Kolkata Cab Driver: "শহর জুড়ে যেন শুধুই প্রেমের মরশুম"! ভালোবাসার আরেক নাম শহর কলকাতা! কত সফল প্রেম, ব্যর্থ প্রেমের সাক্ষী এ শহর। শীতের কলকাতায় এমনই এক প্রেমকাহিনীর চর্চা সর্বত্র। না এ কোন যুগলের প্রেমকাহিনী নয়। এই ভালোবাসার মধ্যে নেই কোন চাওয়া-পাওয়ার হিসাব নিকেশ! নিখাদ প্রেমের এমন জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ চোখের কোণায় জল এনে দেবে।
শহরেরই এক ক্যাব ড্রাইভার ও তার পোষ্য সাধের বুলবুল পাখির প্রেমকাহিনী যা হার মানাবে বড় পর্দার যে কোন রোমান্টিক চিত্রনাট্যকে অথবা প্রিন্সেপ ঘাটে প্রেমিকের কাঁধে মাথা রেখে প্রেমিকার আগামীর স্বপ্ন গাঁথার কোন এক অতি পরিচিত প্রেম কাহিনীকে।
মাত্র ৬ মাস আগেও একে অপরের পরিচিত ছিল না দুজনের কেউই। আর এই ৬ মাসে আমূল বদলে গিয়েছে চিত্রটা। আজ তারা দুজনে একে অপরকে ছাড়া কয়েক সেকেন্ডও থাকতে পারেনা। সকাল থেকে রাত শীত, গ্রীষ্ম বর্ষা এই শহরের রাস্তাতেই ক্যাব চালান মহেশতলার সুশান্ত মন্ডল। হঠাৎ করেই তার সঙ্গে দেখা হয় এক 'আহত' বুলবুল পাখির। প্রচন্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে তখন। তাকে উদ্ধার করে সুশান্তর কাছে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী। মুহুর্তেই বদলে যায় সুশান্তর পৃথিবী। পাখিটিকে ওই অবস্থা থেকে সুস্থ করে তোলাটা রীতিমত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন তিনি। দিন রাত এক করে চলে শুশ্রুষা। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে আদরের 'ঝটু'। তার পর থেকে আর আদরের সন্তানকে কাছ ছাড়া করতে পারেন নি সুশান্ত। সেই থেকে 'ঝটূ' সুশান্তর দিন- রাতের সঙ্গী। সকাল বেলায় স্নান খাওয়া সেরে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়া। দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরে 'ঝটু'কে নিয়ে বাড়ি ফেরা এটাই এখন সুশান্তর রোজকার রুটিন।
কী বলেন যাত্রীরা?
সুশান্ত বাবু জানান, অনেক সময় অনেক যাত্রী ওকে প্রথমে খেয়ালই করে না। পরে যখন ওর দিকে চোখ পড়ে, তারা চমকে ওঠেন। গাড়িতে পাখি ঢুকে গেছে বলে আমাকে সজাগ করে। পরে যখন আমার কাছ থেকে গোটা ঘটনা শোনেন তারা অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। অনেকে আবদার করেন ওর সঙ্গে ছবি, ভিডিও তোলার।
কী খায়?
এপ্রসঙ্গে সুশান্ত বাবু বলেন, 'সকালে সুশান্তর সঙ্গে ভাত ডাল খেয়ে বাড়ি থেকে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ে 'ঝটু'-ও। সঙ্গে থাকে নিজের ভালবাসার বুলবুলির জন্য কলা, অন্যান্য ফল, শুকনো খাবার, জল, ওষুধ। গাড়ি চালানোর মাঝে খিদে পেলে ও নিজেই জানান দেয়। আমি হাতে করে খাইয়ে দিই'।
সমাজের প্রতি বার্তা
সুশান্ত জানান, অনেক সময় আমাদের চোখের সামনে আমাদের গাফিলতিতে অনেক প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। আমরা যদি একটু নিজেদের বিবেককে জাগিয়ে তুলে আহত পশু পাখিকে উদ্ধার করে সুস্থ করে তুলতে পারি তাহলে যেমন একটা প্রাণ বাঁচবে তেমনই তা নিজের কাছে স্বর্গ সুখের থেকে কোন অংশে কম নয়। আমার মনে হয় সকলে মিলে যদি আমরা এভাবে পশু পাখিদের সামান্য দায়িত্ব নিতে পারি তাহলে আমাদের এই পৃথিবীটা আরও সুন্দর হবে।
বুলবুল পাখির সঙ্গে কীভাবে আলাপ?
গাড়ির স্টেয়ারিং হাতে সুশান্ত বলেন, "আমার বাড়ির পাশের গাছ তলায় পড়েছিল একজোড়া বুলবুলি। কাক ওদের আক্রমণ করেছিল। আমার স্ত্রী ওদের উদ্ধার করে । তারপর থেকে বাইরে ছেড়ে রেখেই ওদের যত্ন শুরু করি। 'ঝটু' আমার সঙ্গ ছাড়ে না। গাড়ি ওকে নিয়েই। যা খাব, তাই দিতে হবে। যেন আমার জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে উঠেছে । ঝটু ছাড়া আমার জীবন আর ভাবতেই পারি না।''