Jaldapara: সঙ্গিনী দখলের লড়াই দুই দাঁতালের। আর ধুন্ধুমার এই লড়াইয়ে এক দাঁতালকে ধরাশায়ী করে সঙ্গিনীকে নিজের কব্জায় নিল অপর একটি দাঁতাল। কয়েক ঘণ্টার টানটান লড়াইয়ে তোলপাড় কাণ্ড জলদাপাড়ার (Jaldapara) তিতির জঙ্গলে। পরাজিত হয়ে হলং নদীর ধারে পড়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা পরাজিত দাঁতালের। তার কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে দাঁতালটি। যদিও আহত হাতিটিকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বনকর্মীরা। তবে চিকিৎসায় সাড়া মিলছে না। ২৪ ঘন্টাই নজরদারি চলছে বনদফতরের।
জঙ্গলে প্রায়শই ঘটে বুনোদের মধ্যে সঙ্গিনী দখলের লড়াই। এর আগে ডুয়ার্সের (Dooars) জঙ্গলে একাধিক এমনই ঘটনা ঘটেছে গন্ডারের মধ্যে। বছর কয়েক আগে গরুমারা (Gorumara) জঙ্গলে সঙ্গিনী দখলের লড়াই হয়েছিল দুই পুরুষ গন্ডারের (Rhino) মধ্যে। এই ঘটনায় পরাজিত গন্ডার বিবাগি হয়ে অভিমানে গরুমারা জঙ্গল ত্যাগ করে তিস্তা নদী (Teesta River) পেরিয়ে আশ্রয় নেয় বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলে (Baikunthapur Forest Jalpaiguri)। দীর্ঘ বহু বছর একাই বৈকুন্ঠপুরে ঘুরে বেরিয়েছে সে। অপর একটি ঘটনায় পরাজিত পুরুষ গন্ডার গুরুতর জখম হয়। খোয়া যায় তার খড়গ। সেও বিবাগি হয়ে যায়।
সঙ্গিনী দখলকে কেন্দ্র করে এবার সামনে এল জলদাপাড়া জঙ্গলে দুই দাঁতালের লড়াই। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে জলদাপাড়ার তিতির জঙ্গলে। বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিতির জঙ্গলে দলবদ্ধ ভাবেই থাকত হাতির (Elephant) পাল। সেই দলের কর্তৃত্ব মূলত কার হাতে থাকবে তা নিয়েই লড়াই বাধে দলেরই দুই দাঁতালের। কর্তৃত্ব যার হাতে থাকবে, তার দিকেই ঝুঁকবে দলের মেয়ে হাতিরা। আর সেই কারণেই ধুন্ধুমার লড়াই বাধে দুই দাঁতালের। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে লড়াই।
ধুন্ধমার লড়াইয়ে পরাজিত হাতি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছে।
বাকি হাতিরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করে এই লড়াই। কাছে ঘেষার সাহস হয়নি জলদাপাড়ার বনকর্মীদেরও। লন্ডভন্ড হয়ে যায় ঘটনাস্থল। শেষে এক দাঁতালের বেদম প্রহারে গুরুতর জখম হয়ে পরাজিত দাঁতাল পালাতে গিয়ে পড়ে যায় হলং নদীতে (Holong river)। তার তাতেই ভেঙে যায় হাতিটির কোমরের হাড়। জয়ী দাঁতালটি আহত হাতিটিকে ফেলে রেখেই সঙ্গিনীকে নিয়ে চলে যায় জঙ্গলের গভীরে। তাদের পিছু নেয় পালের বাকি হাতিরাও।
এদিকে, পরিস্থিতি শান্ত হতেই আহত হাতিটিকে সুস্থ করতে ঘটনাস্থলে পৌছায় বনকর্মীরা। সেটিকে নদী থেকে তুলতে আনা হয় আর্থ মুভার। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় তাকে নদী থেকে তোলা হলেও আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি দাঁতালটি। তার কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে। এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে দাঁতালটি। অনুমান করা হচ্ছে হাতিটির বয়স ১৪ বছর।
সচরাচর দেখা যায় না হাতির পালে সঙ্গিনী দখলের লড়াই। শেষ কবে জলদাপাড়ার জঙ্গলে দুই দাঁতাল হাতির মধ্যে এমন ধুন্দুমার লড়াই হয়েছিল, তা মনে করতে পারছেন না বনকর্তারা। হাতি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মূলত দু’টি কারণে দাঁতাল হাতিদের মধ্যে লড়াই হয়। এক, সঙ্গিনী দখলের জন্যে লড়াই, দ্বিতীয়ত, দলের মধ্যে কোন দাঁতালের আধিপত্য থাকবে, তাও ঠিক হয় লড়াইয়ের মাধ্যমেই। দলের মাদিদের কাছে নিজেদের শৌর্যের জানান দিতেই দাঁতাল হাতিরা লড়াই করে। যে জেতে তার সঙ্গিনীর অভাব হয় না। অন্য দিকে, দলেও বিজয়ী দাঁতালের আধিপত্য কায়েম হয়।
জলদাপাড়া বনবিভাগের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা বলেন, ‘দাঁতালটির বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে বলে সেটি দাঁড়াতে পারছে না। চিকিৎসায় একেবারেই সাড়া দিতে চাইছে না। তবুও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ২৪ ঘন্টাই নজর রাখা হচ্ছে হাতিটির ওপর।’ উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি বলেন, ‘বনের গভীরে কখন যে কী ঘটবে, তা বলা দুষ্কর। কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় দাঁতাল হাতিটি উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। হাতিটির বাঁচার সম্ভাবনা ক্রমশ কমে আসছে।’
আরও পড়ুন- Farming: বেকাররা এখবর আগে পড়ুন! অল্প দিনেই উপচে পড়া আয়, এব্যবসায় পাশে দাঁড়াচ্ছে সরকার
দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে দলে থেকেও পরাজয় বরণ করে গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে রয়েছে হাতিটি। সে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছে। হারিয়েছে দল। তাকে একলা ফেলে চলে গিয়েছে সবাই। হলং নদীর পারে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তার করুণ চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে জলদাপাড়ার জঙ্গল। প্রবল যন্ত্রণায় খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে সে। এতটুকু নড়ার ক্ষমতা নেই তার। দু’চোখের কোল বেয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। যা মিশে যাচ্ছে হলং নদীর জলে।