সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে খানিকটা 'অভিমানী' বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর হাত থেকে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির দুটি মামলা সরানো হয়েছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের একাংশ। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আশঙ্কা আস্তে-আস্তে নিয়োগ দুর্নীতির সব মামলাই হয়তো তাঁর এজলাস থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশে কলকাতার রাজপথে চাকরির দাবিতে আন্দোলরত বেকার তরুণ-তরুণীদের একটি অংশ বেশ হতাশ। তবে তাঁদেরই অন্য একটি অংশ কিন্তু সুপ্রিম নির্দেশের সমালোচনা করলেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচারের ধরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নিয়োগ দুর্নীতির কয়েকটি মামলা থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরানোর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। শুক্রবার কলকাতার মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে অবস্থানরত উচ্চ প্রাথমিকের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা হাতে পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। একাধিক পোস্টারে লেখা ছিল, বিচারপতি অভিজিৎবাবুকে ফেরত চাই। তাঁদের বক্তব্য, চাকরি বিক্রি মামলায় ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে শিরদাঁড়া সোজা রেখে লড়াই করে গিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের চাকরি গিয়েছে বলেও জানান তাঁরা। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তাঁরা কার্যত হতাশ বলে জানিয়েছেন।
যদিও এসএসসি-র আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিনিধি বীরভূমের শহীদুল্লাহ্ কিন্তু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচারের ধরন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। যোগ্যদের চাকরির ব্যবস্থা করার বদলে দুর্নীতি খুঁজতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বেশি মনোনিবেশ করেছিলেন বলে মত তাঁর। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে শহীদুল্লাহ্ বলেন, 'বঞ্চিত চাকরিপ্রর্থীদের বিষয়টিই বেশি ফোকাসে আসা উচিত ছিল। কিন্তু সেই জায়গায় দুর্নীতির বিষয়টিই বেশি ফোকাসে এসেছে। দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা করতেই হবে। এই সরকারের আমলে দুর্নীতি ছাড়া নিয়োগ হয়নি, এটা সত্যি। কিন্তু আমাদের চাকরির বিষয়টিতেও তো গুরুত্ব দেওয়া দরকার।'
আরও পড়ুন- বাকি মামলাও তাঁর হাত থেকে সরে যেতে পারে, আশঙ্কা খোদ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়েরই
তিনি আরও বলেন, 'বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের বঞ্চনার কথাই তুলে ধরেছেন। ওঁর মতো বিচারপতির মামলা থেকে সরে যাওয়াটা আমাদের কাছে একটা ধাক্কা। কিন্তু উনি দুর্নীতির উদঘাটন করতে গিয়ে যাঁরা দুর্নীতির শিকার হলেন তাঁদের দিকেই তাকালেন না। দুর্নীতির আগুনে যাঁরা পুড়ে ঝলসাচ্ছেন তাঁদের জন্য অনেক কিছু মুখে বললেও তাঁদের নিয়োগের জন্য লিখিত পর্যবেক্ষণ দিলেন না বা নিয়োগের ব্যবস্থাও করলেন না। এই জায়গায় ওঁর কাছে আমরা হতাশ হয়েছি। দুর্নীতির উদঘাটনের জন্য ওঁর প্রশংসা করতেই হবে। কিন্তু বঞ্চিতদের চাকরি দিতে উনি ঘুরেও তাকাননি। বিচার করার দিকেই ওঁর লক্ষ্য, বিচার পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টিতে ওঁর চেষ্টা নেই।'
যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে মামলা লড়ছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস সামিমরা। দিনের পর দিন মামলা চললেও সুরাহা না মেলায় তাঁদেরও খানিক সমালোচনা শোনা গেল শহীদুল্লাহের মুখে। তাঁর কথায়, 'আমাদের তিন হাজারেরও বেশি মামলা করা আছে। বিকাশবাবুরা বিষয়টি জেনেও আমাদের নিয়োগের দাবিটি বিন্দুমাত্র করেননি। কোন উদ্দেশ্যে তা করেননি সেটা জানি না। আমরা মামলা করতে গেলে আইনজীবীরা নিচ্ছেন, কিন্তু রায় কবে বেরোবে তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই বলছেন সব মামলার বিচার একসঙ্গেই হবে। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস সামিমরা পার্টির জন্য জান লড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আমাদের চাকরির ব্যাপারে কিছু বললেন না।'
আরও পড়ুন- ‘অভিজিৎবাবু ভগবান, তাঁকে ফেরত চাই’, পোস্টার হাতে বিক্ষোভ চাকরিপ্রার্থীদের
গ্রুপ-সি-গ্রুপ-ডি, প্রাইমারি-আপার প্রাইমারিদের চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছেন বাঁকুড়ার খাতড়ার বাসিন্দা মহাদেব দুলে। তিনি নিজেও তিনটি বিভাগে পাশ করে বসে আছেন। সুদূর খাতড়া থেকে কলকাতায় মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশ চাকরির দাবিতে ধর্নায় একপ্রকার নিয়ম করেই থাকেন তিনি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়োগ-দুর্নীতির কয়েকটি মামলা থেকে সরানো ইস্যুতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মহাদেব দুলে বলেন, 'আমাদের চাকরির বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হওয়াটায় যেন গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে। আমাদের চাকরির বিষয়টি সুনিশ্চিত করা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীও আমাদের কথা ভাবেননি। দুর্নীতি করে যাঁরা চাকরি পেয়েছে তাঁদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের কথা ওঁর মুখ থেকে শোনা যায়নি। চাকরির আশা দেখতে পাচ্ছি না। কিচ্ছু হচ্ছে না।'