রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপক আছেন কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী নেই। সেই বিষয়টা এই বিশেষ প্রতিবেদনের প্রথম পর্বেই উল্লেখ করা হয়েছিল। মূলত ইকোনমিক্স ও কমার্সে কোটি কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে সাধারণের অর্থ অধ্যাপকদের বেতন দিতে বেরিয়ে যাচ্ছে অথচ ক্লাস নেওয়ার প্রয়োজনই পড়ছে না। তবু বিকল্প ভাবনা দেখা যাচ্ছে না উচ্চ শিক্ষা দফতরের। এদিকে কলেজগুলিতে ভয়ঙ্কর ড্রপ আউটের ঘটনাও ঘটছে। তাতেও কোনও হেলদোল নেই সরকারের।
বীরভূমের লাভপুরের শম্ভুনাথ কলেজে প্রথম সেমিস্টারে রেজিস্ট্রেশন করা ৯০০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ১৫০ জন সেকেন্ড সেমিস্টারে ফর্ম ফিলাপ করেনি। বোলপুর কলেজের হালও একই। তবে শুধু এই দুই কলেজে নয়, রাজ্যের বেশিরভাগ কলেজেই ড্রপ আউট ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। শিক্ষামহলের মতে, এই ড্রপ আউট প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, স্নাতক সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যই থাকছে না একটা বড় অংশের ছাত্র-ছাত্রীর।
উচ্চশিক্ষায় এই ড্রপ আউটের নানা কারণ দেখতে পাচ্ছে শিক্ষামহল। শিক্ষাজগতের মতে, উচ্চমাধ্যমিক এখন আর স্ক্যানারের কাজ করে না। যে বিশাল শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করে তাঁদের সবার ক্যাপাবিলিটি থাকে না স্নাতক হওয়ার। আরেকটা অদ্ভুত কারণের কথাও বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ অধ্যক্ষ। তাঁর মতে, প্রথম সেমেস্টারে স্কলারশিপ পাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। নানা ধরনের স্কলারশিপ আছে। পকেটে পয়সা আসছে। রিনিউ হতে গেলে ভাল নম্বর লাগবে। সেটাও কঠিন বিষয়। অর্থাৎ ড্রপ আউট। এছাড়া পৃথক ডিগ্রি না করতে পারলেও স্নাতক পড়া চলাকালীন একাধিক ডিপ্লোমা কোর্স করছে ছাত্র-ছাত্রীরা। কেউ নার্সিং কোর্স করছে, কেউ আইটিআই বা জব ওরিয়েন্টেড কোর্স করছে। সাধারণ প্রথাগত শিক্ষায় যে পেট ভরবে না তা মনে করছে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী। সেক্ষেত্রেও মাঝপথেই টা-টা-বাই-বাই।
উচ্চশিক্ষার হাল বোঝাতে গিয়ে কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজের অধ্যক্ষ ড. কার্তিক সামন্ত শুনিয়েছেন তাঁর কলেজের পড়ানোর কাহিনী। গত ১০ বছর ধরে প্রতিটি ক্লাসে গিয়ে আবেদনপত্র বা চিঠি লেখানো শেখান চন্দ্রপুরের অধ্যক্ষ। ড. কার্তিক সামন্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'কেমন করে আবেদনপত্র লিখতে হয় তা আমি শেখাই। গত ১০ বছর ধরে প্রতিটি ক্লাসে গিয়ে আবেদনপত্র বা চিঠি লেখা শেখাই। সপ্তম শ্রেণিতে যা শেখানো হত। সেই চিঠি লেখা শেখাই স্নাতক স্তরে। শেখানোর পর পরীক্ষা নিই, আমি নিজেই খাতা দেখি। তাতেও ১৫০ জন ছাত্রের মধ্যে মাত্র ৬০ ছাত্র ঠিক লিখেছে।'
শিক্ষামহলের বক্তব্য, এসএসসি পরীক্ষা নিয়মিত হওয়া খুবই জরুরি। পাশাপাশি দুর্নীতি-মুক্ত নিয়োগের পক্ষে তাঁরা সওয়াল করেছেন। শিশু শিক্ষা, প্রাথমিক স্তর থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে নানা সরকারি প্রকল্প চালু রয়েছে। নানা প্রকল্পের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড় বাড়লেও উচ্চশিক্ষায় ড্রপআউট কিন্তু আটকানো যাচ্ছে না। এদিকে নয়া শিক্ষানীতি, চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু হতে চলেছে। আদৌ উচ্চশিক্ষার হাল কি ফিরবে তা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষামহল।