স্কুলে চাকরির নিয়োগ-দুর্নীতিতে আরও এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এল। চাকরির নামে কোটি-কোটি টাকা তুলে পগার পার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ কোলাঘাটের তৃণমূল নেতা অতনু গুছাইত। তাঁর হয়ে টাকা ফেরানোর 'ভার' নিয়েছিলেন তৃণমূলেরই কোলাঘাট ১ নং পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মুজিবর তরফদার। প্রতারিত চাকরিপ্রার্থীদের টাকা ফেরাতে শেষমেশ উপপ্রধানের দেওয়া চেকও বাউন্স করেছে। ফের পুলিশের দ্বারস্থ প্রতারিত চাকরিপ্রার্থীরা। 'ফেরার তৃণমূল নেতার সঙ্গে এই উপপ্রধানও চাকরি-বিক্রির চক্রের সঙ্গে জড়িত', অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রতারিতরা।
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কোলাঘাটের তৃণমূল নেতা অতনু গুছাইত। পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থেকে শুরু করে হাওড়ার বিভিন্ন এলাকার একাধিক তরুণ-তরুণী স্কুলে চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন বলে অভিযোগ। এই সব চাকরিই হয়েছে মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে, উঠেছে এমনই অভিযোগ।
এসএসসি, টেট দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হতেই কোলাঘাটের তৃণমূল নেতা অতনু গুছাইতের বাড়িতে চড়াও হন একদল চাকরিপ্রার্থী। এঁরা টাকি দিয়েও চাকরি পাননি। টাকা ফেরতের দাবিতেই চলে অতনুর বাড়ি ঘিরে চলে লাগাতার বিক্ষোভ। দিনের পর দিন ধরে অতনুর বাড়িতে টাকা ফেরতের দাবিতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাতে শুরু করেন প্রতারিতরা।
শেষমেশ কোলঘাট ১ নং পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মুজিবর তরফদারের মধ্যস্থতায় দিন কয়েকের জন্য থামে সেই বিক্ষোভ। প্রতারিত চাকরি প্রার্থীদের টাকা ফেরানোর 'দায়িত্ব' নেন কোলাঘাট ১ নং পঞ্চায়েত উপপ্রধান মুজিবর তরফদার। তিনিই অতনু গুছাইত ও চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসে মধ্যস্থতা করেছিলেন। তবে এরই মধ্যে পগার পার তৃণমূল নেতা অতনু গুছাইত। তবে অতনুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কিছুদিন আগেই কয়েকটি চেক আনানোর বন্দোবস্ত করেন মুজিবর। পরে সেই চেক তিনি তুলে দেন প্রতারিত কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর হাতে।
আরও পড়ুন- ‘বস্তির কালচার তৃণমূলে, সর্বভারতীয় লিখলেও ওঁরা কুয়োর ব্যাঙ’, কটাক্ষ দিলীপের
এতেই ফের বিপত্তি! সেই চেকও বাউন্স করেছে। এতেই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে চাকরিপ্রার্থীদের। অতনুর সঙ্গে এই চাকরি-বিক্রির সঙ্গে মুজিবর তরফদারও সমানভাবে জড়িত, এই অভিযোগে সোচ্চার চাকরিপ্রার্থীরা পুলিশে অভিযোগ করেছেন। হাওড়ার দাসপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ কৈল্যা। গাদিয়াড়ায় তাঁর একটি হোটেল রয়েছে। তাঁর হোটেলে এক সময় আসা-যাওয়া ছিল কোলঘাটের তৃণমূল নেতা অতনুর। প্রসেনজিৎ তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যের চাকরির জন্য ৬৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন অতনু গুছাইতকে। কিন্তু কারও চাকরি হয়বনি। পরে টাকা ফেরতও তিনি পাননি।
প্রসেনজিৎ বলেন, ''২০২১ সালে পরিবারের পাঁচজনের চাকরির জন্য অতনু গুছাইতকে ৬৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। ভোটের পরেও চাকরি হল না। পরে অতনু গুছাইত একটা ৩০ লক্ষ ও একটা ৩৫ লক্ষ টাকার চেক দেন। সেই চেক বাউন্স করে। আমি থানায় অভিযোগ করেছি। ওঁর স্ত্রী পার্থবাবুর পরিচারিকার কাজ করতেন। এখন তিনি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করেন। অতনুর হয়ে মুজিবর তরফদার আমাকে কেস তুলে নিতে বলে। মুজিবর তরফদার আমায় ৮ লক্ষ টাকার চেক দেয়। ফের চেক বাউন্স হয়েছে। পরে মুজিবর আমাকে কেস তোলার জন্য হুমকি দিতে থাকে। অতনু গুছাইতের সঙ্গে মুজিবরও জড়িত। ফোনে কনফারেন্সে নিয়ে অতনুর সঙ্গে কথাও বলিয়ে দিয়েছে মুজিবর। আমি এসডিপিও-কে লিখিতভাবে সব জানিয়েছি।''
আরও পড়ুন- লাল দুর্গে ধুন্ধুমার, আশার আলো দেখছে CPIM, ফায়দার অঙ্কে চোখ TMC-র
এদিকে, পগার পার তৃণমূল নেতার হয়ে টাকা ফেরানোর দায়িত্ব নেওয়া শাসকদলের উপপ্রধান মুজিবর তরফদার বলেন, ''অতনুদার বাড়িতে বৃদ্ধ মা ও বাচ্চা মেয়ে আছে। প্রতিদিন ওঁর বাড়িতে অশান্তি হচ্ছে। ওঁর বাড়িতে অনেকবার হামলা হয়েছে। কিছু মানুষ চাকরির জন্য ওঁকে টাকা দিয়েছিলেন। অনেকে সুদেও টাকা ধার দিয়েছিলেন। ওঁরা ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। ওর মা-বাচ্চাকে গালাগালি করেছে। আমি আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছিলাম। অতনুদা এরই মধ্যে কোথাও চলে গিয়েছেন। আমিও যোগাযোগ করতে পারিনি। কিছুদিন আগে অতনুদার আত্মীয় আমাকে খামে ভরে কয়েকটা চেক দেন। আমি ওঁদের ডেকে সেই চেক দিয়ে দিই। কোন চেক বাউন্স হলো তা আমি জানি না। ওঁরা আইনের দ্বারস্থ হতেই পারেন।''
আরও পড়ুন- চিটফান্ড মামলায় TMC MLA-র বাড়িতে CBI, হানা বিধায়কের পুরপ্রধান ভাইয়ের বাড়িতেও
অন্যদিকে, চাকরি দুর্নীতি নিয়ে এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে সোচ্চার জেলা বিজেপি বিজেপি নেতৃত্ব। তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''চাকরির নামে শুধু অতনু গুছাইতই টাকা নেননি। মুজিবর তরফদারও জড়িত রয়েছেন। তৃণমূলের উপর থেকে নীচে সবাই যুক্ত। দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন তৃণমূল নেতারা। কিছুদিনের মধ্যেই সব প্রকাশ্যে আসবে।''