Advertisment

বিষধর কেউটেই এতল্লাটের দেবী, 'ঝাঁকলাই'-এর পুজো ঘিরে সরগরম বাংলার এই প্রান্ত

বংশ পরম্পরায় প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে সাপকে দেবীজ্ঞানে পুজো করে আসছেন এতল্লাটের বাসিন্দারা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
snakes are worshiped as goddesses in several villages of East Burdwan

প্রাচীন বিশ্বাসে ভর করেই বংশ পরম্পরায় বিষধর সাপের পুজো হয়ে আসছে বাংলার এই গ্রামগুলিতে। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

কারও কাছে তার পরিচিতি 'ঝাঁকলাই' নামে। কেউ তাকে বলেন 'ঝঙ্কেশ্বরী'। এমনই নানা নামে যার পরিচিত বিষধর কেউটে। বংশ পরম্পরায় প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে তাকেই দেবীজ্ঞানে পুজো করে আসছেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ও মঙ্গলকোটের সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisment

মহা ধুমধাম করে বৃহস্পতিবার ঝাঁকলাইয়ের পুজো হল ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, পলসোনা, মুশারু এবং নিগন গ্রামে। এর আগে এই সাতটি গ্রামে ঝাঁকলাইয়ের অবাধ বিচরণ থাকলেও বর্তমানে ভাতারের বড়পোশলা এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, মুশারু ও পলসোনা গ্রামে এখনও ঝাঁকলাই সাপ দেখা দেয়।

এই চার গ্রামে জ্যান্ত ঝাঁকলাই সাপকেই দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। এলাকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ঝাঁকলাই বিষধর হলেও সে কাউকে কামড়ায় না। কোনও কারণে কাউকে ছোবল দিলে দেবীর মন্দিরের মাটি তাঁর শরীরে লেপে দিলেই তিনি বিষমুক্ত হয়ে যান।

এই বিশ্বাসে ভর করে আজও ঝাঁকলাই সাপকে সঙ্গে নিয়েই ঘর করেন এই সব গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাঁদের গ্রামে রান্নাঘর থেকে শোওয়ার ঘর সবেতেই ঝঁকলাইয়ের অবাধ বিচরণ। গ্রামের মন্দিরেও প্রায়ই দেখা যায় বিষধর কেউটে প্রজাতির এই ঝাঁকলাই সাপকে।

এলাকার গ্রামগুলিতে এই ঝাঁকলাই সাপ নিয়ে অনেক লোককথা প্রচলিত আছে। এলাকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস 'ঝাঁকলাই' আসলে কালনাগিনী। লক্ষ্মীন্দরকে লোহার বাসরঘরে দংশন করার পর পালানোর সময় বেহুলা তাঁকে লক্ষ্য করে 'কাজললতা' ছুড়ে মারেন। 'কাজললতা'র নাকি আঘাতে কালনাগিনীর লেজ কেটে যায়। তাই ঝাঁকলাইয়েরও লেজ কাটা।

আরও পড়ুন- মিড-ডে মিলে মুশকিল আসান! ছাদেই বাগান বানিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে এই স্কুল

পলসোনার বাসিন্দারা জানান, গ্রামে একটা ডাঙা আছে। সেই ডাঙার নাম 'খুনগোর'। বেহুলার শাপে কালিয়াদহের কলনাগিনী মর্তে এসে 'খুনগোর' ডাঙায় থাকতে শুরু করে। গ্রামের বাসিন্দা মুরারীমোহন চক্রবর্তীকে নাকি স্বপ্নাদেশে কালনাগিনী তার পুজো করার কথা জানায়।

সেই থেকেই পলসোনা গ্রামে ঝাঁকলাইয়ের পুজো হয়ে আসছে। আরও জানা যায়, ঝাঁকলাইয়ের গায়ের রং কালচে বাদামি। যেসব গ্রামে ঝাঁকলাই সাপ দেখা যায় সেই গ্রামগুলিতে সচরাচর অন্য কোনও বিষধর সাপ দেখা যায় না। ঝাঁকলাই রাতে বের হয় না। এমনকী এই সাপ এলাকা ছেড়েও বের হয় না।

আরও পড়ুন- পিছু ছাড়ছে না করোনা-জুজু, দেশজুড়ে ১৮ ঊর্ধ্বদের বুস্টার ডোজ আজ থেকেই

ঝাঁকলাই নিয়ে গ্রামের মানুষজনের ধর্মীয় বিশ্বাস যাই থাক বিজ্ঞানমঞ্চ বিষয়টিকে অন্য ভাবে দেখতেই আগ্রহী। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বর্ধমান জেলা কার্যকরি সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ''সাপ এমনিতেই ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণি। কোনও কারণ ছাড়া সাপ কামড়ায় না। তাছাড়া ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে এখানকার মানুষেরা সাপকে বিরক্তও করেন না। সেই কারণেই উভয়ের মধ্যে সহাবস্থান তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিনের সহাবস্থানের ফলে ওই সব গ্রামগুলিতে সাপের কামড়ের ঘটনা খুবই কম। তবে এই সাপের বিষ আছে। কামড়ালে হাসপাতালে যেতে হবে।''

West Bengal East Burdwan Poisonous Snake pujo
Advertisment