Barasat News: ডাক্তার নয় উনি ভগবান! অন্তত এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষজনের কাছে শ্যামল কুমার বিশ্বাসের স্থানটা অনেক উপরে। তবে শ্যামলবাবুর কাছে নিজেকে এমনস্তরে নিয়ে যাওয়ার লড়াইটা কিন্তু সহজ ছিল না। নিতান্ত সবজি বিক্রেতা বাবার সাধ ছিল ছেলেকে ডাক্তার করার। ছেলেও বাবার ইচ্ছেকে তেমনই মর্যাদা দিয়েছেন। আজ তিনি বসিরহাট (Basirhat) হাসপাতালে ডেপুটি সিএমএইচ পদে নিযুক্ত। সরকারি বড় পদে আসীন হলেও সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলোর খোঁজখবর নিতে আজও তিনি ভোলেন না। আজও গরিবের ব্যাথায় প্রাণ কাঁদে তাঁর। আজও বহু গরিব মানুষের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেন তিনি।
বসিরহাট জেলা হাসপাতালের ডেপুটি সিএমওএইচ শ্যামল কুমার বিশ্বাস। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হৃদয়পুরে (Hridaypur)। ছোট থেকেই অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা শ্যামল বিশ্বাসের। তাঁর বাবা স্টেশনে সবজি বিক্রি করতেন। বাবার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সবজি বিক্রি করতেন শ্যামলবাবুও। তবে তারই ফাঁকে চলতো লেখাপড়া। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর ধনুকভাঙা পণকে পাথেয় করেই নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন শ্যামল কুমার বিশ্বাস।
এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি সাক্ষাৎ যেন ঈশ্বরের দূত। ডাক্তারির মাধ্যমে নিজেকে তিনি নিয়োজিত করেছেন মানবসেবার কাজে। মহারাষ্ট্রের লাথুরের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় ছুটে গিয়ে টানা সেবা করেছেন আহত মানুষদের। এমনকী যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনেও (Ukraine) ছুটে গেছিলেন তিনি। সেখানেও টানা কিছুদিন থেকে চিকিৎসা করে এসেছেন যুদ্ধবিধ্বস্তদের।
করোনার (Corona) সময় তাঁর কীর্তি এলাকার মানুষ জীবনে কোনওদিন ভুলবেন না। সেই সময় দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম ও কার্যত নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও রোগী দেখে গিয়েছেন শ্যামলকুমার বিশ্বাস। বাবার দেখানো পথকে পাথেয় করে সেই পথেই হেঁটেছেন শ্যামলবাবুর মেয়েও। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বহু আহত মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে পোড়ানদের সীমান্তে ছুটে গিয়েছেন কি আশা বিশ্বাস। বাবা করছিলেন চিকিৎসায় তিনি বাবাকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সাহায্যের হাত।
আরও পড়ুন- Ajmiri Bakery: কাঠের জ্বালে তৈরি হয় কেক, ২০০ বছরের সোনালী অতীত আঁকড়ে আজমিরি বেকারি
চিকিৎসা করার পাশাপাশি সমাজসেবী হিসেবেও তুলনা হয় না শ্যামল কুমার বিশ্বাসের। আজ হৃদয়পুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন চিকিৎসক শ্যামলকুমার বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে বহু গরিব মানুষ রাতের খাবার খান। শুধু তাই নয়, শীতে স্টেশনে ও রাস্তার ধারে থাকা সহায় সম্বলহীনদের গরম কাপড় জামা দেন তিনি।
হৃদয়পুরে নিজের বাড়িতে রোগী দেখেন শ্যামল কুমার বিশ্বাস। ২০০ টাকা ভিজিট তাঁর। গরিব রোগী এলে ভিজিট যেমন নেন না তেমনই ওষুধ কেনার টাকাও দেন অনেককে। এমন মানবদরদী চিকিৎসক শ্যামল কুমার বিশ্বাসকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন নানা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ডাক্তারবাবু সত্যিই আজ এলাকার মানুষের কাছে সাক্ষাৎ ভগবানের দূত।