সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান, চোপড়ার তাজিমুল ইসলাম ওরফে জেসিবি, আড়িয়াদহের জয়ন্ত সিং তথা জায়ান্ট, কুলতলির সাদ্দাম সরদার, সোনারপুরের জামালউদ্দিন সরদার। তালিকা যেন ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বাংলার জেলাগুলিতে এই 'বাহুবলী'দের দাপাদাপিতে সাধারণ মানুষ এককথায় অতিষ্ট।
শেখ শাহজাহান ছাড়া বাকিরা রাজ্য পুলিশের হেফাজতেই রয়েছেন। জামালউদ্দিন এখনও অধরা। তবে শাহজাহানকেও গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশ। এরা প্রত্যকেই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা বা ওতোপ্রোতভাবে দলের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে বিস্তর অপরাধমূলক অভিযোগ রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, পুলিশ-প্রশাসন কি এতদিন এসব বিষয়ে কিছু জানতো না? পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, সোর্স, গ্রামীণ পুলিশ, এসব চ্যাপ্টার কি ক্লোজড?
কুলতলির সাদ্দাম সরদার। সে তো পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিই চালিয়ে দিল। বেআইনি কারবারের অভিযোগ তো রয়েছেই, তার ওপর অভিযুক্তদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমাও চমকে দেওয়ার মতো। কারও আয়ের আবার উৎস সালিশি সভা! এক সময় কোনও রকমে দিন চলা এই ব্যক্তিদের প্রাসোদপম বাড়ি, লাক্সারি জীবন সঙ্গে দামি দামি গাড়ি। কেউ তৃণমূল নেতা, কেউ আবার দলীয় বিধায়ক বা সাংসদের পাশে পাশে ঘুরছেন। এমন একের পর এক ব্যক্তির হদিশ মিলছে রাজ্য জুড়ে। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এভাবে বেআইনি কারবার বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলেও পুলিশ-প্রশাসন কি সত্যি জানত না?
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, অপরাধ মূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। দল তাঁদের রেয়াত করবে না। তারপরেও ভাইরাল ভিডিও অপরাধ ফাঁস করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে কি দলের কোনও অংশ তাঁদের মদত দিচ্ছে বা সাহস যোগাচ্ছে? বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এসব ঘটনা সবই জানে। জেনে বুঝে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
রাজ্য পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ আছে। সকাল-বিকেল তাঁদের এলাকা ভিত্তিতে ডিএসপি ডিআইবিকে রিপোর্ট দিতে হয়। দিনের পর দিন নানা অপরাধমূলক কাজ চলছে, সেই তথ্য সেই এলাকার পুলিশের ওয়াচার শীর্ষ কর্তাদের জানায়নি বা জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেটা বড় প্রশ্ন। তাছাড়া পুলিশ কর্তাদের সোর্স মানি দেয় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বারং বার বলেছেন ভালো সোর্স তৈরি করতে। নানা ক্ষেত্রে পুলিশ কর্তা ছাড়া জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছেও সেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে পুলিশ-প্রশাসনের কোনও সোর্স তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারছে না। নাকি সর্সের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে আছে? কার্যত দেখা যাচ্ছে কোনও তথ্যই পুলিশ আগে থেকে পাচ্ছে না।
বিরোধীরা অভিযোগ করছে, রাজনৈতিক ছাত্রছায়ায় থাকার জন্য এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। বিশেষ চাপে না পড়লে জানাই যেত না এমন অপরাধী রাজ্যে ঘুরে বেড়চ্ছে। তবে এক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড ফাঁস করতে মুখ্য ভমিকা নিচ্ছে ভাইরাল ভিডিও। সাম্প্রতিক রাজ্যে মারধর বা অত্যাচারের যে ভিডিওগুলি ভাইরাল হয়েছে তা এখনও ফেক বলে পুলিশ-প্রশাসনও দাবি করেনি। শুধু পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বা সোর্স নয়, ভিলেজ পুলিশকে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। গ্রামীণ এলাকার খবরাখবর তাঁরা দেবে বলে তিনি প্রকাশ্যেও বলেছিলেন। এখন প্রশ্ন, তাহলে এই গ্রামীণ পুলিশরা কি সঠিক খবর দিচ্ছেন না উচ্চমহলে? চেপে যাওয়া হচ্ছে না তো? নীচে না ওপরের স্তরে চেপে যাওয়া হচ্ছে?