পোস্টার রাজনীতি। জল মাপার রাজনীতি। পরস্থিতি বুঝে নেওয়ার রাজনীতি। ঘরে-বাইরে কৌশল। সম্প্রতি কলকাতার দুই প্রান্তে দুই ধরনের পোস্টার ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসে তোলপাড়। দুটি পোস্টারের মানে খুঁজে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল কংগ্রেসেও চলছে পোস্টারের বিষয়বস্তু নিয়ে কাটা ছেঁড়া।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতারের পর প্রকাশ্যেই নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছিল এই ধরনের কাজ সমর্থন করে না দল। একই দিনে পার্থকে মন্ত্রী ও দলের পদ থেকে অপসারণ, এমনকী দল থেকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্তের পর বলেছিলেন, 'ষড়যন্ত্র'। কীসের ষড়যন্ত্র? তাঁর জবাব ছিল, 'দলের সিদ্ধান্ত দেখে নিন।' এরপর গরুপাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হন বীরভূমের প্রতাপশালী তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। দক্ষিণ কলকাতায় কালীঘাট, হাজরা, রাসবিহারী চত্বরে পোস্টার পড়ল নতুন তৃণমূল কংগ্রেসের। যদিও তা দুটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে পোস্টার পড়েছিল।
রাজনৈতিকমহল ভাবতে শুরু করল নতুন তৃণমূল কংগ্রেস আবার সেটা কী? এই ভাবনা চলাকালীন ফের আর একটা পোস্টার কলকাতা কর্পোরেশন সংলগ্ন নিউমার্কেট চত্বরে। এই পোস্টারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সামনে রেখেই সিবিআইকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। শনিবারই আবার আসানসোলে যখন অনুব্রত মণ্ডলকে গরু চোর বলে স্লোগান চলছিল, তখন আরেক পক্ষ অনুব্রত মন্ডল জিন্দাবাদ বলে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকে। সরাসরি ময়দানেই এবার লড়াই। এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'দলের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব'।
রাজনৈতিক মহলের মতে, নতুন তৃণমূল কংগ্রেস সংক্রান্ত পোস্টারে লেখা ছিল-'আগামী ছয় মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল। ঠিক যেমন সাধারণ মানুষ চায়।' এই পোস্টারে অভিষেক ছাড়া কারও ছবি নেই। সঙ্গে ছিল দলের প্রতীক জোড়াফুল। ফিরহাদ হাকিম কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র।
কর্পোরেশন এলাকায় এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিকে সামনে রেখে পোস্টার পড়ল, 'সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে মমতাকে রোখা যাবে না।' রাজনৈতিক মহলের মতে, এই দুটি পোস্টার একেবারেই উদ্দেশ্যহীন হতে পারে না। কারও মদতেই হোক বা বিভ্রান্তি ছড়ানো হোক কোনও না কৌশলগত কারণে দুটি পোস্টার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
আরও পড়ুন- ‘আর ছাড় নয়, পঞ্চায়েতে অনিয়ম দেখলেই FIR’, জেলায়-জেলায় কড়া নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তৃণমূল ভবনে তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করার ঘোষণা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে গরুপাচার কাণ্ডে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়ান তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর আসানসোল আদালত চত্বরে অনুব্রত মণ্ডল জিন্দাবাদ ধ্বনি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক।
যখন পোস্টার পড়ছে ৬ মাস পরে আসবে নতুন তৃণমূল, অন্যদিকে তখন ডিসেম্বরে তৃণমূল উঠে যাওয়ার ডেটলাইন দিচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাহলে কি বাংলায় ফের কোনও নতুন দলের জল্পনা উসকে দেওয়ার পালা চলছে? এই চর্চায় মশগুল রাজ্য-রাজনীতি।
আরও পড়ুন- তুমুল অশান্তি উপনির্বাচনেও, ছাপ্পাভোট-বুথ দখলের অভিযোগ, একে অন্যকে দুষছে BJP-তৃণমূল
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আঁকড়ে ধরেই দল করতে চায় দলের একাংশ, তা নিউমার্কেটের পোস্টারেই স্পষ্ট বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল। রাজনৈতিক মহলের মতে, বাইরে দু'ধরনের পোস্টার দেখে নানা জল্পনা তৈরি হলেও অন্দরমহলের কৌশল যথাসময়ে স্পষ্ট হবে।