বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পেরনোর পরেও ওই এলাকার বাসিন্দাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। ঘর ভেঙেছে, বক্সখাট-সহ যাবতীয় আসবাব ভেঙে খান-খান হয়ে যাওয়ায় চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না তাজমিরা বিবি। ২৪ ঘণ্টা আগেই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছেন তাজমিরা। দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের সময় সামনের এই বাড়িতেই ছিটকে পড়েছিল বাজি কারখানার ছাদ-দেওয়াল। এদিকে, বাজি কারখানার বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯।
বাবা সফিজউদ্দিন আলি ও ছেলে সাহাবুদ্দিন আলি জনমজুরের কাজ করে। ধার-দেনা করে একতলা দালান বাড়ি করেছিলেন। দত্তপুকুরের মৌজপুলে বাজি কারখানার বিস্ফোরণে কপাল পুড়েছে এই পরিবারের। তবে কোনওক্রমে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী তাজমিরা বিবি। একদিকে পরপর বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ, কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও ৬ বছরের মেয়ের চিৎকার। শেষমেশ মেয়েকে কোলে নিয়ে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণরক্ষা করেছেন। তাজমিরা বিবির কান্না এখনও থামছে না। তাঁর চোখে মুখে-মুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। এই যেন ঘটনাটি ঘটেছে।
উল্টোদিকের বাজি কারখানায় এই বাড়ির কেউ কাজও করত না। শুধু এই বাড়িটার অবস্থান বাজি কারখানার পরে ৬ ফুটের রাস্তার উল্টোদিকে। এই কারখানা নিয়ে তাঁরা এর আগে প্রতিবাদও করেছিলেন। তাতে কোনও কাজ হয়নি। তাজমিরা বিবি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'গতকাল, রবিবার ওই সময় জোগাড়ের কাজে গিয়েছিলেন আমার শ্বশুর ও স্বামী। শাশুড়ি গিয়েছিলেন মাঠে। বাড়িতে ছিলাম আমি ও আমার ৬ বছরের মেয়ে। আমি ছাদে কাপড় মেলে নীচে নামছিলাম। মেয়ে নীচে সামনের ঘরেই ছিল। হঠাৎ আমার মেয়ে তীব্র চিৎকার করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তখন মুহূর্মুহু বিকট শব্দ। কালো ধোঁয়া। কোনওরকমে মেয়েকে কোলে নিয়ে খোলা জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পাশের পাড়ায় চলে যাই। বিস্ফোরণে ভেঙে যাওয়া বাড়ির অংশ যে ঘরে পড়েছিল মেয়ে ওই ঘরেই ছিল। ঘর তো ভেঙেছেই। ঘরের বক্সখাট, সেলাই মেশিন-সহ যাবতীয় আসবাব সরঞ্জাম-সহ সমস্ত কিছু ভেঙে চুরমার। ধার দেনা করে বাড়ি করেছিলেন শ্বশুর ও স্বামী। এবার কি হবে?'
মাত্র ১৫ দিন হয়েছে এই বাড়িতে এসেছিলেন তাজমিরা বিবিরা। তারপর বেআইনি বাজি কারখারানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় হঠাৎই তাঁরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন। তাজমিরা বলেন, 'এই বাড়ি থেকে একটু দূরে প্লাস্টিকের মোড়া চালের ঘরে আমরা বাস করতাম। বহু কষ্ট করে এই বাড়ি করা হয়েছে। ১৫ দিন আগে এই বাড়িতে এসেছি। এখনও নতুন বাড়ির ঘরের কাজ বাকি। এরইমধ্যে বিস্ফোরণে ঘর ভেঙেছে, বক্স খাট, আলমারি, আলনা, সেলাই মেশিন, দরজা, ড্রেসিংটেবল সব শেষ। আবার মেয়েকে কোলে নিয়ে ঝাঁপ দিতে গিয়ে পায়েও আঘাত লেগেছে।' তাজমিরার প্রশ্ন, কে দেবে এই ক্ষতিপূরণ? কেন জনবসতি এলাকায় বেআইনি বাজির কারখানা? প্রশ্ন তুলেও কোনও জবাব মেলেনি তাজমিরাদের।