দেশ বা রাজ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির আমূল বদল ঘটেছে। নতুন নতুন দল ক্ষমতাসীন হয়েছে রাজ্যে রাজ্যে। কেন্দ্রেও টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। কালের নিয়মে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের দল, কুশীলবদেরও পরিবর্তন হয়েছে বিস্তর। কিন্তু দিল্লিতে দোস্তি বাংলায় কুস্তি, এই আপ্ত বাক্যও কিন্তু মানুষের ধারনায় থেকেই গিয়েছে। ক্ষমতাসীন, ক্ষমতাহীন সব দলের ক্ষেত্রেই নানা কারণে এই ধারনা প্রযোজ্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। দুই সরকারের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই নানা সামাজিক প্রকল্পের সুফল পেতে পারে সাধারণ মানুষ। করোনার মতো অতিমারিতে দুই সরকারের যৌথ উদ্যোগ না থাকলে লড়াই করা সম্ভব ছিল না। অভিজ্ঞমহল মনে করে, হাজার রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতে পারে কিন্তু সাধারণের জন্য কাজ করতে তা দূরে রাখাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই হোক বা ইগোর লড়াই, নানা ক্ষেত্রে পরস্পরের বিরুদ্ধে যেন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বজায় রাখাই যেন কেন্দ্রীয় সরকার ও বাংলার সরকারের মধ্যে প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে সব যেন গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে সিপিএম অভিযোগ করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির গোপন আঁতাত আছে। যদিও তা উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। ইদানিং রাজ্য কংগ্রেসও সেই অভিযোগ করছে।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেশের অবিজেপি বিরোধী দলগুলি একসঙ্গে লড়াই করার সময় দিল্লিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠকে হাজির ছিলেন সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। যৌথ বিরোধী প্রার্থী প্রাক্তন তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিনহা গোহারা হারলেন দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে। এমনকী এরাজ্যে তাঁকে প্রচারেও আসতে দেওয়া হল না। ভোট না দিলেও মমতা ঘুরিয়ে দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রায় সমর্থন করে দিলেন।
এখনও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন বাকি রয়েছে। এবার বিরোধী জোট প্রার্থী করল প্রবীণ রাজনীতিক মার্গারেট আলভাকে। তৃণমূল দাবি করে বসল তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। তাঁরা সমর্থন করবেন না মার্গারেটকে। অথচ গত তিন বছর ধরে বিজেপির প্রার্থী বঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে বাকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন।
প্রার্থী হওয়ার আগে দার্জিলিংয়ে অসমের রাজ্যপাল হেমন্ত বিশ্বশর্মার উপস্থিতিতে রাজ্যপালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎও করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার বাংলার সিপিএম-কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাত নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিল। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, তাহলে কেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এক ডাকে তৃণমূলনেত্রীর ডাকা বৈঠকে তখন দৌঁড়ে গিয়েছিল সিপিএম ও কংগ্রেস। দিল্লিতে দোস্তি বাংলায় কুস্তি!
আরও পড়ুন- ‘আমার কোনও টাকা নেই, ষড়যন্ত্র কার সময় এলেই বুঝবেন’, ফের বিস্ফোরক পার্থ
তবে এবার নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাবেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে। সঙ্গে নিয়ে যাবেন দলের সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এখন এসএসসি কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে ইডির হেফাজতে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুই বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা, বহু মূল্যবান গয়না, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকার হদিশ পেয়েছে ইডি।
সারদাকাণ্ডে যখন আইপিএস রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআই উঠে পড়ে লেগেছিল, তখন ধর্মতলায় অবস্থান করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তারপর দিল্লি ছুটেছিলেন। পরবর্তীতে অন্য এক আইপিএসকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।
দিল্লিতে দোস্তি এখানে কুস্তি দেখতে পাচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সারদাকাণ্ড নিয়ে এভাবেই সরব হয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্য-রাজনীতিতে বিরোধীদের ভাঁড়ার এখন শূন্য। কংগ্রেসের দু'জন সাংসদ যেন টিম টিম করে জ্বলছেন। এসএসসি ইস্যুতে রাজ্যে সেভাবে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে বিরোধীরা ব্যর্থ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই প্রথম গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে সাতদিনের মধ্যে কারও মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়ে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু আন্দোলনের ঝড় সেভাবে বাংলায় ওঠেনি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন- দফায়-দফায় জেরা পার্থ-অর্পিতাকে, আরও কোটি-কোটি টাকার খোঁজ পেল ED
রাজনীতিতে কে কার সঙ্গে কখন কীভাবে দোস্তি করছে কীভাবে কুস্তি করছে তা সত্যি গবেষণার বিষয়। বামেদের সঙ্গে খুবই সুসম্পর্ক ছিল কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের, একথা সর্বজনবিদিত। তখন আবার বাংলায় বামফ্রন্ট ও কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার। তখনও ইকুয়েশন খুঁজে বেড়াত রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল গঠনই করা হয়েছিল কংগ্রেসকে সিপিএমের বি-টিম দাবি করে।
কেন্দ্রের পরমাণু নীতি সমর্থন না করায় ঘোরতর বিবাদ শুরু কংগ্রেস-বামেদের। তারপর ২০১১-এর বাংলার বিধানসভা নির্বাচন তো ইতিহাস। রাজনৈতিক মহলের মতে, কালের নিয়মের মতোই রাজনীতিতে দোস্তি আর কুস্তির সম্পর্ক। তা সকলের অগোচরে হোক বা প্রকাশ্যে হোক। সেখানে নীতি-আদর্শ থোরাই কেয়ার।