আদি-নব্য বিতর্ক, অন্দরের বিদ্রোহ প্রকাশ্যে। একেবারে যেন খোলা হাওয়া বইছে তৃণমূল কংগ্রেসে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপর ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই যেন নিজেরাই ঝালিয়ে নিচ্ছে দলের সাংগঠনিক শক্তি। নতুন তৃণমূলের ঘোষণা আগেই হয়েছে। এবার পুরনোরা সুর বাঁধছে। বিগত কয়েক দিন ধরেই নানা ইস্য়ুতে মন্তব্য করে চলেছেন একাধিক তৃণমূলের আদি নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের মতে, বুধাবর সৌগত রায়ের মন্তব্যে স্পষ্ট, এবার দলে নতুন করে চাপের খেলা চলছে।
সিঙ্গুর থেকে টাটাকে আমি তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে।' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কথাকে হাতিয়ার করেই আদি ও নব্য বিতর্ককে উসকে দিয়েছেন বর্ষীয়াণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। নতুনদের চাপে পড়ে আদিরা যেন পিছিয়ে না পড়ে সেকথা বলেছেন দমদমের সাংসদ। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দলের পুরনোদের একাংশ বলতে শুরু করেছিলেন তাঁদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন দলের 'যুবরাজ'কে। সেদিনও সংকেত দেখা যাচ্ছিল।
শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন গয়া, ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস জয় পেলে তিনি অভিষেকের নেতৃত্ব মেনে নেবেন। এবার সুযোগ বুঝে সৌগত রায় সরাসরি পুরনোদের হয়ে জোরালো সওয়াল করলেন। স্থানীয় বা শীর্ষ স্তরে ক্রমশ দলে ব্রাত্য হচ্ছেন দলে আদিদের একাংশ। এই ধারা প্রতিরোধ করতেই একাধিক আদি নেতা নানা বিষয়ে মন্তব্য করছেন নিজেদের অস্বিত্ব জাহির করে, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন- বঙ্গ বিজেপিতে তুমুল বিবাদ, বিদ্রোহী দলের সাংসদ থেকে কেন্দ্রীয় নেতা
একদিকে আদি-নব্য নিয়ে প্রবীণ তৃণমূল নেতার সরাসরি মন্তব্য। তার আগে দলের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন দুই বিধায়ক তাপস রায় ও তাপস চট্টোপাধ্যায়। কোনও ঢাকঢাক গুরগুর না করেই প্রকাশ্য বিদ্রোহ করেছেন তাঁরা। তাপস রায়ের পাল্টা মন্তব্য করেছেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরইমধ্যে কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রও বিতর্কিত বিষয় নিয়ে মন্তব্য বা শুভেন্দু-দিলীপকে হুঙ্কার দিতে ছাড়ছেন না। সারদা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর দল মদন মিত্রকে মন্ত্রিত্ব বা দলীয় পদে বসায়নি। গত কয়েকদিনে আদি তৃণমূলের একাংশের তৎপরতা বেড়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, যত দিন গড়াচ্ছে নানা স্তরে নতুনদের হাতে দলের রাশ চলে যাচ্ছে। স্থানীয় স্তরে অনেক ক্ষেত্রে দলের আদি নেতা-কর্মীরা বসে গিয়েছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন তৃণমূলের কথা বলেছেন। ৬ মাসের কথা বলা হয়েছিল। তা নিয়ে ভবানীপুর অঞ্চলে পোস্টারও পড়েছিল। ওই ঘোষণা অনুযায়ী সেই সময়কাল কিন্তু এগিয়ে আসছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নয়া তৃণমূলের ঝলক দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণায় তা আরও স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে সৌগত রায়ের মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বসে যাওয়া কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। দলে পুরনো ও নতুনদের একসঙ্গে নিয়ে চলার কথা বলেছেন। সৌগত রায়ের এদিনের মন্তব্য নতুন করে আদিদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। অভিজ্ঞমহলের মতে, তৃণমূলনেত্রীর কাছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের গুরুত্ব কতটা সেটা বলার প্রয়োজন পড়ে না। পুরনো বলতে এই আন্দোলনের উদাহরণই টেনেছেন সৌগত।