১৮ নভেম্বর কলকাতায় মিছিল হবে। ১৯ নভেম্বর বিশ্ব পুং দিবসের প্রাক্কালে মিছিল করবে পুরুষ অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন। পুরুষাধিকারের কর্মীদের নানা দাবিদাওয়া রয়েছে। এবং সে সব দাবি আদায়ের জন্য তাঁরা নানা কর্মসূচির সঙ্গে যজ্ঞও করবেন। পিশাচিনী যজ্ঞ।
পুরুষাধিকারবাদীরা বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে তাঁরা অভিযোগ করলেন নানা বিষয়ে। তার মধ্যে ছিল #MeToo বিরোধিতা, ছিল ৪৯৮ (ক) বিরোধিতা, এমনকি বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও নিয়েও তাঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে।
কিন্তু এসব বিক্ষোভ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়লে তাঁদের একেকজন একেকরকম বলতে লাগলেন। কেউ বললেন, "কন্যাভ্রূণ হত্যা আদ্যিকালে হত, এসব এখন আর হয় না।" সে নিয়ে প্রশ্ন করতে একটু চৌকস একজন বললেন, "এটা ওঁর ব্যক্তিগত মত, আমরা বলছি না।" সাংবাদিক সম্মেলনে ক্রমশ সব ঘুলিয়ে যেতে থাকে। এক মহিলা সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে পড়ে সঞ্চালক সেই সাংবাদিকের সম্পর্কে বলে ফেললেন, "উনি তো নিরপেক্ষ নন, নারীবাদীর মত কথা বলছেন।" অধিকারের দাবিতে আন্দোলনে যজ্ঞ কেন, সে প্রশ্নের উত্তরে আরেকজন বললেন, "উনি তো নিজে শাঁখা-সিঁদুর পরে রয়েছেন।"
প্যান্ডেমোনিয়াম শুরুর আগে নিজেদের বক্তব্যে নিজেরা হাততালি দিয়ে প্রেস ক্লাবের হল ফাটিয়ে দেওয়ার মত চেষ্টাও দেখা গেল। সাংবাদিক সম্মেলনের মঞ্চে বসে কেউ একজন 'মেয়েছেলে' শব্দটিও উচ্চারণ করলেন।
আরও পড়ুন: গরুর সঙ্গে একই ফ্রেমে? আপনার জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার
মজা ও বিস্ময়ের অবশ্য এখানেই শেষ নয়। এক সাংবাদিক আইনি কিছু বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সে ব্যাপারে জবাব দিতে এগিয়ে দেওয়া হল এক আইনজীবীকে। ৩৭৭ ধারা নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তরে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, প্রায় পাঁচ-সাত মিনিট ধরে বলে গেলেন ব্যাভিচার সম্পর্কিত আইন নিয়ে তাঁদের ভাবনার কথা। বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, তিনি কী নিয়ে বলছেন! তাতে তিনি বললেন, "ওহ ভুল হয়ে গেছে, আমি অন্য আইনের কথা বলছি।" সেই আইনজীবীর কথাতেই জানা গেল, তাঁরা ৪৯৮ (ক) তুলে দিতে চাইছেন না, বিবাহিত পুং অধিকার সুনিশ্চিত করতে ৪৯৮ (খ) ধারা সংযুক্ত করতে চাইছেন। মঞ্চে ছিলেন এক মহিলাও। কোনও স্বামী-স্ত্রী এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না, সে প্রশ্ন করতে তাঁকে দেখিয়ে আরেক মঞ্চোপবিষ্ট বললেন, "ওই তো উনি রয়েছেন, ওঁর স্বামী যদি ওঁকে সমর্থন না করতেন, তাহলে কি উনি এরকম মঞ্চে আসতে পারতেন?"
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এহেন নানা দুর্যোগের মাঝে অবশ্য একবারও কথা বললেন না শিব সেনার পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার। আর গোটা সাংবাদিক সম্মেলনের ভিডিও তুলে বেড়াচ্ছিলেন যিনি, তিনি শিব সেনার রাজ্য সহ সভাপতি দেবলীনা শাস্ত্রী।
সাংবাদিক সম্মেলন শেষে তাঁর মুখোমুখি হতে দেবলীনা বললেন, গত ছ'মাস ধরে এই পুরুষাধিকার সংগঠনের সঙ্গে রয়েছেন তিনি। বললেন, পেশায় জ্যোতিষী হওয়ার সুবাদে তাঁর কাছে এরকম "অসংখ্য কেসেস" এসেছে যেখানে পুরুষরা নির্যাতনের শিকার, মহিলারা সুবিধা ভোগ করছেন আইনের সুবাদে। দেবলীনারা লিঙ্গ নিরপেক্ষ আইন দাবি করছেন। দেবলীনারা 'বেটা পড়াও' চান। কেননা, "অনেক বাড়িতে সংসারের চাপে ছেলেরা পড়া ছাড়তে বাধ্য হয়, তাই তাদের জন্যও সুব্যবস্থা থাকা দরকার।" এই সংগঠন আয়োজিত যজ্ঞানুষ্ঠানের আহ্বান প্রসঙ্গে দেবলীনার বক্তব্য, "আমরা এখন মেজরিটি, হিন্দুরা এখন মেজরিটি।" আর পিশাচিনী যজ্ঞ নিয়ে তাঁর মহিলা হিসেবেও অস্বস্তির কোনও কারণ দেখা দিচ্ছে না, "কারণ, আমি তো একজন মহিলা নই, আমি মানুষ। আমার কোনও লিঙ্গ পরিচয় নেই।"