প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ইডির হেফাজতে, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন এক শতাংশ কি নিজেদের লোক কাজ পাবে না, সেই পরিস্থিতিতে মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন ৫০০ দিনে পড়ল। তবে দিনের সংখ্যার কথা ভাবতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। তাঁদের একটাই মূল দাবি, নিয়োগপত্র দিতে হবে। স্কুলে যোগ না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা কোনওভাবে অবস্থান থেকে উঠবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের কথায়, রাস্তায় কেটে গেল যন্ত্রনার ৫০০ দিন। এবার দয়া করে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
টানা ৫০০ দিন ধরে পথে অবস্থান করে চলেছেন শিক্ষক চাকরি প্রার্থীরা। ২০১৯-এ কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তার মধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। একসময় আন্দোলনকারীদের যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা চাকরি নিয়ে কেটে পড়েছেন। আন্দোলন করতে করতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা শিল্পমন্ত্রী ইডির হেফাজতে চলে গেলেন। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তল্লাশির পর তল্লাশি করছে ইডি। আদালতে মামলা চলছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, 'এত কিছুর পরও আমরা এখনও রাস্তায় বসে আছি। শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছি। আর কত দিন এভাবে চলবে?' শুভদীপ মান্না বলেন, 'চার-চারবার মুখ্য়মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২৭ মার্চ ২০১৯, তারপর ১০ অগাস্ট ২০২১, ৩ মে ২০২২, গত রবিবারও বলেছেন কেন বঞ্চিতরা নিশ্চয় ন্যায়বিচার পাবে না।' সাধারণ মানুষকে পাশে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন শুভদীপ।
প্রথম থেকেই এই আন্দোলনে আছেন রত্না বিশ্বাস। তিনি বলেন, 'দেখুন আমরা আন্দোলনে যখন নেমেছি সফলতার জন্য নেমেছি। দিন বড় সংখ্য়া নয়। নিয়োগপত্র না পেলে তা নিয়ে ভাবছি না।' শুভদীপের কথায়, 'আমরা শারীরিক, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের অর্ধাহারে কাটছে। আমাদের বয়সও নেই প্রায়। আমাদের হকের চাকরি চুরি করে নেওয়া হয়েছে, বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কুকুরের মতো দফতরে দফতরে ঘুরে দুর্নীতির প্রমান দিয়েছি, তারপরও মুখ্যমন্ত্রী বলছেন জানি না।'
৫০০ দিনটা যে তাঁদের কাছে আরও একটা সংখ্যামাত্র তা জানান দিচ্ছে আন্দোলনকারী প্রত্যেকেই। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় তাঁরা শুনেছিলেন টাকা না দিলে চাকরি হবে না। মুর্শিদাবাদের শহিদুল্লাহর কথায়, 'সারা রাজ্যে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। গ্রাম বাংলায় ধারনা তৈরি হয়েছে টাকা না দিলে চাকরি হবে না। টাকার মাধ্যমে চাকরি বিক্রি হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ও শুনেছিলাম টাকা না দিলে চাকরি হবে না। আমরা ভেবেছিলাম মেধা দিয়ে চাকরি পাব। আমাদের চেনা বন্ধু যে ভালভাবে পাশ করতে পারেনি, সে এখন চাকরি করছে। একেবারে পরিকল্পিত স্ক্যাম।' শহিদুল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা, 'যাঁরা ৫০০দিন রাস্তায় বসে থাকতে পারে তাঁরা কি উঠে যাবে? যতদিন স্কুলে যেতে পারব না ততদিন বসে থাকব।'
আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি, সরকার অবিলম্বে নবম থেকে দশম শ্রেণির মেধাযুক্ত শিক্ষক প্রার্থীদের নিয়োগ করুক। সামগ্রিক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি চাইছেন অবস্থানকারীরা।