রিল লাইফে তাঁর চোখা চোখা সংলাপে দর্শকদের হাততালিতে হল কাঁপত। আর রিয়েল লাইফে তাঁর একটা সংলাপেই রাতারাতি বিতর্কের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাংলা সিনেমার একসময়ের সুপারস্টার তথা বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম তারকা মুখ তাপস পাল। ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব’ মন্তব্যের পর থেকেই টলিপাড়ার ‘সাহেব’কে অন্যচোখে দেখা শুরু বঙ্গবাসীর একাংশের। কিন্তু তাপস পাল এমন মন্তব্য করার মানুষই নন। ‘দাদার কীর্তি’র কেদারই হল আসল তাপস পাল। বাংলা সিনেমার দাপুটে হিরোর প্রয়াণে এমন কথাই জোর দিয়ে বললেন তাঁরই বাল্য বন্ধু প্রদীপ ঘোষ।
বন্ধুর মৃত্যুসংবাদে স্বভাবতই শোকে বিহ্বল প্রদীপ। আজ যেন পুরনো দিনের কথা তাঁর বেশিই মনে পড়ছে। স্মৃতির সরণি ধরে হাঁটে হাঁটতে তাপসের ছেলেবেলার বন্ধু প্রদীপ বললেন, ‘‘ও একটা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিল। বাজে কথা রটেছিল ওর সম্পর্কে। ও কিন্তু ঠিক তার উল্টো। দাদার কীর্তি সিনেমায় যে চরিত্রটি করেছিল ও, বাস্তবে ও একেবারে সেরকম মানুষ। খুব ভাল ছেলে ও’’। উল্লেখ্য, ‘দাদার কীর্তি’ ছবির হাত ধরে আর কখনই ফিল্মি কেরিয়ারে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাপসকে। রাতারাতি বাংলা সিনেপ্রেমীদের ‘নয়নের মণি’ হয়ে উঠেছিলেন তাপস।
দেখুন: তাপস পালের উত্থান-পতন! কেমন ছিল রাজনৈতিক কেরিয়ার?
(ভিডিও- উত্তম দত্ত)
আরও পড়ুন: প্রয়াত তাপস পাল, স্মৃতিচারণায় মুখ্যমন্ত্রী থেকে টলিউড
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন তাপস। বিরোধীদের উদ্দেশে আক্রমণ করতে গিয়ে ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব’ মন্তব্য করে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তাপস। এরপর ২০১৬ সালে রোজভ্যালিকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এরপর থেকেই কার্যত নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তাপস পাল। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সেভাবে কখনই প্রকাশ্যে দেখা যায়নি অভিনেতাকে। রাজনীতির ময়দানেও সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি বাংলা সিনেমার ‘সাহেব’কে।
(ভিডিও- উত্তম দত্ত)
আরও পড়ুন: প্রয়াত তাপস পালের কিছু বিরল ছবির অ্যালবাম
এরপরই ছেলেবেলার খুনসুটির কথা বলতে গিয়ে প্রদীপ জানালেন, ‘‘আমরা তখন প্যান্ট-জামাও পরিনি, তখন থেকে বন্ধু আমরা। একসঙ্গে খেলতাম, ফুলবল, রবারের বল খেলতাম, পুকুরে সাঁতার কাটতাম। আমার সাইকেল নিয়ে ও বাজারে ঘুরত। ও খেতে ভালবাসত খুব। শেষবার ওর সঙ্গে দেখা করতে ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলাম। তখন ও সিবিআইয়ের হাতে বন্দি’’।
তখন তাপস একেবারে ছোটো ছিলেন, সে সময় তাঁর বাড়িতে কাজ করতেন রেবা রায়। তাঁর স্মৃতিচারণায় উঠে এল তাপসের খাদ্যরসিকের কাহিনী। তিনি জানালেন, ‘‘ও ফুলকো লুচি, কুমরো-আলুর ঘ্যাঁট খেতে খুব ভালবাসত। বিকেলে মোগলাই খেত। খোকা বলে ডাকত ওর মা। ওর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতাম আমি। খুব ভাল, নম্র, ভদ্র ব্যবহার ওর। ও একটা কুকুর পুষেছিল। সেই কুকুরের মৃত্যুতে ও খুব খেঁদেছিল’’।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন