প্রায় ৭০ বছরের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ নিখোঁজ। তাঁকে দু'জন যুবক সল্টলেকের বাড়ি থেকে কোথায় নিয়ে গিয়েছেন। থানায় লিখিত অভিযোগ প্রাক্তন বিধায়কের। তোলপাড় হয়ে গেল বঙ্গ রাজনীতি। দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়ে গেল চারদিকে। হইহই রইরই কাণ্ড। দিল্লি চলে গেল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। বঙ্গ রাজনীতির 'চাণক্য' বলে পরিচিত রাজনীতিবিদের সটান জবাব, 'আমি সাবালক'। সপ্তাহ শেষ হতে মোদ্দা বিষয়টা দাঁড়াল কী? তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা ও কালিয়াগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আপাতত খবরের রেসের বাইরে কৃষ্ণনগরের বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে যোগদানকারী মুকুল রায়। তবে কেন এমন সব ঘটনা ঘটল? তা নিয়ে রীতিমতো চর্চা রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
তৃণমূল কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিলেও পরবর্তীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়কে বিজেপি বিধায়কই বলে এসেছেন। কখনও তৃণমূল নেতা বলে সম্বোধন করেননি। বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হলেও সেভাবে সক্রিয় থাকেননি মুকুল। নদিয়া থেকে বীরভূম, কখনও বিজেপি জিতবে, তৃণমূলই বিজেপি বা বিজেপিই তৃণমূল- এসবও ক্রমাগত বলে গিয়েছেন মুকুল রায়। নিয়োগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত জোরালো হওয়া, শুভেন্দুর হম্বিতম্বি। তারই মধ্যে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে বাংলায় থেকে নয়, দিল্লিতে গিয়ে 'বিজেপি বিজেপি' বলতে শুরু করলেন মুকুল রায়। তৃণমূলের মুণ্ডপাত করতে শুরু করলেন। ক্রোনোলজি? তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বিশেষ ইঙ্গিত দিয়েছেন মুকুলের দিল্লি-যাত্রা প্রসঙ্গে। ছেলে তথা প্রাক্তন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় কাঁচরাপাড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান। শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যবসাও রয়েছে শুভ্রাংশুর।
সারদাকাণ্ডে 'সহযোগিতা' করবেন বলে তখন তৃণমূলের সঙ্গে 'বিবাদ' বেধেছিল মুকুল রায়ের। সেই সময় দিল্লি গিয়ে গেরুয়া উত্তরীয় গলায় ঝুলিয়ে ছিলেন। সারদা চিটফান্ড মামলায় সিজিও কমপ্লেক্সে মুকুল রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের দিন রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার তৃণমূল নেতা-কর্মী হাজির হয়েছিলেন সল্টলেকে। কিন্তু, তিনি নাকি তদন্তকারী সংস্থাকে 'সহযোগিতা' করবেন। যা নাকি মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাই হোক, বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে আর সারদা তদন্তে সিবিআই বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তলবের কোনও খবর মেলেনি। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, সারদা, নারদা থেকে বাঁচতেই মুকুল বিজেপিতে ভিড়েছেন। সিবিআই সূত্রের খবর, নারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার আইপিএস এসএমএইচ মির্জা আসল ঘটনা ফাঁস করেছিলেন তদন্তকারীদের কাছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এখনও সারদা এবং নারদা মামলা কিন্তু ফিনিসড হয়নি।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’ আবহে গত বছর রাজ্যের এক মন্ত্রী ও তৃণমূলের দুই প্রাক্তন বিধায়কের স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা জমা পড়েছে আদালতে। একটি ৪৫ জনের তালিকা রোল নম্বর-সহ ভাইরাল হয়েছে। ওই তালিকায় নীচে একটি নাম হাতে লেখা রয়েছে। ডান দিকে নীচে বিধায়কের রাবার স্ট্যাম্প-সহ স্বাক্ষর রয়েছে বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের। এবিষয়ে শুভ্রাংশু তখন বলেছিলেন, ‘তালিকার তলায় যে হাতে লেখা আছে তা আমার হাতের লেখা নয়। আমার লেটার হেডেও নয়। বিচারাধীন বিষয় তাই এর থেকে বেশি কথা বলা উচিত নয়।’ এবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল বিধায়কদের বেআইনি সুপারিশ নিয়ে হইচই শুরু করে দিয়েছেন। কেউ ছাড় পাবে না হুঙ্কারও ছেড়েছেন।
আরও পড়ুন- উর্দিধারীদের একীর্তি ‘তারিফে কাবিল’! চুরি যাওয়া শিশু ফিরে পেয়ে পুলিশকে কুর্নিশ মায়ের!
মুকুল রায় শারীরকভাবে অসুস্থ ও মানসিকভাবে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয় বলেই পরিবারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। মুকুল রায় জোর গলায় বলছেন, 'আমি সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ।' যদিও তৃণমূল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বাংলা থেকে সিপিএমকে তাড়াতে কেন বললেন, তা নিয়েও কিন্তু নানা প্রশ্ন উঠছে। মুকুল রায় বলেই রাজনৈতিক মহল তাঁর কথার নানা ব্যাখ্যা করছেন। এর আগে তৃণমূলই দাবি করেছিল, সারদা-নারদা থেকে বাঁচতেই মুকুল বিজেপিতে গিয়েছেন। তারপর আবার ফিরলেন। বলা হল, মুকুলের দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখনও তদন্তগুলো চলছে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিধায়কদের ভাইরাল তালিকা রয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে কি ফের গেরুয়া পোশাক পরে মুকুল রায়কে দেখা যাবে? সন্দিহান রাজনৈতিক মহল।