প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবন থেকে দিন কয়েকের ছুটি নিন। কলকাতার কাছেই কোলাহলমুক্ত অপরূপ এই তল্লাটে ঝটিকা সফর সেরে আসুন। তিলোত্তমা মহানগরীর কাছেপিঠের এই বেড়ানোর জায়গা মন-প্রাণ ভরিয়ে দেবে। শহরের কোলাহল থেকে দিন কয়েকের জন্য স্বস্তি নিতে সুন্দরবনের (Sundarban) এই জায়গা একেবারে পারফেক্ট চয়েজ।
শান্ত-নিরিবিলি ঝড়খালি (Jharkhali)। সুন্দরবনের এই এলাকার জুড়ি মেলা ভার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এই এলাকার ম্যানগ্রোভের (Mangrove) জঙ্গল সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া সহ নানা ধরনের গাছে ঠাসা। একদিকে নদী এবং অন্যদিকে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল যেন কোলে বেঁধে রেখেছে ঝড়খালিকে। ঝড়খালি থেকে গোটা সুন্দরবন চক্কর কাটতে পারেন লঞ্চে চেপে। দারুণ এক অভিজ্ঞতার স্বাদ মিলবে।
ঝড়খালিতে কী দেখবেন?
ঝড়খালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল এখানকার বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র। সাধারণত সুন্দরবনের জঙ্গলে কোনও বাঘ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা কোনওভাবে আহত হলে তাদের উদ্ধার করে আনা হয় এই ঝড়খালিতে। সুশ্রূষার পর তাদের আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঝড়খালি বেড়াতে গেলে পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হল এই বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র। সপ্তাহে ৬ দিন এই বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্রটি খোলা থাকে। এখানে বাঘের পাশাপাশি ঘেরা জলাশয়ে দেখা মেলে সুন্দরবনের কুমীরেরও। সংরক্ষিত এই এলাকায় চিতল হরিণও দেখতে পাবেন।
আরও পড়ুন- কলকাতা থেকে সকালে বেরিয়ে সন্ধেয় ফিরুন, কোলাহলহীন নদীপাড়ে আরাম পাবে মন
ঝড়খালিতে থেকে গোটা সুন্দরবন ঘুরে নিতে পারেন। একদিকে মাতলা নদী ও অন্যদিকে রয়েছে বিদ্যাধরী নদী। আর নদী পাড়ে রয়েছে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। এককথায় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। জেটিঘাট থেকে সুন্রবনের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ঘুরে দেখার জন্য লঞ্চ বা বোট পেয়ে যাবেন। সুন্দরবনের একটা বড় অংশ দেখার ইচ্ছে থাকলে ভোর-ভোর বেড়িয়ে পড়ুন। তবে সব জঙ্গল লাগোয়া নদীর খাঁড়িতে পর্যটকদের ঢোকা নিষিদ্ধ। সেখানে একমাত্র বনদফতরের কর্মীরাই যেতে পারেন। সাধারণ পর্যটকদের ক্ষেত্রে এতল্লাটে বেড়ানোর ক্ষেত্রে খানিকটা বিধি-নিষেধ রাখতেই হয়েছে। তবে তা অবশ্যই পর্যটকদের সুরক্ষার স্বার্থেই।
আরও পড়ুন- পাহাড়ঘেরা গ্রামের বুক চিরেছে নদী, উত্তরবঙ্গের অসাধারণ এপ্রান্ত অনেকেরই অজানা!
কপাল ভালো থাকলে লঞ্চ বা বোটে ঘুরতে ঘুরতেই দেখা পেতে পারেন দক্ষিণরায়ের। নদী পাড়ে ফি সময় জল খেতে আসে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। কিংবা সুন্দরবনের নদী টপকে এক জঙ্গল থেকে আর এক জঙ্গলে সাঁতরে যাওয়া অবস্থাতেও দেখা মিলতে পারে বাঘের। এছাড়াও ঝড়খালি থেকে দেখে আসতে পারেন বঙ্গোপসাগরের মোহনাও।
ঝড়খালি যাবেন কীভাবে?
কলকাতা থেকে সড়কপথে ঝড়খালি যেতে মেরেকেটে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। তবে রেলপথে গেলে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় পৌঁছে আপনাকে ক্যানিং লোকাল ধরতে হবে। ক্যানিং স্টেশনের বাইরে থেকে ঝড়খালি যেতে ছোট গাড়ি বা বাস পেয়ে যাবেন। ঘণ্টাখানেকের পথ পেরোলেই ঝড়খালিতে পৌঁছে যাবেন।
আরও পড়ুন- পাহাড়ের ঢালে ছবির মতো সাজানো কোলাহলহীন গ্রাম! গেলে ফিরতে মনই চাইবে না
ঝড়খালিতে থাকার জায়গার বন্দোবস্ত কী?
ঝড়খালিতে রাজ্য পর্যটন বিভাগের রিসর্ট রয়েছে। এছাড়াও একাধিক হোটেল ও কটেজও রয়েছে। সেগুলিতে থাকা-খাওয়ার খরচও নাগালের মধ্যেই। এসি-নন এসি দুই ধরনের ঘর পেয়ে যাবেন। পিক সিজনে গেলে আগে থেকে হোটেল-রিসর্ট বুক করে যাওয়া ভালো। অফ সিজনে অবশ্য সেই ঝক্কি কম। ঝড়খালি পৌঁছেও ঘর বুক করতে পারেন।
ঝড়খালির কয়েকটি হোটেল ও হোম-স্টের যোগাযোগ নম্বর:
আকাশ হোম স্টে: 8436457851
মা তারা টুরিস্ট লজ: 9732895285
আরণ্যক হোম স্টে: 8509510978
সুন্দর রিসর্ট: 8335067810
আরও পড়ুন- কলকাতা থেকে সকালে বেরিয়ে সন্ধেয় ফিরুন, কোলাহলহীন নদীপাড়ে আরাম পাবে মন