বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার জন্য আদিবাসী মহিলাদের দণ্ডী-কাটা নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল রাজ্যজুড়ে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার বর্ধমান শহরের রাস্তায় জাতীয় পতাকা হাতে একটি মুসলিম পরিবারের গড়াগড়ি খাওয়ার ছবি সামনে এল। কাঠগড়ায় সেই তৃণমূল।
বর্ধমানে জেলাশাসকের দফতরের সামনে এই ঘটনার খবর পেয়ে হাজির হন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনিই পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলার সঙ্গে দেখা করে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ক্ষোভ উগরে দেয় পরিবারটি।
জিবান শেখ ও বাজান শেখ। দুই ভাইয়ের পরিবারের বসবাস পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার হেতমপুর গ্রামে। মঙ্গলবার প্রবল গরমের মধ্যে উত্তপ্ত রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়েছেন এই দুই ভাই। তাঁদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। তাঁদের সঙ্গে ছিল আম্বেদকরের ছবি। বোন মমতাজ এবং ৮৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা কোহিনূর বিবিও তাঁদের সহ্গে ছিলেন। দুই ছেলে রাস্তায় গড়াগড়ি কাচ্ছিলেন পাশে হেঁটে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধা মা। তাঁদের বুকে ছিল প্ল্যাকার্ড।
শেখ পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ, স্তানীয় তৃণমূলের নেতারা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে চূড়ান্ত অসহয়োগিতা করে চলেছেন। তাঁদের দাবি, আতদে তাঁরা একটি কংগ্রেসি পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গেই তাঁরা যুক্ত রয়েছেন। জিবান ও বাজান শেখ জানিয়েছেন, বাম আমলেও তাঁদের পরিবার সরকারের নানা কাজের বিরোধিতা করেছেন। এখন তাঁরা তাঁদের ছোট বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন। যেখানেই যোগাযোগ হচ্ছে বোনের সম্বন্ধ ভেঙে যাচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাদের নিদানে তাঁদের পরিবারের মেয়ের সঙ্গে কোন পাত্রপক্ষ তাঁদের বাড়ির ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছে না।
আরও পড়ুন- নাবালিকা ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে ফের উত্তাল কালিয়াগঞ্জ, থানায় ভাঙচুর-আগুন
এমনকী নিজেদের জমি বিক্রি করে বোনের বিয়ের দেওয়া চেষ্টা করলেও জমির রেকর্ডে অদ্ভুতবাবে গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। পরিরাবটিকে কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখতেও দেওয়া হচ্চে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই পরিবার সদস্যদের কথায়, তাঁরা মেমারির পূর্বতন বিধায়ক নার্গিস বেগম ও বর্তমান বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্যকে সব কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এমনকী বিডিও-র কাছে বিহিত চাইতে গেলে তিনিও আবার ব্লক সভাপতির কাছে যেতে বলেন। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার চিঠি দিয়েও কোনও উত্তর তাঁরা পাননি বলেই দাবি।
শেখ পরিবারের এই অভিযোগ সম্পর্কে বিস্ফোরক জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব সমাদ্দার। তিনি বলেন, ‘এই মধ্যযুগীয় বর্বরতার সামিল। এটা মেনে নেওয়া যায়না। এর বিহিত প্রশাসনকেই করতে হবে।’ তাঁরাও দলের পক্ষ থেকে ওই গ্রামে যাবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে এব্যাপারে খানিকটা ডিফেন্সিভ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তাঁর কথায়, ‘সত্যিই এটা ঘটে থাকলে খুব অন্যায় হয়েছে। আমরাও এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমারও চাই এর বিহিত হোক। কিন্তু একটি ব্যক্তিগত বিষয়কে দলের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে ওই পরিবারটি ঠিক কাজ করেননি। এটা সম্ভবত কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনা।’
আরও পড়ুন- ফেসবুকে ভাব হয়ে যুবকের প্রেমে হাবুডুবু! মেয়েটির পরের পরিণতি জানলে চমকে উঠবেন!
এদিকে, মঙ্গলবার শেষমেশ জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা হয়েছে পরিবারটির। জেলাশাসক বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা বলেন, ‘আমি তাঁদের বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমাশাসকের কাছে পাঠিয়েছি। মহকুমাশাসক ওই পরিবারের অভিযোগের ব্যাপারটি দেখছেন।’
জিবান শেখের পরিবারের আরও অভিযোগ, তাঁদের পরিবারের মেয়ের বিয়ে আটকে দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। জায়গা বিক্রি করতেও দিচ্ছেন না। হিমঘরে আলু রাখতে বাধা দিচ্ছেন। এদিন জেলাশাসকদের দফতের এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলার অন্যতম শীর্ষ তৃণমূল নেতা স্বপন দেবনাথ। তিনিও পরিবারটির সঙ্গে কথা বলেছেন। জিবান শেখ মন্ত্রীকে এদিন বেশ কিছু কাগজ দেখান। পরে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘ওঁদের নাকি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ছিল। কেউ কেড়ে নিয়েছে।’ তবে তাঁর দাবি, বিষয়টি খবরের আলোকে নিয়ে যেতেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা। ‘দিদির দূত’ গ্রামে গেলে তাঁর কাছে কেন ওই পরিবারটি এই অভিযোগ করেননি সেব্য়াপারেও প্রস্ন তুলেছেন রাজ্য়ের এই মন্ত্রী।