Success Story Of Bengal Uday Kumar News: প্রতিবন্ধতাকে কাটিয়ে নিজেকে প্রমাণের এ এক দীর্ঘ লড়াই! অবশেষে বিরাট সাফল্য অর্জন করে তাক লাগিয়ে দিল বেলঘরিয়ার উদয় কুমার। ইচ্ছাশক্তি সুদৃঢ় হলে যে কোন প্রতিবন্ধতাকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব তা তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। উদয়ের ‘জীবন জার্নি’ সকলের মত অবাক করবে আপনাকেও। শারীরিক অক্ষমতাকে উপেক্ষা করে ৭,৮০০ বর্গফুট উচ্চতায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন। অসাধ্য সাধন করে দৃষ্টান্ত গড়েন। এবার স্বয়ং রাষ্ট্রপতির হাত থেকে তেনজিং নোরগে পুরষ্কারে সম্মানিত হয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বছর ৩৬-এর উদয়।
ট্রেন দুর্ঘটনার স্বীকার উদয়ের মনের জোরকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তামাম ভারতবর্ষ। শরীর সঙ্গ না দিলেও মানসিকভাবে প্রচন্ড দৃঢ় তিনি। নিজেকে তৈরি করতে অনেকগুলি দিন সময় লাগলেও অবশেষে তিনি নিজেকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। উদয় আজ হাজারো মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম। ক্রাচ হাতে নিয়েই পশ্চিম সিকিমের মাউন্ট রেনক (১৬,৫০০ ফুট) এবং আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো (১৯,৩৪১ ফুট) আরোহণ করে বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেন তিনি। পরিবার বলতে তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান। তাঁদের দায়িত্বও উদয়ের কাঁধে। আর্থিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, তিনি তার আবেগকে বাঁচিয়ে রেখে আজ সমাজের কাছে এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছেন।
উদয় কুমারের সাহসিকতার প্রশংসা শোনা যায় স্বয়ং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর গলাতেও। তেনজিং নোরগে পুরস্কারে ভূষিত করে মুর্মু সোশ্যাল মিডিয়ায় উদয়ের অদম্য এই সাহস ও কৃতিত্বের প্রশংসাও করেছেন। সামান্য বেতনের চাকরি করে সংসার চালিয়ে এখন উদয় স্বপ্ন দেখেন এভারেস্ট জয়ের। রেড রোডের ম্যারাথন হোক অথবা গোয়ার ম্যারাথনের ইভেন্ট সকলের নজর কেড়েছে কৃত্রিম পা লাগানো এই তরতাজা যুবকটি। লক্ষ্য খ্যাতি অর্জন নয়, সবার মত নিজেকে প্রমাণ করা।
বিহারের উদয় কুমার বর্তমানে চাকরিসূত্রে বেলঘরিয়ায় থাকেন। মাত্র সাড়ে আট হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেই দিন চালান স্ত্রী ও ছেলে মেয়ের সঙ্গে। বরাবরই খেলাধুলার প্রতি অগাধ ভালবাসা। হঠাৎ করে ২০১৫ সালের এক ট্রেন দুর্ঘটনা মুহুর্তেই সবটা বদলে দিয়েছিল তখন বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান। দীর্ঘ এক বছরের চিকিৎসায় প্রাণটা বাঁচলেও বাদ পড়ে একটি পা। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে উদয়ের। তখন থেকেই শুরু লড়াই। বেঁচে থাকার লড়াই, সবার মত নিজেকে প্রমাণ করার লড়াই।
বরাবরই অফিসের সহকর্মীরা উদয়কে মনের জোর দিয়েছেন। স্ত্রী’র থেকেও মিলেছে সাপোর্ট। ভাড়া বাড়িতে থাকলেও উদয়ের লক্ষ্য অলিম্পিক। কৃত্রিম পা লাগিয়ে চাকরির পাশাপাশি জোর অনুশীলনও চালাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তিনি মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে সামিল হতে চেয়ে শুরু করে দিয়েছে ট্রেনিং। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি মাঝে মধ্যেই আপলোড করেন কৃত্রিম পায়েই ট্রেকিং এর রোমহর্ষক কিছু ভিডিও। যা দেখলে অবাক হতে হয়।
উদয় কুমার জানিয়েছেন, ‘এখনও পর্যন্ত তিনি ৫৫ টির বেশি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। পরের লক্ষ্য এভারেস্ট অভিযান। তবে সামান্য বেতনের কারণে মাঝে মধ্যে পিছিয়ে পড়তে হয় তাকে। সেই সঙ্গে প্রবল আত্মবিশ্বাসী উদয় জানিয়েছেন, ‘অর্থের সংস্থান হলে মাত্র এক বছরেই অসাধ্য সাধন করবেন তিনি’। উদয়ের এই জীবনযুদ্ধ প্রতি মুহুর্তে মনে করিয়ে দেয় এভাবেও ইচ্ছেপূরন করা সম্ভব। তিনি বলেন, “ম্যারাথন দৌড়ের প্রতি ভালোবাসা আমাকে উঠে দাঁড়াতে শিখিয়েছে, আর এভারেস্ট জয় আমাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগাবে’। উদয় কুমার সাহস, শক্তির উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন সকলের কাছে। ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় হলে যে প্রতিবন্ধতাকে কাটিয়ে ওঠা যায় তা প্রমাণ করেছেন উদয় কুমার।