির অফিসাররা হানা দিয়েছিলেন। জিন্নার আলির ব্যবহার করা দামি একটি চার চাকা গাড়ি এদিন বিকেলে ক্ষেমতা গ্রামের বাড়ি থেকে ইডি বাজেয়াপ্ত করে কলকাতায় নিয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে ইডির অন্য একটি দল জিন্নার আলিকে তাঁর কলকাতার নিউটাউনের বাড়ি থেকে আটক করে।
এদিকে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ,মন্ত্রী ও বিধায়কদের ঘনিষ্ঠ জিন্নার আলিকে ইডি আটক করার খবর চাউর হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। কড়া ভাষায় তৃণমূলকে বেঁধা শুরু করে দেয় BJP। বিজেপি নেতারা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ,মন্ত্রী ও বিধায়কদের সঙ্গে অভিযুক্ত জিন্নার আলির ঘনিষ্ঠতার ছবি সামনে এনে কড়া ভাষায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো শুরু করে দিয়েছে।
জেলা বিজেপির সহ সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “জিন্নার আলির মতো ব্যক্তিরা তৃণমূলের সম্পদ। ভোট এলে জিন্নার আলির মতো ব্যক্তিরা তৃণমূলকে ফাণ্ডিং করে। তাই তৃণমূলের বিধায়ক ও মন্ত্রীদের সহায়তায় রাজ্য বিধানসভা থেকে শুরু করে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জিন্নার আলি পৌংছে যেতে পেরেছে।" যদিও বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের আনা এই অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তাঁর বক্তব্য, "বিধায়ক ও নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে অনেকেই
ছবি তোলে। তার মানে এটা নয়, ছবি তোলা ওই ব্যক্তির করা কোন অপকর্মের সঙ্গে তৃণমূলের নেতা,মন্ত্রীরাও যুক্ত।"
আরও পড়ুন- Abhijit Sarkar murder:BJP কর্মী অভিজিৎ খুনে নয়া মোড়! CBI চার্জশিটে দাপুটে তৃণমূল বিধায়কের নাম, সঙ্গে দুই কাউন্সিলরেরও
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, জিন্নার আলি নিজেকে 'ন্যাশনাল অ্যান্টি ট্র্যাফিকিং কমিটি'র চেয়ারম্যান বলে দাবি করতেন। যদিও সেটা আসলে একটি NGO। ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, শেখ জিন্নার আলির বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছেন এক বালি কারবারি। নিজেকে সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি অফিসার পরিচয় দিয়ে জিন্নার আলি ওই বালি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগকারী ওই বালি ব্যবসায়ীর দাবি, তাঁকে একাধিকবার হুমকি দিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হতে বলেছিলেন জিন্নার।
এই অভিযোগ সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে ইডি। অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি থেকে অর্থ মন্ত্রকের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল এদিন শেখ জিন্নার আলির রায়নার ক্ষেমতা গ্রামের বাড়ি সহ রাজ্যের আরও পাঁচ জায়গায় থাকা জিন্নারের বাড়িতে হানা দেয়। তদন্তকারী ইডি অফিসাররা বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্ষেমতা গ্রামের বাড়িতে টানা তল্লাশি চালিয়ে নানা নথিপত্র সংগ্রহ করার পাশাপাশি দামি একটি চারচাকা গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে।
আরও পড়ুন- weekend trip: বর্ষায় কলকাতার কাছের এই সমুদ্র পাড়ের অনিন্দ্যসুন্দর রূপ লজ্জায় ফেলে সুন্দরী রমণীদেরও
রায়নার বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে, মাত্র আড়াই বিঘা জমি আর কুঁড়ে ঘর ছিল জিন্নার আলির সম্পদ। কিন্তু শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে জিন্নার আলি কয়েক বছরে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায়। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক সহ বর্ধমান উত্তর বিধানসভার বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক, জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, তৃণমূল নেতা কাজল শেখ সহ একাধিক নেতার সঙ্গে জিন্নার আলির ছবি এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায়। রায়নার ক্ষেমতা গ্রাম থেকে শুরু করে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, সল্টলেক, নিউটাউন, রাজারহাট প্রভৃতি জায়গায় জিন্নার আলি যে সব বাড়ি করেছেন তার আর্থিক উৎস এখন ইডি খুঁজছে।