তৃণমূল কংগ্রেসে জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষক তুলে দেওয়া হয়েছিল। শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষমতা খর্ব করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে পরবর্তীতে তিনি নিজেই এই অভিযোগ করেছিলেন। শুভেন্দু একাধিক জেলায় তৃণমূলের দায়িত্বে ছিলেন। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও পর্যবেক্ষক প্রথা চালু করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। বরং অনুব্রত মন্ডল গরুপাচার কাণ্ডে জেলবন্দি হওয়ার পর বর্ধমান জেলার তিন বিধানসভা এলাকার দায়িত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেয় দল। সম্প্রতি শুভেন্দুর জেলায় দায়িত্ব বর্তেছে কুণাল ঘোষের ওপর। পর্যবক্ষক না বললেও জেলায় জেলায় নতুন পদ ‘প্রতিনিধি’ ঘোষণার মাধ্যমে বেশ কয়েকজন পুরনো নেতৃত্ব ফের জেলা পর্যায়ে ক্ষমতা ফিরে পেলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি দলের আদি-নব্য় মেলবন্ধনের দিকটা এক্ষেত্রে খেয়াল রেখেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পঞ্চায়েত নির্বাচন একেবারে বুথ পর্যায়ের ক্ষমতা পরীক্ষা করার ক্ষেত্র। রাজনীতির আঁতুরঘর দখলের লড়াইয়ের আগে দলের এই প্রতিনিধি নিয়োগ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। দীর্ঘ বছর ধরে উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ছিলেন পোড়খাওয়া রাজনীতিক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁকে সরিয়ে দিয়ে সাংগঠনিক ভাগে ভাগ করে দলে একাধিক সভাপতি করা হয়েছে। এই জেলায় দলের প্রতিনিধি হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দল পর্যবেক্ষক না বললেও এই প্রতিনিধির মতামত দলে যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে বলে খবর। তৃণমূল মুখপত্রেও লেখা হয়েছে, ‘পর্যবেক্ষক নয়, কাজ পর্যবেক্ষকের হলেও নাম রাখা হয়েছে প্রতিনিধি।’ রাজনৈতিক মহলের মতে, পর্যবেক্ষক নামে ফের নিয়োগ করলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিতর্ক দেখা দিতে পারে। তাই নতুন পদ প্রতিনিধি। সেই পদে আবার পুরনোদের অধীক গুরুত্বও দিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গা-জোয়ারির অভিযোগ উঠেছিল। তারপর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে একধাক্কায় তৃণমূলের ১২টি লোকসভার আসন কমে যায়। ১৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দলে বিস্তর কাঁটাছেড়া হয়েছে। রাজনীতির ময়দানে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে চর্চা হলে ২০১৮ ও ২০১৯ এই দুই সময়ের ভোটের বিষয়বস্তু চলে আসে। তাই এবার অনেকটাই সতর্ক ভাবে পা ফেলতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথম সারির নেতৃত্বকেই প্রতিনিধির দায়িত্ব দিয়েছে দল। নয়া তৃণমূলের ঘোষণা করেছিলেন খোদ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রতিনিধি নির্বাচনে পুরনোদের দায়িত্ব দিয়েছে দল। এক্ষেত্রে নতুন করে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না ঘাসফুল শিবির।
অভিষেক বরাবরই এক ব্যক্তি এক পদ নীতির পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন। কিন্তু যাঁদের জেলার প্রতিনিধি করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীত্ব। অনেকে রয়েছেন আবার ২০১১ থেকেই মন্ত্রীত্বে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অরূপ বিশ্বাস, হাওড়ায় অরূপ রায়, কোচবিহারে উদয়ন গুহ, পশ্চিম বর্ধমানে মলয় ঘটক, হুগলিতে স্নেহাশিস চক্রবর্তী, এমন একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পদাধিকারীকে প্রতিনিধি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অভিজ্ঞতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে এক ব্যক্তি এক পদ, নয়া তৃণমূল সবই ব্রাত্য।