নয়ের দশকের নস্টালজিয়া ফিরিয়ে আনছে সমাজ সেবী সংঘ। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা সজ্জায় সবেতেই থাকছে এক নস্টালজিক অনুভূতি। চলতি বছরের পুজোয় তাক লাগাতে সমাজ সেবী সংঘের বিশেষ থিম 'সেবিছে ঈশ্বর'। শিল্পী কৃষাণু পালের হাত ধরেই ফুটে উঠতে চলেছে এবারের ইউনিক পুজো থিম।
সমাজ সেবী সংঘের পুজো এইবার ৭৭ তম বর্ষে পদার্পণ করছে। আর পুজো উপলক্ষে একেবারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি মণ্ডপ জুড়ে। সালটা ১৯৪৬। দাঙ্গা-অশান্তির আঁচে পুড়ছে শহর কলকাতা। সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে তহবিল গড়তে এগিয়ে এসেছিলেন লীলা রায়, শরৎ বোস সহ একাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামী। আর সেই সময় সম্প্রীতির বাঁধনে মানুষকে বাঁধতেই শুরু হয় দুর্গাপুজোর। ফেলে আসা সেই সময়কে থিমের আলোকে তুলে ধরতে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন শিল্পী কৃষাণু পাল। পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হবে এবারের পুজোয়। পুজো ঘিরে সাজো সাজো রব।
ক্লাবের তরফে কালচারাল সেক্রেটারি ভাস্বতী সরকার বলেন, “মণ্ডপ জুড়ে ট্রাঙ্কের ব্যবহার করা হয়েছে। এই যে ট্রাঙ্ক আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এর একটা ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা রয়েছে। মানুষ যখন অতীতে একাধিক ঘাত-প্রতিঘাতের সঙ্গে লড়াই চালিয়েছে তখন এই ট্রাঙ্কেই ছিল তার গচ্ছিত ধন। তাঁরা তাদের মূল্যবান সম্পদ একটা পুটলির ভিতর বেঁধে ট্রাঙ্কের মধ্যে রেখে দিত। তখন তারা মনে করতেন ট্রাঙ্ক মাথায় করে আমরা যখন-তখন যেখানে সেখানে চলে যেতে পারব। নিজেদের গচ্ছিত সম্পদটুকু সম্বল করে। মানুষের সেবা করার লক্ষ্যেই সমাজ সেবী সংঘের প্রতিষ্ঠা। মানুষকে সেবার মাধ্যমেই ইশ্বরলাভ সেই বার্তায় তুলে ধরা হচ্ছে এই পুজো থিমে। তিনি আরও বলেন, “এবার পুজোয় ২০ জন গরীব পড়ুয়ার স্কুলের একবছরের টিউশন ফি দিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি।
“দেশভাগ, ও সম্প্রীতি -সম্মলেন কে মিলেমিশে একাকার করা হচ্ছে এবারের এই পুজো থিমে। তিনি আরও জানান, “আগামী ২৭ শে সেপ্টেম্বর পুজোর উদ্বোধন। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও পুজো উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরেই সাধারণের উদ্দেশ্যে এই মণ্ডপ খুলে দেওয়া হবে”।
আরও পড়ুন : < উৎসবের আবহেই খুশির খবর, নিউ গড়িয়া-রুবি রুটে মেট্রোর ট্রায়াল রান চালু >
গত ২ বছর ধরেই অতিমারীর দাপট মানুষের জীবনকে একেবারেই অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সেই অতিমারীর দাপট কমতেই এবারের পুজো ঘিরে মানুষের মধ্যে চূড়ান্ত উদ্দীপনা। উৎসবের আনন্দের জোয়ারে গা ভাসাতে প্রস্তুত সকলেই। হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। আর তারপরেই বাঙালির ‘প্রাণের পুজো’ দুর্গাপুজো।
শহর থেকে জেলার পুজো মণ্ডপে থিমের রমরমা। পুজো যতই এগোচ্ছে শিল্পীদের মধ্যে বেড়েছে ব্যস্ততা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেরারা সেরা জাহির করার পালা। আর তাতেই সামিল সমাজ সেবী সংঘের এবারের পুজো। এবারের পুজো ভাবনায় বিশেষ থিম 'সেবিছে ঈশ্বর'। ইউনেস্কোর হেরিটেজ সম্মান পেয়েছে বাংলার দুর্গাপুজো৷ তাই চলতি বছরের দুর্গাপুজোকে ঘিরে আগ্রহ গোটা বিশ্ব জুড়ে। এ বারের পুজোয় তাই তাক লাগাতে প্রস্তুত হচ্ছে সমাজ সেবী সংঘের পুজো। থিম ভাবনায় রয়েছে অভিনবত্বের ছোঁয়া।
মন্ডপ সজ্জা-প্রতিমা ছাড়াও চমকের আরও বাকী রয়েছে। পুজো মানেই এককালে ছিল পুজোর গান। নয়ের দশকের সেই নস্টালজিয়াকে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি সমাজসেবী সঙ্ঘ ও আশা অডিওর যৌথ উদ্যোগে ফিরছে পুজোর গান বা শারদ অর্ঘ্য। গত ১৩ ই সেপ্টেম্বর লঞ্চ হয়েছে এই গানের। কুমার শানু, অমিত কুমার, অলকা ইয়াগ্নিকের মধুর কন্ঠে মন মাতাতে পুজো প্যাণ্ডেলে আগত দর্শনার্থীদের কাছে এটাও পুজোর অন্যতম সেরা আকর্ষণ এমনটাই মনে করছেন ক্লাব সদস্যরা।