Aparajita Bill: সিপিএম, বিজেপি বা কংগ্রেস নয়, নারী সুরক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় যে অপরাজিত বিল পাশ হয়েছে তার প্রতিবাদ পথে নেমেই করলেন তৃণমূলেরই নেত্রী। ওই নেত্রীর নাম পূর্ণিমা মালিক। তিনি অবশ্য যে সে নেত্রী নন। পূর্ণিমা মালিক হলেন তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইক ফুঁকে শাসক দলের এই নেত্রী দাপুটে মেজাজে শনিবার বলেন, ”পরাজিতা বিল পাশ করার জন্য আমরা প্রতিবাদ করব, করছি এবং করে যাব“। দায়িত্বশীল পদে থাকা শাসক দলের একজন নেত্রীর এহেন বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
আরজি কর হাসপাতালে এক মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় বাংলায়। ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বাংলার আপামর মানুষজন। প্রতিবাদের আঁচ স্বভারতীয় স্তরে এমনকি বিদেশেও ছড়িয়ে পরে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরজি কর কাণ্ডের তীব্র নিন্দাই শুধু করেননি, তিনি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের শাস্তির জন্য কড়া আইন প্রণয়নের কথাও ঘোষণা করেন। সেই মত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় “অপরাজিতা বিল’পাশ হয়।
এই বিল আইনের স্বীকৃতি পেতে কেন্দ্রে অনুমোদন দরকার। কেন্দ্র যাতে অবিলম্বে অপরাজিতা বিলটিকে আইনের স্বীকৃতি দেয় সেই দাবিতে দলীয় নির্দেশে শনিবার বিকালে পথে নামে জামালপুরের মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী ও কর্মীরা। জামালপুর পুলমাথা থেকে মিছিল করে এসে তাঁরা জড়ো হন জামালপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে পথসভাও অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচীতে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খান, কার্যকরী সভাপতি ভূতনাথ মালিক ও জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক মাঝি সামিল ছিলেন।
বাস থামিয়ে চলল হুমকি, ভারত-বিরোধী স্লোগান, চূড়ান্ত আতঙ্কে যাত্রীরা
পথসভায় মেহেমুদ খান এবং বিধায়ক অলোক মাঝিকে পাশে নিয়ে বক্তব্য রাখতে ওঠেন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সমাপতি তথা ব্লকের তৃণমূল নেত্রী পূর্ণিমা মালিক। দাপটের সঙ্গে বক্তব্য রাখা শুরু করেও পরে তিনি যা বলেন, তা শুনে পথচলতি মানুষজন ও মহিলারাও লজ্জায় মুখ লুকোন। প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলের এই মহিলা নেত্রী বলেন, “পরাজিতা বিল পাশ করার জন্য আমরা প্রতিবাদ করব,করছি এবং করে যাব।“ নেত্রীর এই বক্তব্যের ভিডিও রাতে ভাইরাল হতেই রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় পড়ে যায়।
এ নিয়ে পূর্ণিমা মালিককে রবিবার ফোন করা হলে তিনি বলেন, "আমি কি বলেছি তা আমার আর খেয়াল নেই।" নিজের বক্তব্যে যা বলেছেন সেটা ভুল বলা হয়েছে কিনা, তা তিনি আবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধির কাছে জানতেও চান। তবে বিধায়ক অলোক মাঝি এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা মালিক অপরাজিতা বিল নিয়ে ভুল কথাই বলে ফেলেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “পূর্ণিমা মালিক যা বলেছেন তার জন্য বিধায়ক হিসাবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।“
বাংলাদেশে মহিলা হিন্দু সাংবাদিককে প্রকাশ্যে হেনস্থা, দেওয়া হল ভারত বিরোধী স্লোগান
বিজেপি অবশ্য পূর্ণিমা মালিকের বক্তব্যকে হাতিয়ার করে তীব্র কটাক্ষ উগরে দিতে দেরি করেনি। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ’কেন্দ্রের সরকার দেশের নারীদের নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যেই কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতাতেও সেই আইনের কথা উল্লেখ রয়েছে। দেশজুড়ে ন্যায় সংহিতা এখন কার্যকর হয়ে গিয়েছে। তার পরেও এই রাজ্যের তৃণমূল সরকার অপরাজিতা বিল পাশ করিয়ে সেটাকে আইনে বলবৎ করাতে চাইছে। এটার যে কোনও প্রয়োজন নেই, সেই বাস্তবটা শুধু বিজেপির নেতা ও কর্মীরাই নয় এই রাজ্যের মহিলারাও বুঝেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী পূর্ণিমা মালিক এই সত্যটাই প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইক ফুঁকে ঘোষণা করেছেন। সঙ্গে আপরাজিতা বিল পাশেরও বিরোধিতা তিনি করেছেন।' জনসমক্ষে অপরাজিতা বিল পাশের বিরোধিতা করার জন্য বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র তৃণমূল নেত্রী পূর্ণিমা মালিককে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।