শনিবারের বারবেলা নয়, একেবারে ভোরবেলা থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজ্য-রাজনীতি। একই ইস্যুতে দিনভর রীতিমতো হইহুল্লোড় চলেছে ডান-বাম রাজনৈতিক শিবির থেকে সমস্ত মাধ্যমে। কংগ্রেসের যুব নেতা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির ছোট-বড় নেতৃত্ব। একাংশের বক্তব্য, পুলিশি অভিযানের ফলে রাতারাতি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন কৌস্তভ বাগচী, একইসঙ্গে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন আমলা দীপক ঘোষের বইয়ের বিক্রি বেড়ে যাবে। তবে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ সাগরদিঘির উপনির্বাচন ও কৌস্তভের ঘটনার পিছনে অন্য অংকের কথাও উড়িয়ে দিচ্ছে না।
সাগরদিঘিতে সুষ্ঠু উপনির্বাচন, সেই ভোটে তৃণমূলের পরাজয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, পাল্টা অধীরের হয়ে কৌস্তভের মাঠে নামা, তারপর মাঝরাতে পুলিশের অভিযান, গ্রেফতার, জামিন, ন্যাড়া হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে রবিবার বেরিয়ে পড়া। এটাই তিন দিনের সংক্ষিপ্তসার। সারা রাজ্যে পুর নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্যবাসী। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, সর্বত্র ভোট লুট হয়েছে। একমাত্র তাহেরপুর পুরসভায় সিপিএম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির জেতা আসন আতস কাঁচে দেখতে হবে। কিন্তু এমন কোনও অভিযোগ এল না সাগরদিঘি উপনির্বাচনে। হইহই করে জিতে গেল কংগ্রেস। বিজেপি প্রার্থী জামানত খুইয়েছে। সিপিএম সমর্থন করেছে। মুসলিম ভোট ব্যাংক ভেঙেছে। হাত শিবিরের জয়ের পিছনে অনেক কারণ থাকতেই পারে কিন্তু উপনির্বাচনে ভোট লুটের অভিযোগ নেই!
কংগ্রেসের যুব নেতা ও পরিচিত আইনজীবীর বাড়িতে নিশুতি রাতে পুলিশি অভিযান হবে, আর তার পরের দিন কোনও হইচই হবে না, একথা কেউ ভাবেনি, তা কি সম্ভব? তার দুদিন আগেই উপনির্বাচনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। তাহলে কেন এই হানা? রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে কী এআইসিসিতে জায়গা না পাওয়া কৌস্তভকে নেতা প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস? না দীপক ঘোষের বইয়ের প্রচার বাড়ানো?
আরও পড়ুন- ফাঁদ পাতবে বিজেপি আর খই খাব আমি! সেই গুড়ে বালি: শুভেন্দু
গত পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে এরাজ্যে খাতায়-কলমে, সংগঠনে বিরোধী দল বিজেপি। লোকসভা ও বিধানসভায় এরাজ্য থেকে সিপিএমের অস্তিত্ব শূন্য। কংগ্রেস লোকসভায় দুই ও বিধানসভায় শূন্য ছিল। সাগরদিঘি জয়ের পর একজন কংগ্রেস বিধায়ক বিধানসভায় প্রবেশ করবেন। এই কংগ্রেসই কিন্তু গত ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থী দেয়নি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এককভাবে এই রাজ্যে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল। সাংগঠনিক ভাবে সেই জায়গার অর্ধেকও কংগ্রেস-সিপিএম দখল করতে পারলে আদপে ফায়দা তৃণমূল কংগ্রেসের। বিরোধী ভোট একত্রিত ভাবে পড়লে বিপাকে পড়তে পারে তৃণমূল। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে অনৈতিক জোটের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র কি এই প্রক্রিয়া সম্ভব? প্রশ্ন পর্যবেক্ষক মহলের। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, অতএব কংগ্রেস-সিপিএম সাংগঠনিক ভাবে কিছুটা শক্তিশালী হলে বিরোধী ভোটে ভাগ বসাবে, তাতেই কেল্লা ফতে রাজ্যের শাসক শিবিরের। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, তার পরের বছরই লোকসভা ভোট। রাজনীতির অঙ্কে দুইয়ে দুইয়ে চার হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই জটিল অঙ্ক কয়েক বছর বা দশক পার হলেই স্পষ্ট হয়।
আরও পড়ুন- ‘ন্যাড়া’ আগেই হয়েছেন, তৃণমূলকে ‘ল্যাজেগোবরে’ করতে আজ থেকেই নয়া ময়দানে কৌস্তভ