পশ্চিমবঙ্গ দিবসের দিন ঘোষণা নিয়ে বৃহস্পতিবার সরগরম ছিল রাজ্য বিধানসভা। পয়লা বৈশাখ 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' হিসেবে পালনের প্রস্তাব পাশ করেছে রাজ্য সরকার। তবে এতে তুমুল আপত্তি প্রধান বিরোধী দল বিজেপির। শুভেন্দু অধিকারী এপ্রসঙ্গে তাঁর আপত্তির কথা জানাতেই এক তৃণমূল বিধায়ক রে-রে করে গর্জে ওঠেন। শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে তাঁকে বলতে শোনা যায় 'আপনি কে হরিদাস পাল?' পাল্টা জবাবও দেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। তবে বাঙালি সমাজে 'হরিদাস পাল' নামটি কিন্তু বহুল চর্চিত। এই নামের পিছনের ইতিহাসটাও এই প্রতিবেদন তুলে ধরার চেষ্টা হল।
পয়লা বৈশাখের দিনটিতেই পালন করা হবে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস'। একইসঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'বাংলার মাটি, বাংলার জল' গানটি হবে রাজ্যের সঙ্গীত। এই দুই প্রস্তাবই আজ রাজ্য বিধানসভায় ধ্বনি ভোটে পাশ করিয়েছে সরকার। তবে পয়লা বৈশাখে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালনে তুমুল আপত্তি বিজেপির। ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা।
আরও পড়ুন- পয়লা বৈশাখই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, রাজ্যপাল বেঁকে বসলে? কড়া উত্তর মমতার
প্রতিবাদে শুভেন্দু অধিকারী এদিন ঠিক কী বলেছেন?
'১৯৪৭-এর ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এটা অস্বীকার করতে পারবেন না। ইতিহাস পাল্টাতে পারবেন না। আপনারা প্রস্তাব পাশ করাবেন। কিন্তু এই প্রস্তাবের পরিণতি হবে বঙ্গ নামের মতো। এর পরিণতি হবে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার মতোই।'
এদিন শুভেন্দু অধিকারী যখন এই মন্তব্য করছেন তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে প্রবল প্রতিবাদ দেখাতে থাকেন তৃণমূলের বিধায়করা। বিরোধী দলনেতাকে কটাক্ষের সুরে তৃণমূল বিধায়ক সূর্য অট্ট বলে ওঠেন, 'আপনি কে হরিদাস পাল? পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করবেন!' এদিকে তাঁকে 'হরিদাস পাল' বলায় বেজায় চটে যান শুভেন্দু অধিকারী। শাসকদলের ওই বিধায়ককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলতে থাকেন, "বলছে আমি কে হরিদাস পাল। আমি কোনও হরিদাস পাল নই।"
বাঙালি সমাজে 'হরিদাস পাল' নামটির পিছনের ইতিহাস কী?
বাঙালি সমাজে 'হরিদাস পাল' নামটি কিন্তু বহুলচর্চিত। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, 'হরিদাস পাল' নামে এক ব্যক্তি একটা সময় এবাংলার অন্যতম ধনী, অতি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তাঁর অগাধ সম্পত্তি ও টাকা-পয়সা ছিল। বিত্তশালী হয়েও তিনি সবসময় গরিব মানুষের কথা চিন্তা করতেন। মহান চিন্তাভাবনার জন্য সমাজে ওই ব্যক্তি যথেষ্ট সমাদর ও শ্রদ্ধা পেতেন।
আরও পড়ুন- এতদিন কেন বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস পালন হয়নি? জবাব দিলেন মমতা
বর্তমানে বাংলা ভাষায় 'হরিদাস পাল'টি নামটি বহুল প্রচলিত। এখন অবশ্য কাউকে অযোগ্য বা কটাক্ষ করতে হলে এই নামটি ব্যবহার করেন অনেকে। 'তুমি কোন হরিদাস পাল হে?' এমন সুরেই 'হরিদাস পাল' নামের ব্যবহারে কটাক্ষ শোনা যায় ফি দিন। গত পাঁচ-ছয় দশক ধরে 'হরিদাস পাল' নাম নিয়ে বাঙালি এভাবেই একে অপরকে কটাক্ষের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে।