একটা সময় আকাশি-নীল রঙের দোতলা বাড়ির সামনে রীতিমতো মানুষের মেলা বসত। সকাল থেকেই গমগম করত এলাকা। বোঝা যেত 'কেউ কেটা' একজন এখানে থাকেন। এখন সেই বাড়ির দিকে কেউ তাকিয়েও দেখে না। এখন মালিকহীন সেই বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন তিনজন পুলিশ কর্মী। বাড়ি ঘিরে রয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। ক্লোজ সার্কিট টিভিতে চলছে নজরদারি। দোর্দণ্ডপ্রতাপ বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে গেলে বোঝার উপায় নেই কিছু দিন আগেও এই বাড়িই ছিল বীরভূম জেলা-সহ আশেপাশের এলাকার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।
বোলপুরের নীচুপট্টিতে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে সকাল থেকেই দরবার চলত। ভিড় এতটাই হতো যে বাড়ির দেওয়ালে পোস্টার সাঁটাতে হয়েছিল, সাক্ষাতের জন্য এখানে ভিড় করবেন না। বেলা ৩টের পর জেলা অফিসে যোগাযোগ করুন। দেখা গেল, তৃণমূল সরকারের নীল-সাদা নয়, আকাশি-নীল রঙের বাড়িতে প্রবেশের দরজার ওপরে রয়েছে সিদ্ধিদাতা গণেশের মূর্তি। বাড়ির সামনে একপাশে উড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাসফুলের পতাকা। বাড়ির নির্মাণকাল ১৪১১। এই মুহূর্তে তিনজন পুলিশ কর্মী বাড়িটি আগলে রেখেছেন। তবে তাঁরা কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির ঠিক উল্টোদিকেই রয়েছে হারাধন চক্রবর্তীর লুচি-তরকারি, চায়ের দোকান। অনুব্রত মণ্ডল এই দোকানের ভাগ্যও যেন সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন। কেমন চলছে দোকান? সদ্য জ্বর থেকে ওঠা হারাধনবাবুর জবাব, 'এখন দোকান আগের মতো চলে না। একটা সময় আমার দোকানে রমরমা বিক্রি ছিল। তখন এখানে ভিড় লেগেই থাকত। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁরা অনেকেই আমার দোকানে জল-খাবার, চা খেতেন। সেই বাজার আর নেই।' জামিনের আশা করছেন? 'সেকথা কি করে বলব বলুন,' জবাব হারাধনের। তবে তিনি এই বাড়িতে ফিরলে তাঁর দোকানে বিক্রি বাড়বে বলেই আশা হারাধন চক্রবর্তীর।
আরও পড়ুন- যেন এক নিঃশ্বাসেই গিলে নেবে সর্বস্ব! সুন্দরবনের গ্রামে প্রকাণ্ড জীবের খোঁজ!
স্থানীয় যুবক আশু হাজরা, শিশির বাগদিদের বক্তব্য, 'সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই বাড়ির সামনে লোকজনে জমজমাট থাকত। গাড়িতে ছয়লাপ থাকতো এলাকা। এখন তো দেখতেই পাচ্ছেন, রাজাও নেই প্রজাদের ভিড়ও নেই।' তবে স্থানীয়দের অনেকেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন অনুব্রতর থেকেও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের প্রতি। তাঁদের চালচলন ও ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন স্থানীয়রা। তাঁদের বক্তব্য, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর আচার-ব্যবহার, চালচলনে অনেকটাই বদলে গিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডলও। ক্ষমতার দম্ভ চেপে বসেছিল।
বছর পেরিয়ে গরুপাচার কাণ্ডে জেলবন্দি রয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলও রয়েছেন তিহার জেলে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমে দল পরিচালনা করার জন্য কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী নিজে বীরভূমের সংগঠন দেখবেন বলে ঘোষাণ করেছিলেন। ইতিমধ্যে নানুরের কাজল শেখকে তৃণমূল বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি করেছে। কিন্তু এখনও জেলা তৃণমূলের সভাপতি রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলই। লোকসভা নির্বাচনের আগে নীচুপট্টির বাড়িতে কি মেয়েকে নিয়ে ফিরতে পারবেন দিদির প্রিয় কেষ্ট? কলকাতা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে বোলপুরের নীচুপট্টিতে এটাই এখন বড় প্রশ্ন।