SSC Verdict News: সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নির্দেশে একসঙ্গে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। একসঙ্গে এত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হতেই রাজ্যের একাধিক স্কুলে শিক্ষকের সংকট তৈরি হয়েছে। একসঙ্গে এত শিক্ষকের আকালে স্কুল কী করে চলবে? তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।
যোগ্য ও অযোগ্য শিক্ষক বাছাই কোনওভাবেই সম্ভব না হওয়ায় ২০১৬ সালের SSC-র পুরো প্যানেলই বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম সেই রায়ের ধাক্কায় রাজ্যের অন্যান্য জেলার
স্কুলগুলির মতো পূর্ব বর্ধমান জেলার বহু স্কুলে দেখা দিয়েছে শিক্ষকের হাহাকার। পঠন-পাঠন শিকেয় ওঠার অবস্থা তৈরি হয়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনার জানিয়েছেন, তাঁর স্কুলের দু'জন শিক্ষক ও দু'জন শিক্ষিকা মিলিয়ে চারজনের চাকরি বাতিল হয়েছে। তাঁর স্কুলে এই মুহূর্তে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১,০৪৭ জন। এতজন ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনার দায়িত্ব এতদিন সামলাতেন স্কুলের ২৪ জন শিক্ষক। চারজন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ার এখন সেই দায়িত্ব ২০ জন শিক্ষকে সামলাতে হবে।
যে চারজন শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে তারা বাংলা,ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও এডুকেশনের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকের ঘাটতিতে স্কুল কীভাবে চালানো সম্ভব হবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না বলে প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনার জানিয়েছেন।
সুপ্রিম-রায়ে কোপে পড়েছে বর্ধমানের নিবেদিতা কন্যা বিদ্যালয়। এই স্কুলের মাধ্যমিক স্তরের একজন এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের দু’জন এবং ম শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে। আরও একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও চাকরি গিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা মণ্ডল কোনার জানান, তিন শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হওয়ায় স্কুলে এডুকেশন ও সংস্কৃত বিষয়ে পড়ানো নিয়ে সমস্যা হবে। এমনিতেই স্কুলে ছাত্রীর সাথে শিক্ষকের অনুপাত কম ছিল। এখন আরও কমে গেল। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে স্কুলের কাজ সামলানোও কঠিন হবে।
আরও পড়ুন- SSC Recruitment Case Verdict'মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখুন', চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে বার্তা শিক্ষামন্ত্রীর
এই দুটি স্কুল ছাড়াও বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমার জামালপুরের সেলিমাবাদ হাই স্কুল, কালনা কাঁশড়া হাই স্কুল এবং বাণী নিকেতন রঙ্কিনী মহুলা স্কুলের অনেক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। সেমিমাবাদ হাই স্কুলের টিচার ইনচার্জ বাসুদেব সাঁতরা জানান, তাঁদের স্কুলের দু’জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাদের একজন ছিলেন ভূগোলের শিক্ষক, অপরজন ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক। বাসুদেব সাঁতরা জানান, তাঁদের স্কুলের যে দু’জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে তাঁরা কেউ অযোগ্য শিক্ষক হতে পারেন না। ওই দু’জন শিক্ষকই স্কুলে অত্যন্ত ভালো পড়াতেন। সেই কারণে ওই দুই শিক্ষকই পড়ুয়াদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। এমনিতেই পড়ুয়ার ও শিক্ষকের অনুপাতে স্কুলে শিক্ষকে সংখ্যা কম ছিল। তার উপর দু’জন ভাল শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় সমস্যা আরও তীব্র হল।
কালনা কাঁশরা হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক দেবশেখর কোলে জানান, সুপ্রিম রায়ে তাঁদের স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকা মিলিয়ে চারজনের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও স্কুলের একজন ক্লার্কের চাকারি চলে গিয়েছে।ওই শিক্ষকদের মধ্যে দু'জন বিজ্ঞান বিষয় পড়াতেন। বাকি দু’জনের একজন ইতিহাস আর একজন ফিলোজফি পড়াতেন।
আরও পড়ুন- SSC Recruitment Case Verdict'মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখুন', চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে বার্তা শিক্ষামন্ত্রীর
দেবশেখর কোলে বলেন, "আমার স্কুলে সাড়ে ৭০০-র বেশি পড়ুয়া রয়েছে। এমনিতেই স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি ছিল। তার উপর একসঙ্গে চারজন শিক্ষক ও একজন অশিক্ষক কর্মচারীর চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন স্কুল চালানোই দায় হয়ে পড়ল।" চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়া একজন শিক্ষক এদিন নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর চোখের জল ফেলতে ফেলতেই এদিন তিনি স্কুল ছাড়েন।
বাণী নিকেতন রঙ্কিনী মহুলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত দাস জানান, সুপ্রিম রায়ে তাঁদের স্কুলের দু‘জন শিক্ষিকা ও একজন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। দু’জন শিক্ষিকা এদিন স্কুলে উপস্থিত হয়ে ছিলেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পরেই তারা স্কুল থেকে চলে যান। আর যে শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে তিনি কোনও এক কারণে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
দুই শিক্ষিকার একজন ইংরাজি আর একজন বাংলা পড়াতেন। সুব্রত দাস বলেন, "এতদিন ১৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়ে স্কুল চলছিল। এখন তা কমে গিয়ে ১১-তে নেমে গেল। কীভাবে স্কুল চালাব, বুঝে উঠতে পারছি না।"
একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কালনা মহকুমার ৪ টি স্কুলের বহু শিক্ষক,শিক্ষিকা ও আশিক্ষক
কর্মীর চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। কালনা শ্রী শ্রী নিগমানন্দ বিদ্যামন্দিরে তিন শিক্ষক ও অশিক্ষক এবং দু’জন অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে মোট ৫ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। এছাড়াও শশীবালা সাহা উচ্চ বালিকা বিদ্যালযে দু’জন শিক্ষিকা এবং একজন অশিক্ষক কর্মীরও চাকরি চলে গিয়েছে। বাদ যায়নি কালনা মহারাজ উচ্চ বিদ্যালয়। ১৮০০ পড়ুয়া নিয়ে চলা এই স্কুলের ৬ জন শিক্ষকের চাকরি গেছে।
কালনা হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে ৬ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। একসঙ্গে এতজনের চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ার স্কুল কীভাবে চলবে তা ভেবেই এখন দিশেহারা হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়া নিয়ে স্কুলগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কিছু বলতে চাননি।