সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস বিপুল ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। সেখানে বিজেপি প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও এই জয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে সাগরদিঘির পর কি বিরোধীরা আগামী নির্বাচনেও এই পথেই হাঁটতে শুরু করেছে? এই মডেলই কি অনুসরণ করতে চলেছে? রাজনৈতিক মহলে এসব প্রশ্ন তো উঠছেই। তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য বাংলার বর্তমান রাজনীতির ক্ষেত্রেও বিশেষ ইঙ্গিত বহন করছে বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের। বাংলার ভবিষ্যৎ রাজনীতির অভিমুখ সাগরদিঘি মডেলেই চলবে কিনা সেটাই এখন লক্ষ্য করার বিষয়।
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে গণনার আগের দিনও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, 'এই ভোটে যেই জিতুক তৃণমূল কংগ্রেস হারবেই।' উপনির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতেই তোলপাড় হয়ে যায় রাজ্য-রাজনীতি। বামেদের সমর্থনে শুধু যে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়েছে তাই নয়, বিজেপি প্রার্থীর ভোটপ্রাপ্তিও ব্যাপক কমে গিয়েছে। যথারীতি বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট ট্রান্সফারের অভিযোগ ওঠে। অথচ এই কেন্দ্রে বেশ কয়েকবার প্রচারে গিয়েছে শুভেন্দু-সহ বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তবু যেই জিতুক তৃণমূল নয়, তাঁর ভবিষ্যৎবাণী মিলে যাওয়ায় অঙ্ক কষতে বসেছে বাংলার রাজনৈতিক মহল। তাহলে এ কি বাংলার ভোট রাজনীতিতে নতুন খেলা শুরু হয়ে গেল? চর্চা অব্যাহত।
আরও পড়ুন- ‘কেন্দ্রের প্রকল্পে স্টিকার সেঁটে নিজের বলে চালাচ্ছে রাজ্য’, মমতাকে তুলোধনা শুভেন্দুর
তবে সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফলই যে শেষ নয় তা-ও পরে বুঝিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিমত, মানুষ একত্রিত হয়ে গিয়েছে। শুধু ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন সাগরদিঘিতে পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিল। বাংলার আক্রান্ত রাজনৈতিক দলগুলি নো ভোট টু মমতা করুক, তারপর নির্বাচকরা সিদ্ধান্ত নেবে। এটাই আবেদন শুভেন্দুর। বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাহলে কি মমতার শাসনের অবলুপ্তি ঘটাতে বিশেষ কৌশল নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি? এই আলোচনাই ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
সারদা, নারদা কেলেঙ্কারি, সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত, গরুপাচার-কয়লাপাচার নিয়ে ইডি-সিবিআইয়ের হম্বিতম্বি। তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব গ্রেফতার। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, তবুও খুব একটা যে আশার আলো দেখছে না বিজেপি তা শুভেন্দুর বেশ কিছু মন্তব্যে স্পষ্ট। এই মুহূর্তে আর একা বঙ্গ বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে না গেরুয়া শিবির। দুর্নীতির তদন্তে একাধিক তৃণমূল নেতৃত্ব, সরকারি আধিকারিক গ্রেফতার হলেও বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহল পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। তাঁদের লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলেই, অভিমত।
আরও পড়ুন- ‘মন্দিরের পুরোহিত চোর হলে দেবতা অপবিত্র হয় না’, মমতার ঢাল এবার শোভনদেব
সামনেই গ্রামপঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপর লোকসভা ভোট। তার আগে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য। ভোট রাজনীতিতে বঙ্গ বিজেপি আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না বলেই কি মানুষের জোটের কথা শোনা যাচ্ছে পদ্মশিবিরের নেতৃত্বের গলায়? প্রশ্ন উঠছেই। সাগরদিঘি মডেলে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে তৃণমূল কংগ্রেস কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে সেদিকেই নজর রয়েছে অভিজ্ঞ মহলের।