পাকা কথা না হওয়া পর্যন্ত আজ অবধি সব নেতা-নেত্রীই বলেছেন দলেই আছি। সে একসময়ের তৃণমূলে থাকা শুভেন্দু অধিকারী হোক বা কংগ্রেস বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস। ২০২০, ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুর কলেজ মাঠে অমিত শাহর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। বায়রন তো বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আগেই তৃণমূলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে নেন। দলদবলের পর নানা যুক্তি তো রয়েছেই। তবে তার আগে আকাশে-বাতাসে দলবদলের নানা কথা ভাসতে থাকে। তৈরি হতে থাকে পরিবেশ। বুধববার ক্যামাকস্ট্রিটে কী সেই ক্রোণোলজির একাংশ ধরা পড়ল? সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী ও কংগ্রেসের কৌস্তভ বাগচি একই ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে পাশাপাশি হাঁটতেই বঙ্গ রাজনীতিতে ফের তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে। তাহলে কী এটাই কৌস্তভের বিকল্প রাজনীতি? তৃণমূল কংগ্রেসকে হটাতে সবাইকে এক জোট হতে আহ্বান জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচি। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের সুসম্পর্ক তৈরি হওয়ায় কাঠগড়ায় দাঁড় করেছিলেন দলীয় নেতৃত্বকেই। তারপরই তাঁকে খোয়াতে হয়েছে দলের মুখপাত্রের পদ। এবার আর মুখে বচন নয়, শুভেন্দুর সঙ্গে পথেই নামলেন কৌস্তভ।
সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপিকে হটাতে ইন্ডিয়া জোটে এক ছাতার তলায় এসেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। সনিয়া গান্ধি ও রাহুলের সঙ্গে একমঞ্চে পাশাপাশি বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক। হাসিমুখে ভাববিনিময় করতে তাঁদের দেখা গিয়েছে। রাহুল গান্ধির ভূয়সী প্রশাংসা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৌস্তভ কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্বের সখ্যতা নিয়ে বারে বারে প্রশ্ন তুলেছেন। এবার বঙ্গ বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে পথে পাশাপাশি হাঁটলেন কৌস্তভ। রাজনৈতিক মহলের মতে, কৌস্তভ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে কী বোঝাতে চাইলেন? কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতার সঙ্গে মিছিলে অংশ নিয়ে তিনিও বিশেষ বার্তা দিলেন দলীয় নেতৃত্বকে। দিল্লিতে মোদিকে হঠাতে কংগ্রেস-তৃণমূল হাত মেলাতে পারলে এখানে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিজেপিও অচ্ছুৎ নয়। তবে তাঁর মিছিলে অংশ নেওয়াকে ব্যক্তিগত বলেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। কৌস্তভের বক্তব্য, 'এই মিছিলে কোনও দলের পতাকা নেই। মমতা মন্ত্রীসভার কোনও সদস্য এই মিছিলে থাকলেও তিনি হাঁটতেন। ব্যক্তি ও আইনজীবী কৌস্তভ ন্যায্য দাবিতে যে কারও সঙ্গে মিছিলে অংশ নিতেই পারে।'
কয়েকদিন আগেই বিজেপিতে যোগদানের প্রশ্নে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে কৌস্তভ বলেছিলেন, 'আমি এখনও সেই সমস্ত বিষয় ভাবিনি। আমি যা করি স্পষ্ট ভাষায় বলি। আমি লুকিয়ে চুরিয়ে কোনও কিছুই করব না।' তার কিছু দিন পরে কৌস্তভের মুখে শোনা গিয়েছিল মমতা সরকারকে হঠাতে বাংলায় বিকল্প রাজনীতির কথা। বুধবার গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারীদের মিছিলে শুভেন্দুর সঙ্গে পাশাপাশি পথে নেমে গেলেন কৌস্তভ। শুধু তাই না, দুজনের হাতেও একই প্ল্যাকার্ড ছিল। মমতার হাসিমুখের ছবি। তাতে লেখা রয়েছে আই লাফ, ইউ ডাই। এক ফ্রেমে শুভেন্দু ও কৌস্তভ, বঙ্গ রাজনীতিতে জল্পনা থেমে থাকার কথাও নয়। তাহলে কি আগামি দিনে আরও এমন দৃশ্য দেখা যাবে বাংলায়? প্রশ্ন একটাই সেক্ষেত্রে কি পতাকার রংও একই থাকবে? এনিয়েই বঙ্গ রাজনীতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।