মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, তারপর উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত নির্বাচন আর দেরি নেই। কীভাবে নির্বাচনে জয় পেতে হবে তা কোনও রাখঢাক না রেখে বিজেপি বধের দাওয়াই প্রকাশ্যেই বাতলে দিয়েছেন তাঁরা। রাজনৈতিক মহলের মতে, রোজই এই তালিকায় নতুন নতুন নামের সংযোজন ঘটবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মোদ্দা কথা বিরোধীদের নার্ভের চাপ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। যদিও বিরোধীরাও পাল্টা কৌশল নিতে মরিয়া।
পঞ্চায়েত ভোট হবে মসৃণভাবেই। তৃণমূলের কেউ অন্যায় করলে শাসক দল পদক্ষেপ করবে বলেও আশ্বস্ত করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া, নয়া তৃণমূল কংগ্রেস কি হবে তাও দুদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো সৈনিকদের জেলায় জেলায় প্রতিনিধি হিসাবে ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেদিনই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ইঙ্গিত দিয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন তৃণমূলের কি কাঠামো ঘোষণা করতে চলেছেন। তারও আগে প্রবীণ তৃণমূল নেতা সৌগত রায়সহ অনেকেই আদি তৃণমূলের হয়ে সরাসরি সওয়াল করেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, ক্রোনোলজিতে স্পষ্ট পরিস্থিতি তৈরি করার পর্যায় চলছিল। আগামী পঞ্চায়েত ভোটে জয় পেতে গেলে আদি ও নয়াদের এক যোগে ময়দানে নামতে হবে, সেকথা ভেবেই নতুন তৃণমূলের ফরম্যাট ঘোষণা করেছেন অভিষেক। তারই মধ্যে মন্ত্রী-বিধায়কদের একাংশ পঞ্চায়েতে জয় পেতে হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করেছেন।
২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে বাধা দিয়েছিল তৃণমূল, এই অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। নির্বাচনের দিনও সন্ত্রাস ও হিংসার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ৪২-এ-৪২ স্বপ্ন শুধু অধরাই থাকেনি ২২-এ গিয়ে থেমে যায় ঘাসফুলের অশ্বমেধের ঘোড়া। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এবার অনেকটা আগেই মনোনয়ন জমা ও জয়ের ব্যাপারে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিরোধীদের ওপর নার্ভের চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়কদের একাংশ। যদিও বিজেপি পাল্টা হুঙ্কার ছেড়েছে, পুলিশকে বাদ দিয়ে ময়দানে নেমে দেখুক তৃণমূল। বেশ কয়েক মাস দেরি হলেও ভোটাররা টের পাচ্ছে পঞ্চায়েতের দামামা বেজে গিয়েছে।
গ্রাম পঞ্চায়েতের ওপর নির্ভর করেই একাধিক প্রকল্প রূপায়ণ করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এখন পঞ্চায়েতগুলিতে নানা প্রকল্পের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের একটা বড় অংশের বাড়ি, লাইফস্টাইল নিমিষে বদলে যায়। শুধু বিরোধী নয়, কাটমানির অভিযোগ ওঠে খোদ ক্ষমতাসীন দল থেকেই। গ্রামীণ ক্ষেত্রে মায় পঞ্চায়েতের একটা টিকিট পেতেও ঘাম ঝড়াতে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, একদিকে পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে শাসক ও বিরোধীদের হুঙ্কার, পাল্টা হুঁশিয়ারি শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব হুঙ্কারের নিন্দা করলেও প্রকাশ্য়ে কোনও শাস্তিমূলক ব্য়বস্থার কথা জানায়নি। যেভাবে এখনই হইচই শুরু হয়েছে তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে বাস্তবায়িত করা নির্বাচন কমিশনের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ।