নানা মহলের চাপের মুখে পড়ে গতকাল, অর্থাৎ বুধবার, কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ লোকসভায় ঘোষণা করেন, এবার থেকে বাংলা ভাষায়ও অনুবাদ করা হবে সুপ্রিম কোর্টের রায়। এবং তা তুলে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে। এর আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, চিরাচরিত প্রথা ভেঙে চলতি মাস থেকেই ইংরেজির পাশাপাশি বেশ কিছু ভারতীয় ভাষাতেও পাওয়া যাবে সুপ্রিম কোর্টের সমস্ত রায়, কিন্তু সেই তালিকায় ছিল না বাংলা, যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয় একাধিক মহলে।
ভাষার তালিকায় বাংলার অন্তর্ভুক্তির সমর্থনে একজোট হয়ে বিধানসভায় প্রতিবাদ জানায় শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষই। এই প্রসঙ্গে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বাংলা পৃথিবীর মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। এশিয়ার দ্বিতীয়। আমরা আশা করব সুপ্রিম কোর্ট যে রায় অনুবাদ করবে, তাতে বাংলা অন্তর্ভুক্ত হবে।"
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর
বুধবারের ঘোষণার প্রেক্ষিতে বাংলা ভাষাভিত্তিক সংগঠন 'বাংলা পক্ষ'-র তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "সুপ্রিম কোর্ট রায়ের কপি ইংরেজির সাথে নানা ভাষায় ওয়েবসাইটে আপলোড করার সিদ্ধান্ত...সাধুবাদ যোগ্য। মানুষ নিজের ভাষায় রায় পড়তে পারবেন। প্রথম তালিকায় ছিল ৬ টি ভাষা। অদ্ভুতভাবে বাদ পড়েছিল বাংলা। আমরা বাংলা পক্ষর তরফে প্রতিবাদ করি। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের সাথে সাথে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে গণ ইমেল করি। প্রতিবাদ করে চিঠি লেখেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। প্রতিবাদ করেন মুখ্যমন্ত্রীও। এ জয় বাঙালির। কিন্তু বাংলার দাবিতে আন্দোলন করতে হলো, এটাই লজ্জার।"
মোটামুটি একই সুর শোনা গেল সুজন চক্রবর্তীর গলায়। তাঁর বক্তব্য, "তালিকায় বাংলা না থাকার বিষয়টি নিয়ে আমি এবং (আব্দুল) মান্নান সাহেব আলোচনায় বসি। তারপর রাজ্য সরকারের সঙ্গেও আলোচনা হয়। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ না হওয়ায় আমরা যৌথভাবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে চিঠি লিখি। তাতে যে ফল পাওয়া গেছে, এটা আনন্দের বিষয়। পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা শুধু নয়, বাংলা এমন এক ভাষা যাতে দুটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত রয়েছে।" উল্লেখ্য, তালিকায় বাংলার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে সুজনবাবুর সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজ্যের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক।
বাংলা, তামিল, এবং উর্দুর অন্তর্ভুক্তির ফলে মোট নয়টি আঞ্চলিক ভাষায় এখন থেকে অনূদিত হবে সুপ্রিম কোর্টের রায়। ভাষাগুলি হলো - অসমিয়া, বাংলা, হিন্দি, কন্নড়, মারাঠি, ওড়িয়া, তামিল, তেলুগু এবং উর্দু। বুধবার রবিশঙ্কর প্রসাদ একথাও জানান যে আঞ্চলিক ভাষায় রায় অনুবাদে সহায়তা করতে 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স' প্রয়োগ করার কথাও ভাবা হয়েছে।