কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। একজন তিহারে বসে প্রমাদ গুণছেন, আরেকজন রাজমুকুট মাথায় পড়ছেন। তাহলে বীরভূম তৃণমূলে কি অনুব্রত মন্ডলের পাকাপাকি বিকল্প নানুরের কাজল শেখ? যদিও জলবন্দি অনুব্রত এখনও বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। এবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ।
পরিবারের তিন জন সিপিএমের আক্রমণে শহিদ হয়েছেন বলে কাজল শেখ দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, বাবা ও দুই দাদাকে খুন করেছে বামেরা। কাজলের দাদা শাহনওয়াজ শেখ কেতুগ্রামের বিধায়ক। কিন্তু মাঝে বেশ কয়েক বছর কাজলে সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ দূরত্ব ছিল। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে নানুরের তৃণমূল প্রার্থী গদাধর হাজরা সিপিএম প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তখন অভিযোগ উঠেছিল ওই হারের পিছনে ছিল কাজল শেখ।
কাজল শেখ বলেছিলেন, গদাধর হাজরা কোরাপ্টেড, তাও প্রমানিত হয়েছে। তিনি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। নানুরের মানুষ তথা বাংলার মানুষ রাজনীতি সচেতন মানুষ। নানুরের মানুষ সঠিক জবাব দিয়েছে এটাই আমি বলব। সুখ, দুঃখ, আপদ-বিপদে মানুষের পাশে থাকি। স্বভাবতই বসে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে, সেটাই হয়েছিল। এমনকী ২০১৬ নির্বাচনে নানুরের বুথে বুথে তৃণমূলের কোনও এজেন্ট ছিল না। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল নেতৃত্বের নয়া ঘোষণা অনুযায়ী এবার বীরভূমে আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন কাজল। ঠিক সেই সময় যখন গরুপাচার কাণ্ডে জলবন্দি বীরভূমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মন্ডল।
মাস দুয়েক আগেই জেলে থেকে ফোন করে অনুব্রত মন্ডল দল পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন কাজল। যা নিয়ে চরম বিতর্ক হয়েছিল। তার আগে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির সদস্য হন কাজল শেখ। কাজলের মন্তব্য নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বীরভূমে তৃণমূলের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছিল। তারপর কাজলকে জেলা পরিষদের প্রার্থী করে তৃণমূল। জীবনে প্রথমবার জনপ্রতিনিধি হন তিনি। এবার নানুর থেকে একেবারে জেলার দায়িত্বে।
বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রতর প্রবল বিরোধী বলে পরিচিত কাজল। দীর্ঘ দিন জেলে রয়েছেন অনুব্রত। সামনের বছর লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি। এরাজ্যে ৩৫টি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটে থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। যত বেশি আসনে জয় পাবে তত বেশি দাবি বাড়বে সেই দলের। রাজনৈতিক মহলের মতে, বসে থাকতে পারে না তৃণমূল। মাসের পর মাস দলের সভাপতি জলবন্দি। এবার বীরভূমে ভরসা কাজল শেখ।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, কেষ্ট 'বিরোধী' কাজলকে জেলাসভাধিপতি করে বীরভূমের রাজনীতিতে অন্য বার্তা আগাম দিয়ে রাখল তৃণমূল নেতৃত্ব।