Advertisment

Exclusive: দত্তপুকুরে কোটি কোটি টাকা লাভের রমরমা! বেআইনি কারবারে ব্যবহার বিষাক্ত রাসায়নিকের?

বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণে বিশেষ এক বাজি তৈরির সন্ধান মেলায় চোখ কপালে বাজির কারবারিদের একাংশেরও।

author-image
Joyprakash Das
New Update
toxic chemicals were used in duttapukur business to make crores of profit

ছবির বাঁদিকে বিস্ফোরণস্থলের পাশের গোডাউনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে পপ পপ। ছবির ডানদিকে বস্তায় ভরে সারি দিয়ে তোলা রয়েছে পপ পপ।

দত্তপুকুরের মোচপোলে বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণে পপ পপ তৈরির সন্ধান মেলায় অবাক হয়েছেন বড় বাজারের বাজির কারবারিদের একাংশ। এই সব বেআইনি বাজির ফলে গ্রিন বাজির সমূহ ক্ষতি হচ্ছে বলেই তাঁদের অভিমত। মোচপোলে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বেআইনি কারবার চলতো বলে এই কারবারিরা মনে করছেন। সেখানে এক জায়গায় বেআইনি বাজি জড়ো করে সরবরাহের কাজ চলতো। একটু দূরের বাঁশবাগানে ৫-৬টি তাঁবুর ছাউনিতে বেআইনি বাজি তৈরি হতো। সর্বোপরি অনেকটা দূরে ইঁটভাটাতে একেবারে ল্যাবে চলতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই কারবারে বিজ্ঞান জানা বড় মাথা কেউ ছিল বলেই অনুমান বাজির কারবারিদের।

Advertisment

কত টাকার কারবার চলত এই মোচপোলে? কত টাকা মার্জিন থাকত পপ পপ ও আলু বোমা বিক্রি করে? কতটা ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করা হতো এই বেআইনি বাজি তৈরি করতে? বড় বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজি কারবারিদের একাংশ এ বিষয়ে বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা লাভের কথা বলেছেন তাঁরা। তবে এই বোমা টাইপের বাজির কারবার গ্রিন বাজির ব্যাপক ক্ষতি করছে। জেলায় জেলায় নজরদারি করার কথা বলছে। বাজির কারবারিদের বক্তব্য, যাঁরা সাধারণ রংমশাল, তুবড়ি, তারা বাজি, চড়কি বানান তাঁরা যেন বিপদে না পড়েন। গ্রিন বাজির কেমিক্যাল এখানে নেই। নানা সমস্যা তো আছেই।

বড় বাজারের বাজি কারবারিদের মতে, পপ পপে লাভ অনেক বেশি। এটাকে রসুন বোমাও বলে। এক পেটি পপ পপে সাত থেকে আটশো টাকা খরচ হয়। এখন বিক্রি সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বিশ্বকর্মা পুজোর পর ৪০০০ থেকে ৪ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। পেটিতে ২৪টা বক্স। ৫০টা করে ছোট বাক্স। মোট ১২০০ থাকে অর্থাৎ ১২০০০ পিস রসুন বোম। বছরে ১০-১২ কোটি টাকার পপ পপ তৈরি হয়। ১০ কোটি বিক্রি হলে প্রায় ৭ কোটি টাকা লাভ হয়। ৩০ শতাংশ তৈরির খরচ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক।

আরও পড়ুন- একই সময়ে দুই শহরে একই সংস্থার শোরুমে হাড়হিম ডাকাতি, বিরাট চক্রান্তের সন্দেহ পুলিশের!

publive-image
তীব্র বিস্ফোরণের পর সেই ভয়াবহ ছবি।

ওই সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যদিকে এক বস্তা আলু বোমা তৈরি করতে খরচ হয় চারশো থেকে পাঁচশো টাকা। আলু বোমা পপ পপের থেকে বড় হয়। আলু বোমার শব্দও বেশি হয়। প্রতি বস্তায় থাকে ১০০০ পিস। পাইকরি বিক্রি এখন ৩৫০০ থেকে ৩৭০০টাকা। সিজনে বিক্রি প্রায় ৪৮০০ থেকে ৫০০০ টাকা। এর চাহিদা প্রচুর। বাজি তৈরিতে কোনও মেশিন ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু মোচপোলে মেশিনে বেআইনি কারবার চলত বলেই ওই সূত্রের দাবি।

publive-image
ভয়াবহ বিস্ফোরণের জেরে ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে আশেপাশের একাধিক বাড়ি। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

২৪ অক্টোবর, ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ পপ পপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ, এতে সিলভার ফ্লুমিনেট রাসায়নিক থাকে। যা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক। যার দহনে কার্বন মনোক্সাইড এবং নাইট্রো অক্সাইডের মতো শ্বাসরোধী গ্যাস উৎপন্ন হয়। গ্লিসারিন + পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট ব্যবহার করা হয়। কখনও বিকল্প হিসাবে পটাশিয়াম ক্লোরেটও ব্যবহার করা হয়। গ্লিসারিনের দহনে উৎপন্ন হয় অ্যাক্রোলিন। যা ভয়ঙ্কর বিষাক্ত। তাছাড়া পটাশিয়াম বেঞ্জোয়েট (পটাশিয়াম লবণ + বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড) থাকে এতে। দত্তপুকুরে এই রাসায়নিক ব্যবহারে সায়েন্স বিশেষজ্ঞের মাথা আছে বলে মনে করছে বাজির কারবারিরা।

আরও পড়ুন- পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে বৈঠক, মমতার সামনেই সুগত-সুবোধদের উল্টো মত নৃসিংহপ্রসাদের

তাঁদের বক্তব্য, এই পপ পপ আগে চিন থেকে আসত বলেই তাঁরা জানতেন। কিন্তু সেখানে থেকে পপ পপ আসা বন্ধ হওয়ার পরও কীভাবে রসুন বোমা এরাজ্যে পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে তাঁরা ধন্দে ছিলেন। এমনকী তামিলনাড়ুতে গিয়েও এই শব্দ বাজির খোঁজ তাঁরা পাননি। কিন্তু দত্তপুকুরের এই বিস্ফোরণের পর জানা গেল এই রাজ্যেই তৈরি হতো পপ পপ।

বাজি বিশেষজ্ঞ সন্দীপ বসু বলেন, 'আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত গ্রিন ক্র্যাকার্সের কোনও কারিগর এই ধরনের নিষিদ্ধ বাজির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না। এই ধরনের কারবার আমাদের ব্যবসায় ভয়ঙ্কর ক্ষতি করছে।'

West Bengal toxic North 24 Pargana Duttapukur Blast
Advertisment