Advertisment

বঞ্চনার শিকার হয়ে কালীঘাট অভিযান রূপান্তরকামীদের, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধুন্ধুমার কাণ্ড

সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিনহার ডাকে কালীঘাটে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kolkata police, transgender

'হকে'র টাকা আনতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে শহরের রূপান্তরকামীরা

নিজের যন্ত্রণার কথা জানাতে চান মুখ্যমন্ত্রীকে। তাই বুধবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন শহরের রূপান্তরকামীরা। সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিনহার ডাকে কালীঘাটে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন এমন অবস্থান বিক্ষোভ? এপ্রসঙ্গে রঞ্জিতা সিনহা জানান, “রাজ্যে রুপান্তরকামীদের কোনও উন্নয়ন নেই, লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে হয়েছে আমাদের। আজ নিজেদের পাওনা বুঝে নেওয়ার লড়াই। সদ্য মিটেছে পুজো। বড় ক্লাবগুলি অনুদান পেলেও আমরা কোনও অনুদান পাইনি, এমনকী কার্নিভালে ডাকটুকুও পায়নি, তাই আজ মাননীয়ার গোচরে আমাদের যন্ত্রণাটা তুলে ধরতে চাই”। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি, পুলিশ ভ্যানে তুলে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। যা নিয়ে সোশ্যাল নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। পুলিশকে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর পোষা গুন্ডা বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। আর এই নিয়ে কালীঘাটে পুলিশ-রূপান্তরকামীদের মধ্যে হুলস্থূল কাণ্ড বেঁধে যায়।

Advertisment
রাঞ্জিতা সিনহা, মমতা, durgaouja, protest, kolkata
দলাদলি নয়, রূপান্তরকামীদের যন্ত্রণার কথা জানাতেই আজ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্না বিক্ষোভ ওঁদের।

পুজোর সময়ের এত চমক, আলোর রোশনাই, লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যেও কোথাও যেন আজও সমাজের একটা বড় অংশের মানুষ ওঁদের নিয়ে হাসি-মজা-ঠাট্টা করেন। পুজোর আনন্দে নিজেদের এত দিন কোথাও আড়াল করেই রেখেছিলেন ওঁরা। কিন্তু এভাবে কতদিন! নিজেদের উদ্যোগেই শুরু করেন দুর্গাপুজো। চলতি বছর পাঁচ বছরে পা দিল রূপান্তরকামীদের পুজো। সমাজের কুসংস্কার, বাঁকা নজরকে উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করেই পুজোর আনন্দ ভাগ করে নেন একে অপরের সঙ্গে। বাদ যায় না কিছুই। আড্ডা-মজা-খাওয়া দাওয়ায় পুজোর কটা দিন যেন ওঁদের কাছে এক আলাদাই তৃপ্তি। কিন্তু ব্যস ওটুকুই। মেলেনি সরকারি সাহায্য এমনকী কার্নিভালে যোগদানের ডাকটুকুও মেলেনি ওঁদের। কিন্তু কেন? স্রেফ রূপান্তরকামী বলেই? প্রশ্ন রঞ্জিতার। পাশাপাশি তিনি বলেন, আমারা তো 'হকের পাওনা আদায় করতে গিয়েছি মাত্র, আমাদের বঞ্চনার কথা সকলের সামনে আজ উঠে এসেছে। যে ভাবে পুলিশ আমাদের সরিয়ে দিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে আমাদের রাজ্যে ন্যায্য দাবি আদায়ের অধিকারটুকুও আজ আর নেই"।

অর্ধনারীশ্বর রূপে মাতৃমূর্তির আরাধনায় মেতে ওঠেন ওঁরা। পুজোর আলপনা দেওয়া থেকে ভোগ রান্না, সবটাই নিজেদের হাতেই করেন। পুজো শেষ প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়াতে বিশ্বাসী নন ওঁরা। কেন? "পরিবার, সমাজ সব কিছু থেকেই তো ব্রাত্য আমরা তাই বিষাদের যন্ত্রণাটা আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খায়", জানালেন পুজোর কর্ণধার রঞ্জিতা সিনহা। কিন্তু পুজো শেষে ফের আরও একটা যন্ত্রণা ওঁদের আবারও কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে শুরু করেছে। তাই এদিন বিকেল চারটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী বাড়ির সামনে ধরনা কর্মসূচি নেন তাঁরা। ন্যায্য অধিকারের দাবিতে আর সেই দাবি আদায়কে ঘিরে কার্যত তোলপাড় শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে এদিনের ধরনার জন্য আগে থেকে মোতায়েন ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। শহরের রূপান্তরকামীরা বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই পাঁজাকোলা করে তাদের ভ্যানে তুলে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সমাজের অংশ হিসাবে থেকেও কীভাবে সমাজের সব কিছু থেকে বাদ পড়ে রয়েছেন ওঁরা? এমনকী পুজোর অনুদানের ক্ষেত্রেও কেন বিভেদ প্রশ্ন ওঁদের। বড় বারোয়ারি থেকে মন্ত্রীর ক্লাব পুজোর অনুদান পেলেও ব্রাত্য থেকে গেছেন ওঁরা। রঞ্জিতার কথায়, “আমরাই সমাজের সব থেকে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়। আমাদের সাহায্যটা অনেক বেশি দরকার, আর আমরাই ব্রাত্য রয়ে গেলাম। কেন? এটা কোন বিক্ষোভ নয় এটা যন্ত্রণারর বহিঃপ্রকাশ। যাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, আমাদের দুঃখ, কষ্ট যন্ত্রণার কথা জানেন, তাঁরা আমাদের এই ন্যায্য দাবিতে আমাদের পাশে থাকবেন এটাই আশা”।

আরও পড়ুন: < ভিড় রাস্তায় হেলমেট পরে সবজি বিক্রি, কারণ জানলে অবাক হবেন! >

রঞ্জিতা আরও জানান, “আমাদের মতো পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য ‘ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড’ গঠন করা হয়েছে,। কিন্তু কোথায় কী! আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেখানেই রয়েছি। আমাদের দিকে সরকার আজও ফিরে তাকায় না। যে ক্লাবের অনুদান না পেলেও ভালভাবে পুজো হয় সেই ক্লাবগুলি আরও বেশি করে অনুদান পাচ্ছে, ইলেকট্রিক বিলে ছাড় পাচ্ছে অথচ আমরা কেন পাব না, এই সাহায্য তো আমাদের সব থেকে দরকার। সরকার কী করে আমাদের ভুলে গেল? কী করে ভুলে গেল আমাদের দুঃখ যন্ত্রণার কথা!”

West Bengal durga puja 2022 transgender kolkata police Mamata Banerjee
Advertisment