মদের নেশায় চুর হয়ে পুরনো কথা আওড়াচ্ছিল তিন বন্ধু। সেই কথা বলে উঠতেই এক বন্ধুর সঙ্গে অন্য এক বন্ধুর বচসা। মুহূর্তে পিস্তল বের করে সেই বন্ধুকে গুলি। কোমরে গুলি লেগে গঙ্গায় পড়ে যায় ওই যুবক। ডুব সাঁতারে পাড়ে উঠে কোনওক্রমে বাড়ি। আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি আহত যুবক। পুলিশি তদন্তে মূল অভিযুক্ত-সহ গ্রেফতার ২। চুঁচুড়ার এই ঘটনা ঘিরে তোলপাড়।
এটা কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য নয়। তবে শনিবার ভোর রাতে চুঁচুড়ার কনকশালীর শ্যামবাবুর ঘাটে যা ঘটল তা যে কোনও সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানাবে। ঠিক কী ঘটেছিল এদিন? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজা, দীপ এবং অভিজিৎ তিনজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রাজা এবং দীপের বাড়ি চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে। অভিজিতের বাড়ি আরও চার কিলোমিটার দূরে শ্যামবাবুর ঘাট এলাকায়। শুক্রবার পাড়ায় কার্তিক পুজো উপলক্ষে খিচুড়ি ভোগ খেতে অভিজিতকে ডাকে দীপরা। এরপর সেখানেই তিন বন্ধু মিলে বসায় মদের আসর। রাতভর চলে মদ্যপান। এরপর রাত দু'টো নাগাদ অভিজিতকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিতে বাইক নিয়ে রওনা দেয় রাজা ও দীপ। তবে শ্যামবাবুর ঘাটের কাছে গিয়ে আবার তারা মদ্যপান করতে বসে পড়ে।
এখানেই ঘটে বিপত্তি। মদ্যপান করার সময় নিজেদের জীবনের পুরনো কিছু কথা বলছিল তিন বন্ধু। অভিযোগ, তখনই কোমর থেকে পিস্তল বের করে বন্ধু দীপকে গুলি করে রাজা। দীপের বোন এদিন জানিয়েছেন, তাঁর দাদা এদিন সকালে অসংলগ্ন অবস্থা বাড়িতে ফেরে। কোমরে গুলি লেগেছিল দীপের। গুলি লাগতেই পাশের গঙ্গায় পড়ে যায় দীপ। নদী থেকে ওঠার চেষ্টা করতেই তাকে ফের হুমকি রাজার। পাড়ে উঠলেই ফের গুলি করার হুমকি যুবকের। কোনওক্রমে ডুব সাঁতার দিয়ে পাশের ঘাটে ওঠে দীপ।
রক্তাক্ত অবস্থায় এরপর একটানা প্রায় চার কিলোমিটার পথ হেঁটে পাংখাটুলি মোড়ে পৌঁছোয় দীপ। সেখানেই রাখা ছিল তার বাইক। গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই এরপর বাইক চালিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরের রবীন্দ্রনগরের বাড়িতে পৌঁছোয় দীপ। পরিবারের সদস্যদের গোটা ঘটনা খুলে বলে সে। সকালেই দীপকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে কোমর থেকে গুলি বের করা যায়নি। তড়িঘড়ি ওই যুবককে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন- মোটা টাকার বিনিময়ে হোমের শিশুদের দত্তক, গ্রেফতার ৯
এদিকে, পুলিশের কাছেও ততক্ষণে এব্যাপারে অভিযোগ জমা পড়ে গিয়েছিল। মূল অভিযুক্ত রাজা বিশ্বাসকে এদিন দুপুরেই সিঙ্গুর থেকে ধরে ফেলে পুলিশ। রাজাকে জেরা করে তৃতীয় বন্ধু অভিজিৎ দাসকেও কনকশালী শ্যামবাবুর ঘাট এলাকা থেকে ধরা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রটিও। ধৃতদের আদালতে পেশ করে হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানাবে পুলিশ। অন্যদিকে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি থাকা দীপ মণ্ডলের অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আপাতত তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন