বামফ্রন্ট আমলেও কংগ্রেসের গড়পড়তা ভোট ছিল প্রায় চল্লিশ শতাংশ। তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে সেই ভোটে বড়সড় থাবা বসায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে খাতাই খুলতে পারেনি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। শূন্য শূন্য বলে এখনও তাঁদের সেই কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এদের কমিটেড ভোটার রয়েছে। বড় প্রশ্ন, তৃণমূল ও বিজেপি আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের কমিটেড ভোটার কতটা ধরে রাখতে পারবে? এই নিয়েই কৌশল নিচ্ছে যুযুধান দুই পক্ষ।
সম্প্রতি বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক অনুপম হাজরার ওয়াই ক্যাটাগরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে নয়া বিতর্ক শুরু হয়েছে পদ্ম শিবির তথা রাজনৈতিক মহলে। বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ তৈরি করে জেলায় জেলায় দলের বিক্ষুব্ধ ও অবহেলিতরা এককাট্টা হচ্ছেন। সভা-সমাবেশ করছে। সেই মঞ্চগুলিতে নিয়মিত হাজির থাকছেন অনুপম।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শীর্ষ নেতৃত্বের মদত ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করে প্রকাশ্যে দলের সাসপেন্ডেন্ট বা বিক্ষুব্ধদের অনুষ্ঠানে হাজির থাকা কি সম্ভব? আবার নিরাপত্তা শিথিল করে বিতর্কিত বিষয়টা দল ম্যানেজ করতে চাইছে? তবে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, আদি বিজেপি তথা দলের কমিটেড ভোটারদের ধরে রাখতেই নানা কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে বিজেপিকে। বিজেপিতে যেভাবে পুরনো নেতা ও কর্মীরা দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন জোড়াফুল শিবিরের হালও প্রায় একই। তৃণমূল কংগ্রেসেও আদি-নব্য নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যুব শক্তিকে দলের সামনে আনতে চাইছে। 'বয়স বাড়লে প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়,' সেকথা বলেছেন যুবরাজ। অন্যদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের লড়াইয়ের ইতিহাসের কথা বলছেন। অনুব্রত মণ্ডল ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কয়েকশো কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি হলেও তাঁদের স্বপদে বহাল রেখেছেন। পুরনো নেতৃত্বের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘোষণা করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁদের নেত্রী। 'মমতা বললে ভোটে প্রার্থী হব না,' ঘোষণা করেছেন কলকাতা উত্তরের তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১১-তে বামেদের পরাজিত করে বাংলায় ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। তারপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল কংগ্রেস ও বাম জোট। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে মূল লড়াই হয় বিজেপির। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে ২০১৯-এর পুনরাবৃত্তি হল। ধুয়েমুছে সাফ হল কংগ্রেস ও বাম জোট। এত কিছুর পরেও তৃণমূল ও বিজেপি নিজেদের কমিটেড ভোটার নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে কি? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
২০১১-এর পর থেকে বাম-কংগ্রেস থেকে স্রোতের বেগে নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। সাংসদ থেকে বিধায়ক ও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরে তাঁরা ক্ষমতাও পেয়েছেন। পাশাপাশি দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের একাংশ আর জায়গা করতে পারেননি। নতুনরা যেমন এসে তৃণমূলে ভিড় বাড়িয়েছে পাশাপাশি পুরনোদের সংখ্যাটাও কম নয়। আগামী লোকসভা ভোটে এই বসে যাওয়া নেতা-কর্মীদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সেই কারণেই দলনেত্রী বারে বারে পুরনোদের কথা স্মরণ করছেন।
আরও পড়ুন- কলকাতায় ললিতের আরও এক ঠিকানার হদিশ, অবাক করা বয়ান বাড়িমালিকের!
বঙ্গ বিজেপির দশাও অনেকটাই তৃণমূলের মতো। একটা সময়ে দলের পতাকা বওয়ার লোক ছিল না। সেই সময় থেকে যাঁরা দল করছে তাঁরা এখন রাজনীতির ময়দানের বাইরে। পুরোনরা মনে করছে, দলে নতুনরা স্বাগত, তা নাহলে বিজেপি এরাজ্যে ক্ষমতায় আসবে না। কিন্তু আদি নেতা-কর্মীদের বসিয়ে দেওয়া বা অবহেলা করলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এক্ষেত্রে দুই দলের একটা মূল পার্থক্য তৃণমূল ক্ষমতায় আর বিজেপি বিরোধী ভূমিকায়।
আরও পড়ুন- পর্যটকদের স্বার্থে যুগান্তকারী উদ্যোগ প্রশাসনের! বড়দিনের আগেই আমূল ভোলবদল দিঘার
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, বাইনারি পলিটিক্স তথা মেরুকরণের রাজনীতি এখানে নির্ণায়ক ভূমিকা নিচ্ছে। তাই লড়াই এখন তৃণমূল বনাম বিজেপি। কিন্তু দুই দলের আদি বা পুরনোদের অবস্থান ভোটের সব হিসেব উলোট-পালোট করে দিতে পারে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এই ভোটারদের ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ তৃণমূল ও বিজেপির কাছে।