২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২০-এ নবান্ন অভিযান করেই নির্বাচনের টেম্পো তুলেছিল গেরুয়া শিবির। সামনের বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ফের নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপি। তবে এরইমধ্যে গেরুয়া বাহিনীর বক্তব্য, মমতা সরকারের মেয়াদ ২০২৪ পার করবে না। কেন তৃণমূল সরকার আর ক্ষমতায় থাকবে না, তার ব্যাখ্যাও দিচ্ছে বিজেপি শিবির। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে।
মহারাষ্ট্রে শিবসেনার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এখন ইতিহাস। এরপর ঝাড়়খন্ড, বাংলার কথা বলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও পরবর্তীতে বিহারে উলোট-পূরাণ ঘটে যায় বিজেপি-জেডিইউ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে। বিহার সরকার থেকে হটে যায় বিজেপি। জেডিইউ-আরজেডি জোট করে ও অন্য অবিজেপি দলের সমর্থনে সরকার গঠন করে। কিন্তু তা সত্বেও বাংলায় তৃণমূল সরকারের পতনের দিন গুনছে বঙ্গ বিজেপি। ১৫ মাসের মমতা সরকারকে আন্দোলনে নাজেহাল করে দিয়েছেন বলে মনে করছে বিজেপি।
বিজেপির ধারনা, রাজ্য় যে ভাবে ঋণের ভারে জর্জরিত, তাতে তৃণমূল সরকারের নাজেহাল অবস্থা। সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী থেকে উদ্ধার পেতে নাভিশ্বাস উঠবে। তারওপর রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। বিজেপি মনে করছে, লাগামছাড়া দুর্নীতি ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতির জন্য এই সরকারের স্বাভাবিক পতন ঘটবে। বিরোধী দলনেতা মাঝে-মধ্য়েই দাবি করছেন, ২০২৪-এ এরাজ্য়ে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে হবে।
এর আগে তৃণমূল সরকার পড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল গেরুয়া শিবির। এবার বাংলা সরকারের স্বাভাবিক পতন ঘটবে বলে প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। এখনও রাজ্য সরকারের মেয়াদ দেড় বছর পার হয়নি, তাছাড়া বিধানসভা নির্বাচনে ২১৩টি আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর কয়েকমাস ভয়ঙ্কর সাংগঠনিক ডামাডোল চলেছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। আপাতদৃষ্টিতে তা কিছুটা কমেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। হাঁসখালি, বগটুইয়ের ইস্যু নিয়ে ফের বঙ্গ রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপি। তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের গ্রেফতারের পর মনোবল আরও বাড়ে বিজেপির। এবার সরকারের পতনের আশা করছেন দলের নেতৃত্ব। আগামী ২০২৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচন, তারপর ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের মতে, তার আগেই রাজনীতির ময়দান গরম করতে তৎপর বিজেপি।
২০০৬-এ বিপুল সংখ্য়ক বিধানসভার আসনে জয় পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বামফ্রন্ট সরকার। পরের বছর তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনে ক্ষমতাশালী বাম সরকারের দফারফা অবস্থার শুরু। তখন তৃণমূল কংগ্রেসে মমতার অন্য়তম সহযোগী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এবার ক্ষমতায় মমতা, বিরোধিতায় শুভেন্দু। দেড়বছর পার না হওয়া তৃতীয় তৃণমূল সরকারকে নানা ভাবে চাপে ফেলতে সচেষ্ট বিজেপি। তখন তৃণমূলের অস্ত্র ছিল জমি-আন্দোলন, এবার মূলত নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির অভিযোগ বিজেপির হাতিয়ার। ২০২৪-এর আগে তৃণমূল সরকারের আদৌ কী পতন ঘটবে? নাকি তা শুধুই বিজেপির রাজনৈতিক গিমিক? অভিজ্ঞমহমলের মতে, রাজনীতিতে টিকে থাকতে গেলে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। নতুন নতুন তত্বেরও আবিস্কার ঘটে। অপেক্ষা ২০২৪।