TMC Brigade Rally: লোকসভা নির্বাচনের (Lok sabha poll 2024) দামামা বেজে গিয়েছে। শুধু ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা বাকি। সন্দেশখালি (Sandeshkhali) ও তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান (Sheikh Shahjahan) ইস্যুতে ল্যাজেগোবরে অবস্থা ঘাসফুল শিবিরের। ঘন-ঘন মন্ত্রীদের সেখানে পাঠিয়েও ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। রাজ্য পুলিশের সর্বময় কর্তা গিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থেকে গিয়েছে। নতুন করে আন্দোলন ছড়িয়েছে আশপাশের গ্রামে। স্থানীয় শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা অজিত মাইতি (Ajit Maiti) গ্রামের মানুষের তাড়া খেয়ে অন্যের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন চার ঘণ্টা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। এই পরিস্থিতিতে ব্রিগেড সমাবেশের (Brigade Rally) ডাক দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
১০ মার্চ কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে ব্রিগেড সমাবেশ করবে তৃণমূল কংগ্রেস। বাকি মাত্র ১৩ দিন। এত কম সময় হাতে নিয়ে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক কার্যত নজিরবিহীন। তবু লোকসভা নির্বাচনের আগে এমন চ্যালেঞ্জ নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দল। ১০ মার্চ সন্দেশখালিতে অভিষেক জনসভা করবেন বলে জানা গিয়েছিল। এদিকে ওই দিনই ব্রিগেডে জনগর্জনের ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন হঠাৎ এই ব্রিগেড সমাবেশের ঘোষণা?
প্রায় ২ মাস হতে চলল সন্দেশখালি ব্লক তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান অধরা। রেশন বন্টন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলায় ইডি (ED) সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়েছিল গত ৫ জানুয়ারি। সেদিন ইডি আধিকারিক ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল শেখ শাহজাহানের দলবল। ওই ঘটনার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, 'ঘটনার সময় শেখ শাহজাহান ছিল নাকি?' গতকাল, রবিবার বিকেলে মহেশতলায় অভিষেকের মন্তব্য, 'কে শেখ শাহজাহান?'
রাজনৈতিক মহলের মতে, ধীরে ধীরে শাহজাহানের ওপর থেকে দলের হাত উঠে যাচ্ছে। তার ওপর এখনও শাহজাহানের দলবলের বিরুদ্ধে সন্দেশখালিতে ক্ষোভের আগুন বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং BJP, Cpm, কংগ্রেস সহ একাধিক দলের প্রতিনিধিরা রোজ ছুটছেন সন্দেশখালির উদ্দেশে। সেখানে নাজেহাল দশা পুলিশ প্রশাসনেরও। এই পরিস্থিতিতে বিশেষ করে সামনে লোকসভা নির্বাচন, সেক্ষেত্রে সন্দেশখালিতে জনসভা করার ঝুঁকি নিতে চাইছে না তৃণমূল।
আরও পড়ুন- TMC Leader Killed: বাড়িতে ঢুকে অতর্কিতে হামলা, গুলিতে ঝাঁঝরা তৃণমূলের উপ প্রধান! চরমে উত্তেজনা
লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালি ইস্যু হাতছাড়া করতে নারাজ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। প্রতিদিনই কোনও না কোনও দল সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ সেখানে গিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেকে পুলিশি বাধায় ঢুকতে পারেননি। তৃণমূলের মন্ত্রীরা সরাসরি গ্রামবাসীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ থেকে সন্দেশখালির মহিলারা এতটুকুও সরে আসেননি। নিজেদের বক্তব্যে অটল আছেন তাঁরা। এই ইস্যু লোকসভা নির্বাচনে তুলে ধরতে মরিয়া তৃণমূল বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল।
এদিকে মার্চেই প্রথম দিকে তিন-তিনটি জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Pm Modi)। ১ মার্চ আরামবাগ, ২ মার্চ কৃষ্ণনগর ও ৮ মার্চ বারাসাত। ৮ মার্চ আবার বিশ্ব নারী দিবস। বারাসতে সন্দেশখালির নির্যাতিত মহিলাদের হাজির থাকার কথা রয়েছে। স্বভাবতই সন্দেশখালি ও শাহজাহান ইস্যু তুলে ধরবেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। সন্দেশখালি ইস্যু হাতছাড়া করতে চাইছে না বিজেপি। লোকসভা ভোট ঘোষণার আগেই বাংলায় টানা জনসভা করবেন মোদী। তৃণমূল কংগ্রেসের ব্রিগেড ১০ মার্চ। মোদীর সভার পরই রাখা হয়েছে ঘাসফুলের জনসভা।
একেবারেই দেরি করেনি তৃণমূলও। ব্রিগেড থেকে মোদীর বক্তব্যের জবাব দেবে তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতির অভিমুখ সন্দেশখালি। সেই অভিমুখ বদল করাই এখন তৃণমূলের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালির ছায়া পড়লে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে তা মোটেই সুখকর হবে না।
ব্রিগেড সমাবেশে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে তৃণমূল। দুর্নীতিপরায়ণ দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতৃত্ব কী বার্তা দেয় সেদিকেও নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। এই সমাবেশে ইন্ডিয়া (INDIA) জোটের প্রতিনিধি দলগুলিকেও আলাদাভাবে আমন্ত্রণ জানাবে না তৃণমূল। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election) আগে তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশে দেশের বিজেপি বিরোধী দলগুলির নেতৃত্ব হাজির ছিলেন। এবারের ব্রিগেড শুধুই তৃণমূলের।